thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

মানব প্রেমের আদর্শ স্বামী বিবেকানন্দ

২০১৪ জানুয়ারি ১৭ ০০:১৮:২৮
মানব প্রেমের আদর্শ স্বামী বিবেকানন্দ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ‘বিবাদ নয়, সহায়তা, বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ, মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।‘ এমন সৌকর্যময় কথা বলতেন স্বামী বিবেকানন্দ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের কাছে যথেষ্ট শ্রদ্ধার পাত্র। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, যত মত, তত পথ।

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম কলকাতার শিমুলিয়ায় ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি। তার পারিবারিক নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। বাবা বিশ্বনাথ দত্ত আইনজীবী ও মা ভুবনেশ্বরী দেবী গৃহিনী। পারিবারিক পরিবেশে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানার্জন করেন। ১৮৭৯ সালে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৮৮৪ সালে বিএ পাস করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার শিক্ষাজীবন বারবার ব্যাহত হয়।

১৮৮১ সালের নভেম্বর মাসে তাদের পাড়ায় সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের আগমন ঘটে। যেখানে ভজন গেয়ে তার নজরে পড়েন বিবেকানন্দ। পরিচয়ের পর থেকে তার ওপর রামকৃষ্ণের প্রভাব বাড়তেই থাকে। অন্তর্ধানের কিছুদিন আগে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দসহ আরও কয়েকজন কিশোর ভক্তকে সন্ন্যাস দিয়ে যান। গুরুজীর অন্তর্ধানের পর তিনি সংসার ত্যাগ করে রামকৃষ্ণ মঠে আশ্রয় নেন। ১৮৯১ সালের দিকে ক্ষত্রিয় মহারাজ তাকে স্বামী বিবেকানন্দ নামে ভূষিত করেন। এরপর ৩ বছরের বেশি সময় ভারত ভ্রমণ করেন। ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে বিশ্ব ধর্মসভায় বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কর্মযোগ (১৮৯৬), বেদান্ত ফিলোজফি (১৯০২), পরিব্রাজক (১৯০৩), ভাববার কথা (১৯০৫), বর্তমান ভারত (১৮৯৯) এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য (১৯০৯)।

বিবেকানন্দ ত্যাগ ও বৈরাগ্যের চিরন্তন আদর্শ। স্বামীজীর চেতনা মানুষকে নানাভাবে উদ্দীপ্ত করে। জটিল দার্শনিক ও অধিবিদ্যিক ধারণা যেমন তার মধ্যে বিকশিত হয়েছে, একই সঙ্গে সরল মানবিক চেতনা তিনি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সর্বজনীন মানবিকতা ও প্রেমে বিশ্বাসী। তার জীবন দর্শন ছিল পৃথিবীর সকল মানুষের, সকল সমাজের, সকল শ্রেণীর সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠা। তা তার কর্ম ও বাণীতে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫১তম আর্বিভাব তিথি উপলক্ষে তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। পাঠকদের জন্য তার কিছু অমর বচন নিবেদন করা হলো-

১. আমার সম্বন্ধে এইটুকু জেনে রেখো, কারও কথায় আমি চলব না। আমার জীবনের ব্রত কি- তা আমি জানি, আর কোনো জাতি বিশেষের ওপর আমার তীব্র বিদ্বেষ নেই। আমি যেমন ভারতের, তেমনি সমগ্র জগতের।

২. টাকায় কিছু হয় না, নাম-যশে কিছু হয় না, বিদ্যায় কিছু হয় না, চরিত্রই বাধা-বিঘ্নের বজ্রদৃঢ় প্রাচীর ভেদ করতে পারে।

৩. চরম লক্ষ্যে পৌঁছিবার একমাত্র উপায়- নিজেকে এবং সকলকে বলা যে, আমিই সেই (ব্রহ্ম), পুনঃ পুনঃ এইরূপ বলিতে থাকিলে শক্তি আসে। এই অভয়বাণী ক্রমশ গভীর হইতে গভীরতর হইয়া আমাদের হৃদয় অধিকার করে, পরিশেষে আমাদের প্রতি শিরায়, প্রতি ধমনীতে, শরীরের প্রত্যেক অংশে পরিব্যপ্ত হইয়া জ্ঞানসূর্যের কিরণ যতই উজ্জ্বল হইতে উজ্জ্বলতর থাকে, ততই মোহ চলিয়া যায়, অজ্ঞানরাশি দূর হয়- ক্রমশ এমন এক সময় আসে- যখন সমূদয় অজ্ঞান একেবারে চলিয়া যায় এবং একমাত্র জ্ঞানসূর্যই অবশিষ্ট থাকে।

৪. নিজের ওপর বিশ্বাস ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস। ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়। তোমার যদি এ দেশীয় পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার ওপর এবং বৈদেশিকরা মধ্যে মধ্যে যে সকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহাদের সবগুলির ওপরই বিশ্বাস থাকে, অথচ যদি তোমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তোমার কখনই মুক্তি হইবে না। নিজের ওপর বিশ্বাসসম্পন্ন হও- সেই বিশ্বাসবলে নিজের পায়ে নিজে দাড়াও এবং বীর্যবান হও।

৫. সত্যের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা চলে কিন্তু কোনো কিছুর জন্যই সত্যকে বর্জন করা চলে না।

৬. একটি চারাগাছকে বাড়ানো তোমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, একটি শিশুকে শিক্ষা দেওয়াও তোমার পক্ষে ততটুকু সম্ভব, তাহার বেশী নয়। তুমি যেটুকু করিতে পারো, তাহার সবটাই 'নেতি'র দিকে- তুমি শুধু তাহাকে সাহায্য করিতে পারো। শিক্ষা ভিতর থেকে বিকশিত হয়। নিজের প্রকৃতিকে শিশু বিকশিত করিতে থাকে; তুমি কেবল বাধাগুলি অপসারিত করিতে পার।

৭. প্রেমে মানুষে মানুষে, আর্যে ম্লেচ্ছে, ব্রাহ্মণে চণ্ডালে, এমন কি- পুরুষে নারীতে পর্যন্ত ভেদ করে না। প্রেম সমগ্র বিশ্বকে আপনার গৃহসদৃশ করিয়া লয়। যথার্থ উন্নতি ধীরে ধীরে হয়, কিন্তু নিশ্চিতভাবে। যে-সকল যুবক ভারতের নিম্নশ্রেণীর উন্নয়নরূপ একমাত্র কর্তব্যে মনপ্রাণ নিয়োগ করিতে পারে, তাহাদের মধ্যে কাজ কর, তাহাদিগকে জাগাও— সঙ্ঘবদ্ধ কর এবং এই ত্যাগ-মন্ত্রে দীক্ষিত কর।

৮. বহুরূপে সন্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই যন, সেই যন সেবিছে ঈশ্বর।

৯. নিজের ওপর বিশ্বাস না আসিলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না।

১০. বাহিরের কিছুর উন্নতি হয় না, জগতের উন্নতি করিতে গিয়া আমারই উন্নতি হই।

১১. আর কিছুরই আবশ্যক নাই, আবশ্যক কেবল প্রেম সরলতা ও সহিষ্ণুতা। জীবনের অর্থ বিস্তার; বিস্তার ও প্রেম একই কথা। সুতরাং প্রেমই জীবন- উহাই জীবনের একমাত্র গতি নিয়ামক; স্বার্থপরতাই মৃত্যু, জীবন থাকিতেও ইহা মৃত্যু, আর দেহাবসানেও এই স্বার্থপরতাই প্রকৃত মৃত্যুস্বরূপ।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/একেএম/এএল/জানুয়ারি ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর