thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে যেতে পরিকল্পনা গ্রহণ

২০১৪ জানুয়ারি ০৮ ২২:০৩:৩৮
মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে যেতে পরিকল্পনা গ্রহণ

মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে যেতে গত ৫ বছরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পরিকলল্পনা কমিশন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, গত ৫ বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ধরে রাখতে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তা ছাড়া আর একটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে, তা হলে যে সরকারই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক তারা যেন রাজনৈতিক আবেগের বসে কোনো প্রকল্প বন্ধ করা না করে।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরে ব্যাপক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ সময়ের মধ্যে ১৩৪টি একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোতে মোট ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ৯৮৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতাবলে বা অনূর্ধ্ব ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ২৩৫টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ের ১ হাজার ২২৩টি প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা : ২০১৫ সালের মধ্যে দেশে দারিদ্র্যের হার বর্তমানে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ ছাড়া এ পরিকল্পনায় ৫ বছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, ৯২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং মোট দেশজ বিনিয়োগ (জিডিপির অংশ) ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৩ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। মোট বিনিয়োগের ৭৭ শতাংশ আসবে ব্যক্তি খাত থেকে। যার পরিমাণ ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬০ কোটি। আর সরকার অর্থায়ন করবে তিন লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট বিনিয়োগের ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

২০১১ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (রূপকল্প) : সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী রোড ম্যাপ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল নাগাদ দেশের অবস্থান নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রণীত এ রোড ম্যাপে সাতটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নামের এ রোড ম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত সাতটি উন্নয়ন অগ্রাধিকার হচ্ছে, জনগণের অংশীদারিত্বভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্যতা হ্রাসকরণ, কার্যকরী সরকারব্যবস্থা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিতকরণ, বিশ্বায়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ, উন্নয়ন ও নাগরিক কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন, সুদৃঢ় অবকাঠামো নির্মাণসহ নগর সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসমূহ উপশমকরণ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিত্যনতুন উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে বেগবান করা।

জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল : জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সমস্যাগুলো হল- স্বল্প বিনিয়োগ ও সঞ্চয় হার, অদক্ষ মানব সম্পদ, প্রান্তিক মানের মোট উপকরণের উৎপাদনশীলতা ও ভূমির দুষ্প্রাপ্যতা বা প্রতিবন্ধকতা, অবকাঠামো কর্মসূচিতে ক্রমবর্ধমান সরকারি বিনিয়োগ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন, পিপিপি, বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগ প্রণোদনা বৃদ্ধির মাধ্যমে আইটি খাত উৎসাহীতকরণ, বেসরকারি বিনিয়োগ, গবেষণা ও উন্নয়ন, শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, রফতানি প্রবৃদ্ধি ও বৈচিত্রকরণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সবুজায়ন প্রবৃদ্ধিতে উন্নীতকরণ।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ শুরু : আয় ও আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ হচ্ছে আগামী ২০১৫ সালে। এ জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে তৈরি হতে যাওয়া এ পরিকল্পনায় যে সব বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তি এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন। এ বিষয়ে একটি সার্বিক নীতিমালা (কনসেপ্ট পেপার) তৈরির কাজ শেষে সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য কাজ করছে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি।

সর্বোচ্চ আকারের এডিপি : চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরের জন্য এ যাবতকালের সর্বোচ্চ আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা টাকার অঙ্কে ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪১ হাজার ৩০৭ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি ও এই প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এতে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ হাজার ২৫২ কোটি ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক হাজার ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অর্ন্তভুক্ত প্রকল্প ১ হাজার ৪৬টি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের ১৩০টি প্রকল্প রয়েছে। তবে বরাদ্দসহ প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প ৫০টি।

এডিপিতে অর্থ সংকট : গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে চরম অর্থসংকটে পড়েছিল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। সে সময় বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছিল চরম অনিশ্চয়তা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য উন্নয়ন সহায়তাসহ সম্পদের চাহিদা এক হাজার ৩৯টি প্রকল্পের বিপরীতে ৭০ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৪৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ২৫ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে উন্নয়ন সহায়তাসহ এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সমপরিমাণ প্রকল্পের বিপরীতে ৪৬ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ওই এডিপি অনুমোদনের সময়েই ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৭ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৬ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা।

বিবিএস শক্তিশালীকরণ : সরকারের একমাত্র জাতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শক্তিশালী করতে ব্যাপক উদ্যোগ ছিল গত ৫ বছরে। এ জন্য সবচেয়ে বড় কাজ পরিসংখ্যান আইন পাস করেছে সরকার। এ ছাড়া তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা তৈরি করা হয়েছে ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ স্টাটেটিকস (এনএসডিএস)। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২১ সালের মধ্যে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এসবি/আরকে/জানুয়ারি ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর