thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে 24, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৮ জিলকদ  1445

গণঅনশনে রাজনীতিক-পেশাজীবীরা

‘গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে একতরফা নির্বাচন থামান’

২০১৪ জানুয়ারি ০৪ ২২:২৬:৩৪
‘গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে একতরফা নির্বাচন থামান’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পেশাজীবীদের গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও পেশাজীবী নেতারা সরকারকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে দেশ বাঁচাতে একতরফার তামাশার নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সরকার গায়ের জোরে এ নির্বাচন করলেও দিনটি ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার কপালে কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেবে। এ জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিনটি ঘৃণার চোখে দেখবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার পেশাজীবীদের গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ পেশাজীবী নেতারা এ সব কথা বলেন।

তারা বলেন, শেখ হাসিনার একগুয়েমীর কারণে দেশ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে। তার তামাসার নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাবি শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদ এবং সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ গণঅনশন কর্মসূচীর আয়োজন করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত এ গণঅনশন কর্মসূচি চলে। পরে অংশগ্রহণকারীরা একে অপরকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙ্গান।

গণঅনশনে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারি সরকার তামাশার নির্বাচন করছে। শত বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক নির্বাচনের নজির আর নেই। গিনিস বুকে এ তামাশার নির্বাচনের কথা লেখা থাকবে।

তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে দেশে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল না করলে এ সংকটের সৃষ্টি হতো না। তিনি প্রেস ক্লাব, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাবি শিক্ষকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে।

খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি একজন বিরোধীদলীয় নেত্রী। অথচ তাকে পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ এ নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করছেন- এ অভিযোগ করে তিনি পেশাজীবীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানান। তিনি বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। গায়ের জোরে সরকার নির্বাচন করে ফেললেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ইতোমধ্যে লাশ হয়ে গেছে। রবিবার তাদের দাফন হবে। আগামীতে আপনি (শেখ হাসিনা) কুলখানির জন্য তৈরি থাকুন।

নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তল্পিবাহক উল্লেখ করে রব বলেন, আজ যে তামাশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা হবে জাতির জন্য ন্যাক্কারজনক। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন প্রাদেশিক আমলেও হয়নি।

তিনি বলেন, কি অদ্ভুত নির্বাচন! স্বাধীন দেশে নির্বাচনের প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না।

তিনি এ সময় সরকারের তামাশার নির্বাচন বন্ধের জন্য রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানান। রব বলেন, আপনি রাষ্ট্রপতি, দেশের অভিভাবক। যে নির্বাচনের পক্ষে কেউ নেই, সেই নির্বাচন আপনি বন্ধ করুন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অতি আশা ভালো নয়। আপনি দেশটাকে জ্বালিয়ে দেবেন না।

তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহবান জানান। একই সঙ্গে পেশাজীবীদের নির্বাচন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার আহবান জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দেন।

যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

রব বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধদের মন্দির ও উপসানালয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ। তারাই বাসে আগুন দিয়ে আবার হাসপাতালে গিয়ে মায়াকান্না করেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষের মতকে উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কারণে শেখ হাসিনার নাম বিশ্বের স্বৈরশাসক হিটলার, চেঙ্গিসদের পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে কোনো মানুষ যাবে না, যাবে শয়তানেরা। শয়তান গিয়ে ভোট দিলেও হাসিনার কোনো উপায় থাকবে না। ২৪ জানুয়ারির পর এ সরকারকে কেউ মানবে না।

জনগণ নির্বাচন বয়কট করেছে জানিয়ে তিনি রবিবারের নির্বাচন বাতিল করার আহবান জানান।

খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাকে পুলিশ যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ আটকে রেখেছিল, তাতে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যথার্থই বলেছেন।

সুপ্রিম কোর্টে মহিলা আইনজীবীদের উপর হামলা প্রসঙ্গে বলেন, একটি দেশে যখন একজন নারী চিৎ হয়ে পড়ে থাকেন, তখন দেশ লজ্জায় পড়ে যায়। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হলে এ সব করতে পারতেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, খালি মাঠে হাসিনা বক্তৃতা করতেই পারেন, যখন মাঠ সোজা হয়ে দাঁড়াবে তখন হাসিনার কোনো খোঁজ থাকবে না।

শেখ হাসিনাকে দেশের জন্য ‘আপদ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সঙ্গে যেমন ভারত আছে, আমার সঙ্গেও ভারত আছে। আমার সঙ্গে আসুন, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। দুই-তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বিদায় করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, রবিবারের দিনটি ইতিহাসে কালো দিবস হয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার কপালে কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিনটিকে ঘৃণার চোখে দেখবে।

জেঁদের বশবর্তী হয়ে একগুয়েমী না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তফসিল বাতিল করে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মানবে না। যে নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেই সে নির্বাচন জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত পেশাজীবীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি জানান।

পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচি পালন করা যায় না। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। জনগণ অবৈধ নির্বাচন মানবে না। নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনা সফল হবে না। সরকার যে পথে হাঁটছে তাতে তাদের পতন নিজেরাই ডেকে আনছে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোয়িশনের (ইউট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, তামাশার নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে। এ জন্য সবাইকে রাজপথে নেমে আসতে হবে।

ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক বলেন, দেশে নব্য বাকশাল চলছে। সারাদেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া মুক্তি নেই।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, শেখ হাসিনার পতনের মাধমেই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের এখন একটাই দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, যে সব মন্ত্রী-পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে তারা এক সময় হুকুমের আসামি হবেন।

সরকারকে তামাশার নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, যে কোনোভাবে ক্ষমতায় আসতে সরকার প্রহসনের নির্বাচন করছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে তফসিল বাতিল করুন, অন্যথায় একতরফার এ তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী বলেন, জবরদস্তির নির্বাচনে যে ৩০০ এমপি মনোনীত হতে যাচ্ছেন তারা হবেন গণতন্ত্রের কয়েদী।

ড্যাবের যুগ্ম-মহাসচিব ডা. এম এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন, এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশীদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার টপি, ঢাবির অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক ড. আবুল হাসনাত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. খলিলুর রহমান, এ্যাব নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের সহ-সভাপতি ডা. আবদুস সালাম, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডী, অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন, কৃষিবিদ এম এ করিম, ডিইউজে প্রচার সম্পাদক আকন আবদুল মান্নান, ডিইউজের আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, সংগ্রাম ইউনিটের প্রধান শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এমএআর/জানুয়ারি ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর