thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল 24, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৯ শাওয়াল 1445

এ সপ্তাহের মঞ্চ

স্বতন্ত্র আঙ্গিকে ‘ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া’

২০১৪ জানুয়ারি ০৭ ১৮:৪৯:৫১
স্বতন্ত্র আঙ্গিকে ‘ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া’

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : গত বছরের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনিশ্চয়তার ঘোর এখনও কাটেনি। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের পারিপার্শ্বিক চালচিত্র আমাদের এমনটাই জানান দেয়। যদিও জানুয়ারির প্রথম দিন সন্ধ্যায় ‘গহনে প্রবিষ্ট মূল, পল্লবিত আসমানে- গাই গান মানবের’ স্লোগানে অভিষেক ঘটে নাট্য সংগঠন ‘বটতলা’র একটি নিরীক্ষাধর্মী নাটক ‘দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া।’ আফ্রিকার মানুষের চিন্তার উপজীব্য এ নাটকটি সপ্তাহের প্রথম দিন পর পর তিনবার মঞ্চায়ন হয়। আফ্রিকার নাট্যকার মুহাম্মদ বেন আবদাল্লা রচিত নাটকটির বঙ্গানুবাদ করেছেন সৌম্য সরকার ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। বটতলার পঞ্চম প্রযোজনা এটি। আমরা যে যেখানে কর্মযজ্ঞ চালাই না কেন সবকিছুর মূলে তো স্বদেশ। তাই তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের ৪৩ জন বিশিষ্ট নাট্যজনের ৪৩টি মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। উদ্বোধন করেন আইটিআই বিশ্ব সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। আফ্রিকার সামাজিক অবস্থান ও মূল্যবোধ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু জীবন ভাবনার তো তেমন পার্থক্য থাকে না, তাই তো ভিনদেশি নাটক ‘দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া’ নাটমণ্ডলের হলভর্তি দর্শকের পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার বাস্তব চিত্র অবলোকনের সুযোগ পায় এবং মনোজগতে ভালো লাগার সৃষ্টি করে। ঐতিহাসিক কিংবা সমাজ নিরীক্ষাধর্মী নাটকে সবচেয়ে কঠিনতর যে বিষয়টি, তা হলো শৈল্পিক চ্যালেঞ্জ। এ রকম নাটকে কল্পনার আশ্রয় এবং সিম্বলিক চিত্রায়নে অনেক সতর্কতার আবশ্যক হয়। স্বতন্ত্র ঘরানার এ নাটকটি সার্বিক বিবেচনায় কতটুকু সফলতার মুখ দেখেছে, তা জানার

আগে কাহিনী সহযোগে উপস্থাপনের বর্ণনা জরুরি।

একটি পরিকল্পিত বিপ্লবের দৃশ্যায়ন দিয়ে নাটকের শুরু হয় । মালওয়াল নামক এক যুবকের নেতৃত্বে ক্ষমতার অন্যতম ব্যক্তি মাল্লাম ইলিয়ার বাড়িতে হানা দেয় নববিপ্লবীরা। মেধার সুন্দর প্রয়োগে বিপ্লবের সফলতা নির্ভর করে। তাই বিনা রক্তপাতে এ বিপ্লব ঘটানো হবে- এ ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়। নাটকের শুরু অন্ধকারে- একটি পরিকল্পিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। মালওয়াল নামক একজন যুবকের নেতৃত্বে ক্ষমতার অন্যতম গ্রহ মাল্লাম ইলিয়ার বাড়িতে হানা দেয় নববিপ্লবীরা। বিনা রক্তপাতে এ বিপ্লব ঘটানো হবে এমন স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও আমরা জানতে পারি একজন নারী খুন হয়েছেন- হালিমা, ইলিয়ার স্ত্রী। বিপ্লবীরা মাল্লামকে নিয়ে একটি গোপন স্থানে চলে যায়। মাল্লামকে একটি ট্রায়ালে দাঁড় করায় মালওয়ালরা। মাল্লাম মুহম্মদ ইলিয়া শুরু করে তার বয়ান। শুরু হয় নাটকের মধ্যে নাটক- কয়েক স্তরের নাটক। আমরা চলে যাই প্রায় ত্রিশ বছর পেছনে যখন ইলিয়া ছিল যুবক। ইলিয়ার দীক্ষা ছিল প্রধানত ধর্মীয়। তবে ধর্মের ও সততার বোধ তাকে ন্যায়ের কথা বলতে শেখায়, জনতাকে সে বলতে শুরু করে বর্তমান ‘দুঃশাসনের’ কথা। রাষ্ট্রনায়ক কামরানের শ্যোন দৃষ্টিতে পড়তে হয় তাকে। গুরু আব্বাসের কন্যা রূপসী হালিমা জড়িয়ে পড়ে কামরানের সঙ্গে সম্পর্কে; ফলে হালিমা হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। কামরানকে হত্যার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আরও নেতাদের সঙ্গে বন্দী হয় ইলিয়া। তার বিচার নিয়ে শুরু হয় প্রহসন। হত্যা-চক্রান্তে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নাটক সাজিয়ে হালিমার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় ইলিয়াকে। তাকে প্রদান করা হয় মৃত্যুদণ্ড। এভাবেই মৃতদের সাক্ষ্য ও অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বা কখনও মালওয়ালের হস্তক্ষেপে বর্তমানে ফিরে এসে এগোয় নাটক। কামরানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে উল্টে যায় ক্ষমতার কক্ষপথ। ইলিয়া এবং অন্যরা যারা বন্দি ছিল, তারা হয়ে উঠে রাষ্ট্রের কাণ্ডারি আর কামরানের সমর্থকরা হয় বন্দি। রাজনীতির খেলা কিন্তু চলতে থাকে- ক্ষমতার গণেশ উল্টে আবার নতুন গণেশদের অভ্যুত্থান হতে থাকে। জনতার ভাগ্যের পরিবর্তন কখনই হয় না। তবে ইলিয়া ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে যায় প্রত্যেকবার। এর মধ্যে জানা যায় শ্বশুরের রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে কামরানের।

জনগণের আবেগের নতুন মাত্রা প্রকাশ পায় এবার; কামরানের মৃতদেহ তারা নিজেদের বলে দাবি করে। জনতার এ দাবি জনরোষে রূপ নিতে পারে ভেবে ইলিয়া স্ব-দলবলে সাক্ষাৎপ্রার্থী কামরানের স্ত্রী সানিয়ার দরবারে- উদ্দেশ্য কামরানের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা। উদ্ধত ও কুশলি সানিয়া রাজি হয়, তবে শর্ত আবার সেই স্বীকারোক্তি! ইলিয়া এবং হালিমাকে আবার বলতে হবে, যে সন্তান হালিমার গর্ভে হয়েছিল সে পুত্রসন্তান মাল্লাম ইলিয়ার ঔরসজাত! নাটক বর্ণনার এ পর্যায়ে ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে উঠে মালওয়াল। মালওয়ালকে দেখে মনে হয় সেই ‘স্বীকারোক্তি’ নাটকের সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে তার সব। আজ একটি এসপার-ওসপার করা চাই-দৃশ্যত মনে হয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে।নাকি আত্মপরিচয়ের খোঁজে উন্মত্ত মালওয়াল আজ।কী উত্তর পায় সে? এমন প্রশ্ন রেখেই শেষ হয় ‘ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া। ’নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন পংকজ মজুমদার, তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, কাজী রোকসানা, সামিনা লুৎফা,মিজানুর রহমান, আবদুস সালাম, আবদুর রহিম, হাসনাইন সিকদার শেউতি সাগুফতা, হুমায়রা আখতার,ইভান রিয়াজ,বাকিরুল ইসলাম, ইমরান খান মুন্না প্রমুখ।

নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার দ্য রিপোর্টকে জানান, সারা পৃথিবীর থিয়েটারচর্চা ইউরোপকেন্দ্রিক।আমরা চিন্তা করেছি এ কেন্দ্রিকতা অতিক্রম করে পৃথিবীর অন্যত্রও নাট্যচর্চা আছে। মননশীল দর্শক-স্রোতাদের তা জানান দেয়ার জন্য আফ্রিকার নিরীক্ষাধর্মী নাটক ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়াকে বেছে নিয়েছি।

আশা রাখছি, স্বতন্ত্র চিন্তা ও উপস্থাপনের সমন্বিত এ প্রযোজনাটি দর্শকের ভালো লেগেছে। ‘ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া’ উপভোগ করে মঞ্চনাটকের নিয়মিত কয়েকজন দর্শক নাটমণ্ডল থেকে বেরিয়ে দ্য রিপোর্টকে জানান, নাটকটি আমাদের খুব ভালো লেগেছে কিন্তু প্রতিনিয়ত উপস্থাপনের যে ফর্ম লক্ষ্য করা যায়, মঞ্চনাটকে এটিতে তেমনটি দেখা যায়নি। তাদের প্রশ্ন বাংলা মঞ্চনাটকের কী কোনো নিজস্ব ফর্ম থাকবে, নাকি যে যার মতো উপস্থাপন করবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/শাহ/জানুয়ারি ৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর