thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘হাসিমুখে চেয়ে আছে সুচিত্রা’

২০১৪ জানুয়ারি ১৭ ১৬:০৬:৫১
‘হাসিমুখে চেয়ে আছে সুচিত্রা’

মোস্তাক চৌধুরী, দ্য রিপোর্ট : ‘দেয়ালে টাঙ্গানো হাসিমুখে চেয়ে আছে সুচিত্রা সেন/তারই পাশে আমার ছবি যেন নির্বাক প্রেম/জানি হিসেবে এ সবই বেমানান/তবু একাকী ঘরে আমার/সবই যে বন্ধু সবই যে আমার প্রাণ…’

সুচিত্রা প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিতের এই গান অনেকেরই মনের কথা। যদি বলি সুচিত্রা অনেক পুরুষের প্রথম প্রেম বোধ করি ভুল হবে না। এখনও তার কথা মনে হলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাদাকালো ফ্রেমের সেই মিষ্টি হাসির সুচিত্রা। রুপালি পর্দায় তার হাসি মুখ, মনে হতে পারে তার অভিনয়ের অংশ। কিন্তু তা নয়, ওই বিখ্যাত হাসি তার সহজাত। এই হাসি প্রসঙ্গে সুচিত্রা বলেছেন, ‘বিশ্বাস কর, আমি চেষ্টা করে এ হাসি আয়ত্ত করিনি। এ হাসি আমার জন্ম থেকেই’ (‘সুচিত্রার কথা’-গোপালকৃষ্ণ রায়)। ভাগ্যিস সুচিত্রা এই হাসি পেয়েছিল। তা না হলে…।

ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত ২৩ ডিসেম্বর কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অসুস্থ সুচিত্রা সেন। অবশেষে শুক্রবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে তার জীবনাবসান হয়। তার চলে যাওয়াতে শেষ হয়ে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো অধ্যায়।

বাংলাদেশের পাবনায় ১৯২৯ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে মেয়ে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত আদর করে নাম রাখেন রমা। পুরো নাম রমা দাস গুপ্ত। দেশ ভাগ হলে রমাকে তার পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমাতে হয় কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসেন। নাম হয়ে যায় রমা সেন গুপ্ত। তখনকার বিখ্যাত নির্মাতা বিমল রায় ছিলেন রমার মামা শ্বশুর। তিনি রমা সেন গুপ্তকে বানিয়ে তোলেন সুচিত্রা সেন।

সুচিত্রা ১৯৭৮ সালে অভিনয়ের পর হটাৎই যেন হারিয়ে যান ছবির পর্দা থেকে। এর কোনো সঠিক উত্তর না পাওয়া গেলেও একবার কলকাতার এক বহুল প্রকাশিত দৈনিকে প্রকাশ করা হয় সুচিত্রা চান না তার বয়সের এই বিকৃত চেহারা তার ভক্তরা দেখুক। তিনি চান তার ভক্তরা সেই হাস্যোজ্জ্বল সুচিত্রাকেই মনে রাখুক।

তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা অনেকেই মনে করেন উত্তমের চলে যাওয়াই হয়ত সুচিত্রার স্বেচ্ছা নির্বাসনের কারণ। এক সঙ্গে বহু সিনেমা করার পর ছবির জগৎ এবং পৃথিবী থেকে উত্তমের চলে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি তিনি। ধারণা করা হয় তাদের মধ্যে খুব নিবিড় রসায়ন ছিল।

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই উত্তম কুমার মারা যান। মহানায়কের এই অকালমৃত্যু সুচিত্রার কাছে বেদনাদায়ক। এ দিনটিই ছিল সুচিত্রার শেষ জনসম্মুখে আসা। তারপর আড়ালে চলে যান। পর্দার বুক থেকে সুচিত্রা হারিয়ে হয়ে যান ঘরোয়া রমা। তাই প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েই যে সুচিত্রার নির্বাসনে যাওয়া এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

বাংলা কেন, যে কোনো দেশের চলচ্চিত্রে অমন জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি খুব কমই আছে। উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক জুটি শুধু ছবিকে দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে না, দর্শক হৃদয় অজ্ঞাতসারেই রোমাঞ্চিত হয়। তাদের অভিনয়ের গুণেই হোক অথবা রোমান্সের জন্যেই হোক, যে ছবিতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি সে ছবি ফ্লপ করার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না বললেই চলে।

মনের পান্ডুলিপি পড়া যায় না। অনেক সময় স্পর্শে গেলেও সম্ভব নয়। তার পাঠোদ্ধার করার মতো বিশেষ কোনো যন্ত্রও আবিষ্কার হয়নি। সুচিত্রারও মনের কথা জানা যায়নি। কেন তার এই অভিমান। কিসের জন্য, কার ওপর? কেনই বা নির্বাসনে যাওয়া? সুচিত্রার অভিনয়ের জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসি-কান্না আর মান-অভিমানের দীর্ঘ কাহিনী তার মনের পাতায় অপঠিত পাণ্ডুলিপি হয়েই থাকবে। আমরা তা কোনো দিন পড়তে পারব না। হয়ত সুচিত্রাও মনে-প্রাণে তাই চাইতেন। তার এই চাওয়াকে ভক্ত শ্রোতারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

সুচিত্রার প্রেমিকদের কাছে তার যৌবন এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আর কখনও ফুরাবে না। কারণ যৌবন নিয়েই তার বিদায়। রূপসী সুচিত্রা, সেই মিষ্টি হাসি সাদাকালো ফ্রেমে দেয়ালে টাঙ্গানো থাকবে।

হলিউডের প্রখ্যাত পরিচালক বিলি ওয়াইল্ডার ‘রোমান হলিডে’র নায়িকা অড্রে হেপবার্ন সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘বিধাতা ওকে সৃষ্টি করে ওর কপালে চুম্বন করেছিলেন।’ এই মন্তব্য রূপসী সুচিত্রারও প্রাপ্য।

(দ্য রিপোর্ট/এমসি/এএল/আরকে/জানুয়ারি ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর