বগুড়ায় গণগ্রেফতার এড়াতে পরিচয়পত্র!

বগুড়া সংবাদদাতা : বগুড়ার গাবতলীতে গণগ্রেফতার এড়াতে পুলিশের স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র নিতে মাইকিং করা হয়েছে। আর সে কারণেই উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা মডেল থানার তদন্ত পরিদর্শক স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র নিচ্ছেন।

এদিকে পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার নামে কিছু বাড়তি টাকা লুফে নিচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতাসহ স্থানীয় স্টুডিও ব্যবসায়ীরা। পুলিশের এমন পরিচয়পত্র দেওয়ার কতখানি আইনি বৈধতা আছে না নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, দশম সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনের শাহাজানপুরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলেও গাবতলীর ৪৬টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। স্থগিত হওয়া ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের দায়ের করা ৪৬টি মামলায় অর্ধলক্ষাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এ সব মামলায় অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ গণহারে আটক শুরু করে।

অনেকের অভিযোগ, পুলিশ প্রকৃত নাশকতাকারীদের আটক করতে না পেরে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, মুদি দোকানী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার খেটে খাওয়া মানুষকে গণহারে আটক করছে। মূলত এ কারণেই গাবতলীর সর্বশ্রেণীর মানুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে।

এ বিষয়ে গাবতলী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফর রহমান বলেন, ‘জনস্বার্থেই পরিচিত মুখদের এ পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এখানে সেবাদান ছাড়া পুলিশের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই।’

বগুড়া পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটি আইনসঙ্গত নয়। তাই এমন পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধের নিদের্শ দিয়েছি। এমন কৌশল ব্যক্তিগতভাবে যে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রহণ করেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে এমনিতেই ব্যবসায়ীদের মন্দা অবস্থা চলছে। এরই মধ্যে আবার টাকার বিনিময়ে পরিচয়পত্র নেওয়াটা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাইস্কুল মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী। পৌরসভাকে নিয়মিত কর দিয়ে থাকি। এরপরেও এত সব ঝামেলা কেন?’

এদিকে রবিবার গাবতলীর গোলাবাড়ী বাজারে পরিচয়পত্র নিতে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। মাইকিংয়ে বলা হয়, সমিতির আওতাভুক্ত সব ব্যবসায়ীকে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে পরিচয়পত্র নিতে হবে। অন্যথায় কারো কোনো বিপদ হলে ব্যবসায়ী নেতারা দায়ী থাকবেন না।

গোলাবাড়ী বাজার সমিতির সভাপতি মেজবাউল হক উজ্জ্বল স্বাক্ষরিত এ পরিচয়পত্র নিতে তিনশ ব্যবসায়ীর প্রত্যেককে গুনতে হয়েছে ৬০ টাকা করে।

এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি মেজবাউল হক উজ্জ্বলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে মাইকিং করার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এনডিএস/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)