thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

রাসূলের (সা.) খুতবা থেকে

কিয়ামতে আল্লাহ্‌র নেকনজর পড়বে না যাদের ওপর

২০১৪ জানুয়ারি ১৭ ১৪:১৮:০৫
কিয়ামতে আল্লাহ্‌র নেকনজর পড়বে না যাদের ওপর

একেএম মহিউদ্দীন

রাসূল (সা.) হলেন মানবতার বন্ধু। তিনি তাঁর প্রত্যেকটি কাজ ও কথার মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন মানুষকে আল্লাহ্‌র দ্বীনের দিকে ফেরাতে। তাঁর প্রত্যেকটি ভাষণে এ কথারই প্রতিফলন হয়েছে, সার্বিকভাবে মানবিক উৎকর্ষতা সাধন করতে সচেতন হতে হবে। আজ আমরা তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ এখানে উদ্ধৃত করছি।

রাসূল (সা.)বলেন ছয়টি বস্তু ছয় জায়গায় গরীব ও অসহায় বটে। যথা : ১. সেই জনগোষ্ঠীর মসজিদ অসহায়, যারা তাতে নামাজ পড়ে না। ২. সেই জনগোষ্ঠীর ঘরসমূহে কুরআন অসহায়, যেখানে তা তিলাওয়াত করা হয় না, ৩. সেই কুরআনও অসহায়, যা ফাসিক ও সত্যত্যাগীর পেটে রয়েছে (কেননা সে এর চর্চা করে না।) ৪. সেই পুণ্যবতী মুসলমান রমণী অসহায় যে একজন অত্যাচারী ও চরিত্রহীন পুরুষের অধীনে রয়েছে ৫. সেই পুণ্যবান মুসলিম পুরুষ অসহায়, যে একজন বাজে ও চরিত্রহীনা নারীকে নিয়ে সংসার করছে ৬. সেই আলীম অসহায় যিনি এমন এক সমাজে রয়েছেন যে সমাজের লোক তার কথা শুনে না। অতঃপর নবী (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তায়ালা কিয়ামতের দিন এই সমস্ত মানুষের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

রাসূল (স.) তাঁর ভাষণে আরও বলেন, ছয় প্রকার লোক আছে, যাদের উপর আমি লানত করেছি এবং আল্লাহ তায়ালা ও সমগ্র আম্বিয়া-ই কিরাম (যাদের দুআ আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণীয় ) লা'নত করেছেন। তারা হচ্ছে, ১. যারা আল্লাহ্‌র কিতাবের মধ্যে নিজে থেকে কিছু বাড়িয়ে দেয় (পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে), ২. যারা আল্লাহ্‌র দেওয়া তাকদীর (ভাগ্যলিপি)-কে মানে না, ৩. যারা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখন করে এই উদ্দেশ্যে যে, যাকে আল্লাহ্‌ তায়ালা লাঞ্ছিত করেছেন, তাকে সম্মানিত করবে এবং যাকে আল্লাহ্‌ তায়ালা সম্মানিত করেছেন, তাকে লাঞ্ছিত করবে, ৪. যারা আল্লাহ্‌র নির্ধারিত হারাম বস্তুকে হালাল মনে করে, ৫. যারা আমার বংশধরদের উপর অত্যাচার করবে, যা আল্লাহ্‌ তায়ালা তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, তাকে বৈধ মনে করে এবং ৬. যারা আমার সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে। আল্লাহ্‌ তায়ালা এই সমস্ত লোকের প্রতি কিয়ামতের দিন দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

বর্ণিত ভাষণে রাসূল (সা.) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি (সা.) আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন, যেন আমরা মসজিদের হক, উলামায়ে কিরামের হক, কুরআনের হক, পুণ্যবতী স্ত্রীর হক, পুণ্যবান স্বামীর হক, আহলে বায়তের হক, সুন্নাতে নববীর হক এবং সাধারণ মানুষের হক আদায়ের প্রতি

সর্বদা যত্নবান থাকি। অতএব আমাদের উচিত নামাজের মাধ্যমে মসজিদসমূহ আবাদ করা, কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কুরআনকে সঞ্জীবিত রাখা এবং উলামায়ে কিরামের অনুগত থাকা, পুণ্যবতী স্ত্রীর প্রতি পুণ্যাচরণ করা, পুণ্যবান স্বামীর যথার্থ সেবাযত্ন করা ও রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করা। এই সমস্ত সৎকাজের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তায়ালার অসীম রহমত ও অশেষ করুণা লাভ করতে পারি।

প্রিয় পাঠক, প্রথমত, কিয়ামতের চিন্তাটা আমাদের হৃদয়ে প্রোথিত রাখতে হবে। রাসূলের যুগে মানুষেরা কেমন এ বিষয়ে চিন্তা-ফিকীর করতেন তার একটি রেফারেন্স দেখুন। নাদর বর্ণনা করেছেন, হজরত আনাস (রা.)-এর জীবনকালে একবার কাল-ঝড় আসে। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি হে আবু হামজা! এ রকম ঝড় কি রাসূল (সা.)-এর সময়েও আসতো? তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র পানাহ, রাসূল (সা.)-এর যুগে যদি সামান্য জোরে হাওয়া বইতে শুরু করতো, তখন আমরা কিয়ামত এসে যায়নি তো- এ মনে করে মসজিদের দিকে দৌড়াতে থাকতাম। এই হাদীস আবু দাউদে লিখিত হয়েছে।

মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে মুসলীম শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, উবাই ইবনে কা'ব (রা.) বর্ণনা করেছেন, আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তির ঘর নবী করীম (সা.)-এর মসজিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল, কিন্তু তিনি প্রতি ওয়াক্তে নবী করীম (সা.)-এর মসজিদে এসে নামাজ পড়তেন, কোনো নামাজ না পড়ে ছাড়তেন না। কোনো এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, গরমের সময় এবং রাতে মসজিদে আসার জন্য একটি খচ্চর কেন কিনছেন না? তিনি উত্তর দেন, আমি মসজিদের কাছে ঘর পছন্দ করি না। কারণ আমি চাই, আমি পায়ে হেটে মসজিদে যাই আর যাওয়া আসায় যত পদক্ষেপ গ্রহণ করি তা আমার আমলনামায় লেখা হোক। রাসূল (সা.) এ কথা শুনে বলেন, ওর প্রত্যেক পদক্ষেপের সওয়াব আল্লাহ্‌ তাকে দেবেন। (মুসলীম)

সুন্নাতের আনুগত্য তথা নবীর আনুগত্য বিষয়ে এখানে একটি নজীর লক্ষ্য করুন। জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, মক্কা বিজয়ের বছর রমজান মাসে রাসূল (সা.) মক্কার পথে রওনা হন এবং কুরাউল গুমায়ম নামক স্থানে উপস্থিত হন। নবী করিম (সা.)এবং মুজাহিদগণ রোজা রেখেছিলেন। যখন তাঁরা উক্ত স্থানে উপস্থিত হন তখন রাসূল (সা.) এক পেয়ালা পানি আনতে বলেন। তিনি সেটাকে উঁচু করেন যেন সমস্ত লোক তা দেখতে পায়। তারপর তিনি ওই পানি পান করেন (রোজা ভেঙে ফেলেন। কারণ তিনি মুসাফির ছিলেন।) পরে তাঁকে জানানো হয় যে, কিছু কিছু লোক রোজা রেখেছেন, ভাঙেনি। তখন তিনি বলেন, এ সব লোক অবাধ্য। (মুসলিম)। এ হাদীস থেকে দেখা যায়, আসল জিনিস হচ্ছে রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করা। সুন্নাত থেকে বিচ্যুত হয়ে কেউ যতই ইবাদত করুক না কেন তার কোনো গুরুত্ব আল্লাহ্‌র কাছে নেই।

এবার জুলুমের বিষয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করা যাক। জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.)বলেছেন : অত্যাচার করা থেকে ক্ষান্ত থাকো, কারণ কিয়ামতের দিন অত্যাচার অত্যাচারীর জন্যে অন্ধকারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর শুহ্‌হ থেকে বাঁচো, কারণ এ জিনিস তোমার পূর্বের মানুষকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষকে লড়াই ও রক্তপাতের জন্যে অনুপ্রাণিত করছে। জীবন, সম্পদ ও ইজ্জ্বত বিনষ্ট করেছে এবং অন্যান্য গুনাহ্‌র কারণ হয়েছে।(মুসলিম)

আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন, আমীন।

লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও পিএইচডি গবেষক

লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও পিএইচডি গবেষক
লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও পিএইচডি গবেষক
লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও পিএইচডি গবেষক

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর