মাসুদ রানা, মেহেরপুর : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি টেপুর মাঠের গণকবর দুটি অবহেলিত ও অরক্ষিত অবস্থায় বিলীন হতে চলেছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বেশ কয়েকটি সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের কবরস্থান দুটি সংরক্ষণ বা সংস্কার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি।

এমনকি নিহত ব্যক্তিদের পরিবাররাও এ বিষয়টির প্রতি উদাসীন। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও ভাষা দিবসে অনেকেই সেখানে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। কিন্তু জায়গাটিতে কোনো স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনার তৈরির ব্যবস্থা করেনি কেউ।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর ভাটপাড়া নীলকুঠিতে অবস্থিত পাকসেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে টেপুর মাঠে গুলি করে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে রাখে। মৃতদেহগুলো কবর দিতেও সাহস করেনি কেউ। এখানকার ৮ শহীদ হচ্ছেন নওপাড়া গ্রামের মজিবর রহমান, আফসার মালিথা, জবতুল্লাহ, শাকের আলী এবং হিন্দা গ্রামের আজিজুল হক, বাবর আলী, মনসুর আলী ও নূরু বক্স। নিহত হওয়ার সপ্তাহখানেক পর মৃতদেহের গন্ধে এলাকায় চলাচলের অসুবিধা হলে পাকসেনাদের অনুমতি নিয়ে সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ নিজ গ্রামের গোলাম হোসেন ও ইদ্রিস আলীর জমিতে ৮টি মৃতদেহ পাশাপাশি দুটি কবরে দাফন করেন।

স্বাধীনতার পরে নিহতদের স্বজনরা প্রথমত ইটের তৈরি প্রাচীর দেয় একটি কবরে। অন্যটি থাকে অরক্ষিত। জমির মালিক পরবর্তী সময়ে শুধু কবরের জায়গাটুকু রেখে বাকি অংশের প্রাচীর ভেঙে চাষাবাদ শুরু করেন। নিহতদের স্বজনরা শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে জমির মলিকের কাছ থেকে জমি না কেনায় জমির মালিক আস্তে আস্তে কবর স্থানটিকে গ্রাস করছে। আর দুই-চার বছর পরে ওই স্থানে কবরের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে না বলে এলাকার অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জায়গাটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে।

সাহারবাটি গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে মহিবুল ও শহিদুল ইসলামের ছেলে পিন্টু মিয়াসহ অনেকেই জানান, মাঠে কাজ করতে এলে প্রায়ই ওই শহীদদের নিয়ে কথা ওঠে। যাদের আত্মত্যাগে এদেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের স্মৃতিচিহ্নটুকু বিলুপ্তপ্রায়। এ স্থানটি সংরক্ষণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে জানতে পারবে। সেহেতু এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ওই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি।

সাহারবাটি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জামাত আলী, মহন আলী ও মারফত আলী জানান, ডিসেম্বর মাস এলেই অনেকেই এ গণকবরে ফুল দিতে আসেন। কিন্তু জায়গাটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয় না। শহীদদের স্বজনরাও কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। জমির মালিকদ্বয় জানান, শহীদদের প্রতি সম্মান রেখেই ওই জায়গাটুকু বাদ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অনেকেই এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাস্তব রূপ পায়নি।

গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক একেএম শফিকুল আলম জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবসে ওই গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। জমির মালিকদ্বয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমআর/এএস/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)