thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউস সানি 1446

আরএডিপিতে জেডিসিএফের নতুন কোনো প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে না

২০১৪ জানুয়ারি ১২ ২১:১৬:১০
আরএডিপিতে জেডিসিএফের নতুন কোনো প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে না

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলে (জেডিসিএফ) নতুন কোনো প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে না। কারণ এ তহবিলে নতুন প্রকল্প নেওয়ার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই এবং চলমান প্রকল্পগুলো সমাপ্তির জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

জেডিসিএফের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাপান ডেস্কের প্রধান সফিকুল আজম এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে জানান, সম্প্রতি এক বৈঠকে সংশোধিত এডিপিতে জেডিসিএফের আওতায় নতুন কোনো প্রকল্প না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে যেগুলো সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এক ধরনের নির্দেশনাই প্রদান করা হয়েছে যে, যাতে করে এই তহবিলের কোনো প্রকল্প সংশোধন করতে না হয়।

চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৪৬টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৮৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২৯টি এবং জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের ৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, উন্নত দেশগুলোর উচ্চ পর্যায়ের ফোরামে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাপান সরকার ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে যে পরিমাণ ঋণের টাকা পাওনা ছিল সেটি অবলোপনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেটি করা হয় জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) মাধ্যমে। এটির অর্থ হচ্ছে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে জাপান সরকার বাংলাদেশের কাছে যে পরিমাণ ঋণের টাকা পেত তা আর ফেরত দিতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধান শর্তই হচ্ছে এ টাকা উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জাপানোর অনুমতি লাগবে এবং গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের তদারকি করবে জাপান। এর আগে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশ সরকারকে যে ঋণ দিয়েছিল তার ডিআরজিএর (ডেট রিলিফ গ্রান্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট) মাধ্যমে সেটি পুরোপুরি মওকুফের সুবিধা পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ডিআরজিএর পরিবর্তে সেই স্থানে করা হয় জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিল (জেডিসিএফ)। সেই ধারাবাহিকতায় জাপান সরকার জেডিসিএফের আওতায় ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা জাপানি মুদ্রায় ১৫৮ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০০৪ সালে এসে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় নয় হাজার কোটি টাকারও কিছু বেশি। ওই অর্থ প্রথমদিকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মওকুফ হওয়ার কথা থাকলেও বেশ দ্রুতই ওই তহবিলের অর্থ শেষ করে ফেলেছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে জেডিসিএফ তহবিলে স্বল্প পরিমাণ টাকাই অবশিষ্ট রয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, জেডিসিএফের ভাণ্ডার শূন্য হয়ে পড়ায় চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ও (এডিপি) কোনো নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ তহবিলে চলতি অর্থবছরের শুরুতে মাত্র ৫৮ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এর আগে জেডিসিএফের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আজমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে জাপান দূতাবাস ও জাইকার প্রতিনিধি এবং এ তহবিলের অর্থে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় কৃষি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। এরপর আলোচনা হয়েছে সড়ক বিভাগ, রেলপথ, সেতু বিভাগ, নৌ-পরিবহন, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, তথ্য, খাদ্য, শিল্প, বস্ত্র ও পাট, ভূমি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে।

ওই সভার একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জেডিসিএফের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের যে হার দাঁড়িয়েছে তা সন্তোষজনক। এ ছাড়া জেডিসিএফের আওতায় ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ফলে সবসময়ই এগুলোর বাস্তবায়নের অবস্থা ভালো থাকে।

সূত্র জানায়, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জেডিসিএফ তহবিলের অর্থায়নে মোট ৫২টি প্রকল্পের একটি তালিকা যুক্ত করা হয়। এ সব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বরাদ্দ দেয় মোট এক হাজার ৩৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা ছিল ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এর আগের অর্থবছরের (২০১১-১২) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) জেডিসিএফের ৬৩টি প্রকল্পের বিপরীতে মোট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএআর/সা/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর