টানা পাঁচ দফার অবরোধ শেষে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ঘোষিত ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি সফল করতে গোপন ও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিএনপির জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর খালেদা জিয়ার ডাকা কর্মসূচি অনুযায়ী ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় উপস্থিত হওয়ার জন্য এই গোপন ও কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন তারা।

বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে যোগ দিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে অবস্থান নেবে। বিগত কর্মসূচিগুলোতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সরকারের বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। বিএনপির ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ কর্মসূচির আগের তিন দিন ঢাকার সঙ্গে সকল জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার। আর এতে করে বিএনপির কাঙ্খিত সংখ্যক নেতাকর্মী কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে পারেনি। এবারও সরকার একই ধরনের বাধা দিতে পারে একথা মাথায় রেখে ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন নেতাকর্মীরা। আর এই দুদিনে তেমন কোনো বাধারও সম্মুখিন হতে হবে না বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে টানা অবরোধের পর ঢাকামুখী মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বিভিন্ন জেলা বিএনপির নেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সমাবেশে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় অবস্থান নিয়েছেন। বাকিরা রওনা করবেন ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর। আর তাদের ঢাকা যেতে বাধা দেওয়া হলে তা প্রতিহত করারও প্রস্তুতি নিয়ে আসবে তারা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির একাধিক জেলা পর্যায়ের নেতা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি সফল করতে ভিন্ন পথে ঢাকায় পৌঁছে গেছে নেতাকর্মীরা। প্রচলিত পথে না গিয়ে বিকল্প পথ ও বাহন ব্যবহার করছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ফাঁকি দিতে দলবদ্ধভাবে কেউ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন না। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যেও রওনা হয়েছেন।’

দ্য রিপোর্টের চট্টগ্রাম প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যানুযাযী, ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বিএনপি ও জামায়াত। ইতোমধ্যে বেশকিছু নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন।

চট্টগ্রাম থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন ২০ হাজার এবং জামায়াত-শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। দল দুটির দায়িত্বশীল নেতারা এ কথা জানিয়েছেন।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাদাতি হোসেন জানান, পুলিশি বাধার কারণে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে যাবেন না। স্ব স্ব উদ্যোগে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কেউ বাসে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে, আবার কেউ ট্রেনে চড়ে ঢাকার পথে রওনা হবেন।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া হলে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি নৌযানও বুকিং দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকা হয়ে তারা নয়াপল্টন এলাকায় পৌঁছাবেন।

নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান, নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে যেতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার পথে পুলিশি ঝামেলার আশঙ্কায় আমরা বেশ কিছু কৌশলও নিয়েছি। আশা করছি, প্রশাসনের সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আমরা ঢাকায় পৌঁছাব।

নগর ছাত্রদলের যুগ্মসম্পাদক আলী মর্তুজা খানের নেতৃত্বে বুধবার রাতেই ৫০ সদস্যের একটি টিম ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। তারা নির্বিঘ্নে ঢাকায় পোঁছেছেন বলে দ্য রিপোর্টকে জানান।

নগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ জানান, আমরা চট্টগ্রাম নগরী থেকে পাঁচ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। যেভাবে পুলিশি ঝামেলা এড়ানো যায় সেভাবেই ঢাকায় চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের।

খুলনা বিভাগ : ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশ নিতে খুলনা থেকে নেতানেত্রীদের ঢাকা যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে নেতা- নেত্রীরা এ ব্যাপারে কৌশল এবং গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছেন।

মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি জানান, ‘তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ঢাকা পৌঁছে গেছে। সরকার ফেরি বন্ধসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়ায় এই কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করবে, এই বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের ঢাকা যাত্রা চলছে।

দলের একটি সূত্রে দাবি করেছে খুলনা থেকে ঢাকায় দশ হাজার নেতাকর্মী যাওয়ার বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে জেলাটির বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করে জানা যায়, স্বাভাবিকের চাইতে বেশি মানুষ বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল্লাহ জানান, হরতাল অবরোধের পর তাদের বাসের আসন পরিপূর্ণ যাচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর পযর্ন্ত ঢাকাগামী কোন আসন খালি নাই। কোনো দল বা কোনো গোষ্ঠী একসঙ্গে ৩-৪টা টিকিটের বেশি নেয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের কাছে অতিরিক্ত বাসের আসনের জন্য আসেনি।

ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার জয়দেব জানান, অন্যসময় যে ভাবে তাদের টিকিট বিক্রি হয় এই সময়ও সে ভাবেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দলবদ্ধভাবে টিকিট ক্রয় করার কোনো খবর নেই, স্বাভাবিকভাবেই তাদের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। নিয়মিত যে হারে বাস যায়, বর্তমানেও সেভাবে বাস যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলই বেশি।

অন্যদিকে রেলে যাত্রীর সংখ্যাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বলে জানা গেছে। খুলনা রেল স্টেশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বর্তমানে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ একটু বেশি। অবরোধ প্রত্যাহারের পর ট্রেনের উপর যাত্রী চাপ কম থাকার কথা থাকলেও যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে।

যশোর : অবরোধের পর যশোর থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রীবাহী বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ২৯ তারিখের কর্মসূচির জন্য এমন অবস্থা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছে না পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ২৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত দিবা ও নৈশ সব পরিবহনের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপির ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির প্রভাবে এমনটা হয়েছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, যশোর থেকে ঢাকা অভিমুখে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনের প্রায় দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়। গত দুদিন ধরে এ রুটের প্রায় সব পরিবহনেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

সেলিম হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার দরকার ছিল। অবরোধের কারণে এতদিন ঢাকায় যেতে পারিনি। আর অবরোধ উঠে যাওয়ার পর এখন টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুদিন ধরে চেষ্টা করে তিনি পেছনের দিকে একটি টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

টিকিট সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে হানিফ পরিবহনের যশোর মণিহার কাউন্টারের কর্মী বিপ্লব হোসেন জানান, দিনে ও রাতে তাদের ঢাকার উদ্দেশে ৪০টি গাড়ি ছাড়ে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে স্বাভাবিকের তুলনায় চাপ বেড়ে গেছে।

একে ট্রাভেলসের কর্মী রানা রহমান জানান, তাদের দিনে ও রাতে ২২টি গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। গত দুদিন ধরে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আগেভাগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

ঈগল পরিবহনের যশোর মণিহার কাউন্টারের ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় জানান, তাদেরও প্রতিদিন যশোর থেকে ৪০টি গাড়ি ঢাকায় যায়। বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাদের অধিকাংশ গাড়ির টিকিট আগেভাগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখনও চাপ আছে যা আরো দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

অতিরিক্ত চাপের কারণ কি জানতে চাইলে এসব পরিবহন কাউন্টারের কর্মীরা জানান, সামনে দুদিন ছুটি এবং অবরোধ উঠে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে। তবে ছুটিতে ঢাকামুখী চাপের কোন যৌক্তিকতা আছে কি না জানতে চাইলে তারা জানান, বিএনপির কর্মসূচির কারণেও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

সাতক্ষীরা : যৌথবাহিনীর অভিযান চলায় সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির ও ১৮দলীয় নেতাকর্মীরা অতিরিক্ত কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। জোটের অধিকাংশ নেতা-কর্মী প্রচলিত পথে না গিয়ে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া হয়ে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হচ্ছেন। তবে কর্মসূচিতে যোগ দিতে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জোটের শরিক জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রহমাতুল্লাহ পলাশ জানান, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ব স্ব উদ্যোগে ঢাকায় যেতে বলেছেন। এ কর্মসুচিতে তারা জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনো বাস না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো মালিক বাস পাঠাতে চাইলে সে তার দায়িত্বে পাঠাবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা এসপি গোল্ডেন লাইনের জেনারেল ম্যানেজার অজয় কুমার জানান, যেহেতু বেশ কিছুদিন মানুষ ঢাকায় যেতে পারেনি এজন্য স্বভাবতই একটু চাপ বেশি আছে। তবে কে কি কাজে যায় তা বোঝার উপায় নেই বলে জানান তিনি। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, যেহেতু ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ১৮ দলের কর্মসুচি এটি সফল করতে তারা অবশ্যই ঢাকায় যাবেন। তবে কীভাবে যাবেন কত লোক যাবেন সে বিষয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটু কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বরিশাল বিভাগ : বরিশাল সংবাদদাতার দেওয়া তথ্যানুযায়ী বরিশাল হতে ঢাকামুখী অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন ও নরমাল সিট বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ২৫ তারিখেই ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। এছাড়া অনেক নেতাকর্মী লঞ্চ ও বাসের মতো প্রচলিত বাহন ব্যবহার না করে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে করেও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন।

সিলেট বিভাগ : সিলেট বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি। তবে সরকারের বাধা এড়াতে বিমান ও সড়ক পথকে ব্যবহার করছেন তারা। সিলেটের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক, যুব, ছাত্র ও ওলামা দলের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে সিলেট ছেড়েছেন। কেউ কেউ ঢাকাও পৌঁছেছেন। ২৯ ডিসেম্বরের আগেই তারা ঢাকায় অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন্। কৌশলগত কারণে সংবাদ মাধ্যমে আগাম কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছেন না তারা। সরকারের কোনো বাধাই যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আগেভাগেই ঢাকামুখী হয়েছেন সিলেটের বিরোধী দলের নেতারা। দ্য রিপোর্টকে এমন তথ্য জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ। কৌশলগত কারণে কীভাবে ঢাকা যাওয়া হবে তা বলতে চাননি আলী আহমদ।

বগুড়া জেলা : ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করতে বগুড়া ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা আগে থেকেই রওনা হয়েছে। আর এসব নেতাকর্মীরা আগে থেকে রওনা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বগুড়া বাস কাউন্টারগুলোতে ঢাকায় যাওয়ার যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। যাত্রীদের চাপের কারণে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কোনো ঢাকাগামী বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার নেতাকর্মীদের ঢাকায় যেতে বাধার দেওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আগেভাগেই দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন যানবহনে রওনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের চারমাথা এলাকা থেকে একাধিক ট্রাকে বাঁশের লাঠিসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা রওনা দেবেন বলে জানা গেছে।

৩০ হাজার বিএনপি ও ২০ হাজার জামায়াত-শিবিরের মোট ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার কর্মসূচিতে যোগ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ১৮ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ইতোমধ্যে এসব লোক সংগ্রহে জেলার ১২টি উপজেলার দলীয় কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের আচরণে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে বগুড়ার ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঢাকায় বিভিন্ন যানবহনে রওনা দিয়েছেন। আর রাস্তায় পুলিশ যেতে বাধা দেওয়ার আশঙ্কায় জেলার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা রাতে কয়েকটি ট্রাকের মধ্যে বসে থেকে ট্রাকের উপর ঢাকনা দিয়ে মালবাহী গাড়ির মতো করে রওনা দেবে।

বগুড়া শাহ ফতেহ আলী কোচ এর পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, হরতাল বা অবরোধের পর টিকিটের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু অবরোধের পরেরদিন বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।

টি আর ট্রাভেলস এর টিকিট মাস্টার সামছুল ইসলাম ঢাকার যাত্রীদের চাপ বেশি থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকাগামী কোনো বাসের টিকিট নেই। সব সিট বুকিং দেওয়া হয়েছে।

একতা কোচ সার্ভিসের বগুড়া অফিসের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এমরান হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বলেন, ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করতে আমাদের প্রস্তুতি অনুযায়ী রেকর্ড সংখ্যক লোক ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

এদিকে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে জেলাপর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসতে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হতে পারে এ আশঙ্কায় আগেভাগেই রাজধানীতে অবস্থান নিয়েছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ছাড়াও রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে উঠতে শুরু করেছে তারা। তবে তারা বিভিন্ন পরিচয়ে হোটেলে অবস্থান করছে বলেও জানা গেছে।

দ্য রিপোর্টের বিভিন্ন জেলা সংবাদদাতা ও নিজস্ব প্রতিবেদকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ি প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এমসি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)