দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক: শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং হলমার্ক, ডেসটিনি ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সরকার প্রকৃত অভিযুক্তদের আড়াল করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির রিপোর্টে যাদের নাম রয়েছে সরকার আজও তাদের নাম প্রকাশ করে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। হলমার্ক, ডেসটিনি ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের মাধ্যমে দলীয় কিছু লোক রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লুটেপুটে নিয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অভিযুক্ত করে আসল হোতাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে সরকার।’

এদিকে, নির্দলীয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় মোট ৮জন নিহত হওয়ার কথা দাবি করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির গুলিতে সাড়ে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড যুবদলের দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাদশা ও জেলার কাকাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের যুবদল নেতা মিজানুর রহমানকে পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যৌথ আক্রমণ করে গুলি করে হত্যা করেছে। এই জেলায় বহু নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ফখরুল আরও বলেন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশের ওপর পুলিশ বেপরোয়া গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। পুলিশের গুলিতে আরিফ হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্রদল নেতা শরীফ, যুবদল নেতা বাবলু নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরও ছয় জন। এ ছাড়া জেলায় আরও ৪০-৪৫ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাছিমারী ইউনিয়ন শ্রমিকদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন। নীলফামারীর জলঢাকায় পুলিশ জামায়াত ইসলামীর মিছিলে গুলি চালালে জামায়াত সদস্য মোসলেমউদ্দিন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও ৫০ জন। এই জেলায় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

গ্রেফতার হামলা : সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম সারা দেশের গ্রেফতার ও হামলার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, শুক্রবারের সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার সময় মোহাম্মদপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফজলু ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইউছুফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার সকালের তাদের দেখতে গেলে দুজনের স্ত্রীকেও আটকে রাখে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ ছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ও রাত ৯টায় পল্লবীতে বিএনপি অফিসের সামনে দুর্বৃত্তরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।

তিনি আরও জানান, বাউফল উপজেলায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে পৌর বিএনপি সহ-সভাপতি আপেল মাহমুদ ফিরোজসহ ৩০জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আহত করে।

ফকরুল জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি কর্মী হারুনকে পিটিয়ে দুই পা থেতলে দেয়। তিনি এখন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসবা উপজেলা যুবদল সভাপতি শাহীন, ওছমান, হারুনুর রশীদসহ ১০জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহের শ্রীপুর উপজেলায় ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা চালিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।

তিনি আরও জানান, শাহবাগ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নানের বাসায় শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাসা ভাঙ্চুর করে। এ সময় তাকে না পেয়ে ছোটভাই ফজলুল করিমকে গ্রেফতার ও পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এদিকে, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম স্বপন ও স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এস এম আশরাফুর রহমান আশরাফের বাসায় শুক্রবার পুলিশ হানা দেয়। এ সময় পুলিশ আসবাবপত্র তছনছ করে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৪০০জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ঢাকা জেলার ধামরাই থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রথম যুগ্ম-আহবায়ক আবদুল মান্নান ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/আইজেকে/অক্টোবর ২৬, ২০১৩)