thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল 24, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৯ শাওয়াল 1445

সঙ্গীত জাদুকর এআর রহমান

২০১৪ জানুয়ারি ০৭ ১৬:৪২:২৩
সঙ্গীত জাদুকর এআর রহমান

আদিত্য রুপু, দ্য রিপোর্ট : এআর রহমান ভারতীয় সঙ্গীতের এক জাদুকরের নাম। ১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি মায়ের কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন। অংক সহজ, হিসাবমতে আজ তার জন্মদিন। জন্মদিনে এআর রহমান সম্পর্কে জানাতে এই আয়োজন।

পৃথিবীর কোলজুড়ে আগমন

এআর রহমানের জন্মস্থান ভারতের মাদ্রাজ স্টেটের চেন্নাইতে। তার পিতার নাম কে আর শেখর। ৬ জানুয়ারি ১৯৬৬ সালের জন্মদিবস অনুযায়ী এবার জন্মদিনে ৪৮-এ পা রাখলেন এই প্রতিভাবান সঙ্গীতজন। আজকের এই মহাতারকা এআর রহমানের ছেলেবেলা কিন্তু কেটেছে অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে। শৈশবে তার প্রথম নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। রহমানের বাবা আর কে শেখরও ছিলেন একজন পরিচালক। একইসাথে তিনি কেরালার ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা এবং বাদকের কাজ করতেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে রহমান পিয়ানো বাজানো শুরু করে। এদিকে মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের কথা চিন্তা করে উপার্জনের জন্য পথে নামতে হয়। মাদ্রাজ থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত গান নিয়ে এই সঙ্গীত পরিব্রাজক তবলার জাদুকর ওস্তাদ জাকির হোসেনের সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাজিয়েছেন।

যেভাবে নাম বদলান রহমান

১৯৮৯ সালে তাদের পুরো পরিবার হিন্দুধর্ম ছেড়ে ইসলামের সুফি মতাদর্শে দীক্ষিত হলে দিলীপ নিজের নাম রাখেন আল্লা রাখা রহমান খান। সংক্ষেপে এ আর রহমান। অস্কার পাওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে রহমান বলেন, ‘আমার আদরের ছোটবোনের অসুখ নিয়ে ওই সময় আমি ব্যথিত ছিলাম। বোনের রোগমুক্তি চেয়ে মান্নত করি যে, ও সুস্থ হলে আমি ধর্মান্তরিত হব।’

পড়াশোনা

এআর রহমান বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্টিনিট্টি কলেজ অফ মিউজিক থেকে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর গ্র্যাজুয়েশন করেন। ভারতে ফিরে প্রথমে মাদ্রাজের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় জিঙ্গেল লেখকের চাকরি নেন। ‘বম্বে ডাইং’ নামের একটি বিজ্ঞাপনের কাজের মাধ্যমে চারদিকে সাড়া ফেলে দেন। আর এটাই রহমানকে সবার নজরে পড়তে সাহায্য করে।

শুরুর কাজ কাজের শুরু

প্লে-ব্যাক বা চলচ্চিত্রে গান গেয়ে এআর রহমান-এর আত্মপ্রকাশ মূলত ‘বম্বে’ ছবিতে। এর আগেই তিনি অনেক গানের কোরাস-এ কন্ঠ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম কোনো গানে পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা পালন করেন ‘বম্বে’ সিনেমার ‘হাম্মা হাম্মা’ গানটিতে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই বিখ্যাত পরিচালক মনিরত্নম তার তামিল ছবি ‘রোজা’র সাউন্ডট্র্যাক এবং সঙ্গীত পরিচালনার জন্য রহমানকে আমন্ত্রণ জানান। এই ছবিতে তার কাজ সবাইকে এতো বেশি মুগ্ধ করে যে, প্রথমবারের মতো কোনো নতুন অভিষিক্ত সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে রহমান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। মাদ্রাজ থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত গান নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে রহমান যন্ত্র বাজিয়েছেন সঙ্গীত মহারথী তবলার জাদুকর ওস্তাদ জাকির হোসেনের সঙ্গে। তার কন্ঠে প্রথম অ্যালবাম বের হয় ‘বন্দে মাতরম’ শিরোনামে সনি মিউজিক কোম্পানির পক্ষ থেকে। ১৯৯৭ সালের ১৫ আগস্ট প্রায় ২৮টি দেশে একযোগে প্রকাশ করা হয় এই অ্যালবাম।

অন্যান্য কাজ

এক সময়ের তুমুল বিখ্যাত ছবি ‘রঙ্গিলা’র সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বলিউডি দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন রহমান। এই ছবির গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরপর বিরতিহীনভাবে রহমান উপহার দেন ‘বম্বে’, ‘দিল সে’, ‘লগান’ এবং ‘রঙ দে বাসন্তি’ ছবিগুলোর অসাধারণ সব সঙ্গীত। ‘ছাইয়া ছাইয়া’র গানের ‘দিল সে’ ছবির সুপারহিট কম্পোজিশনটি রহমানের জীবনে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৯৯৮ সালে করা এই গানের ভেতরে সুফি মরমীবাদের গভীর ছাপ রয়েছে, যা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃত। আর ছবিটি টেলিভিশনের পর্দায় দেখেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রবাদপ্রতীম থিয়েটার পরিচালক এন্ড্রু লয়েড ওয়েবার। এই বিখ্যাত মানুষটি তার ‘ছাইয়া ছাইয়া’ গানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। লয়েড এই মানুষটিকে খুঁজে পাবার সাথে সাথে শুধু একজন উদ্ভাবনী পরিচালকের দেখাই পাননি, পেয়েছেন নানা সমস্যার সমাধানকারীকেও। কারণ রহমান প্রায় সব সঙ্গীতযন্ত্রই অবলীলায় বাজাতে পারেন এবং তার দক্ষতাও অতুলনীয়। ফলে ২০০২ সালে তিনি প্রথম স্টেজ প্রোডাকশন হিসেবে ‘বম্বে ড্রিমস’- এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই কাজ তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায় লন্ডনের ওয়েস্ট-অ্যান্ড থেকে নিউইয়র্কের ব্রডওয়েতেও! ওয়েস্ট-অ্যান্ডে কাজ করার জন্য তিনি ‘লরেন্স অলিভিয়ের’ পদক লাভ করেছেন।

সংসার জীবন

রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী সায়রা বানু ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। খাদিজা, রহিম এবং আমান তাদের নাম। দক্ষিণ ভারতের অভিনেতা রাশিন রহমান এবং সঙ্গীত পরিচালক জে ভি প্রকাশ কুমারের তিনি আত্মীয় হন এআর রহমান।

পুরস্কার, উপাধি ও রেকর্ড

স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির সঙ্গীত পরিচালনার জন্য ৮১তম অস্কার প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনা এবং সর্বোচ্চ স্কোরের জন্য এআর রহমান দুটি পুরস্কার লাভ করেন। এখন পর্যন্ত এই জনপ্রিয় গায়কের ঝুঁলিতে রয়েছে দুটি অস্কার, একটি বিএফটিএ পুরস্কার, একটি গোল্ডেন গ্লোব ও দুটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। পেয়েছেন ‘মোজার্ট অফ ম্যাড্রাস’ ও ‘ইসাই পুয়ালের’ মতো উপাধিও। ২০০৯ সালে স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিতে মিউজিক দেওয়ার জন্য অস্কার পান রহমান। ১৯৯২ সালে মনিরত্নম পরিচালিত ‘রোজা’ ছবিতে মিউজিক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন এআর রহমান। প্রথম ছবিতেই সেরা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন তিনি। চারবারের জাতীয় পদক জয়ী রহমান পেয়েছেন আরও অনেক পদক এবং খেতাব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব। আর ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি ৬ বার ‘তামিলনাড়ু স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ এবং ১১ বার পেয়েছেন ‘ফিল্মফেয়ার’ পদক। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টার্নফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সারাবিশ্বের সঙ্গীতে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করে। আর ১৯৯৫ সালে তিনি গ্রহণ করেন মরিশাসের জাতীয় পদক এবং মালয়েশিয়ার জাতীয় পুরস্কার। এই দারুণ বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পরিচালকের ছবির সুর করা গানের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। আর ক্যাসেট বা সিডি বিক্রি হয়েছে সারাবিশ্বে ২০০ মিলিয়নেরও বেশি। ফলে তিনি হয়েছেন সর্বকালের সেরা ১০ রেকর্ডিং আর্টিস্টদের একজন। কানাডায় এআর রহমানের নামে একটি রাস্তার নামকরণও করা হয়। কানাডার ওন্টারিওর মরখমে ওই রাস্তার নাম ‘আল্লাহরাখা রহমান স্ট্রিট’। নিজের নামে রাস্তা হওয়ায় উল্লাসিত রহমান টুইটারে তখন লিখেছিলেন, ‘আমার রাস্তায় সকলকে স্বাগত জানাই!’

(দ্য রিপোর্ট/এআর/এইচএসএম/সা/জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর