thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

অস্তিত্ব সংকটে হেফাজত

২০১৪ জানুয়ারি ১৮ ২০:৪৯:০৫
অস্তিত্ব সংকটে হেফাজত

অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসা ও ঢাকার ২-৩টি মাদরাসার বাইরে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। একাধিকবার ঢাকায় মহাসমাবেশ ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েও পিছু হটে হেফাজত। চলতি মাসে জেলায় জেলায় শানে রেসালাহ সম্মেলন কর্মসূচি দিয়েও প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় তা পালন করতে পারছে না সংগঠনটি।

গত ৫ মে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ও বহু মানুষ হতাহতের ঘটনার পর থেকে সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দূরত্বও তৈরি হয় বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ সংগঠনটিতে। ফলে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারছেন না হেফাজত নেতারা।

তবে নেতারা বলছেন, ‘হেফাজত একটি দ্বীনি আন্দোলন, আমাদের মধ্যে কোনো সংকট নেই। সরকার হেফাজতের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই আগামী দিনের কর্মসূচি ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

গত বছরের ৬ এপ্রিল ও ৫ মে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় দেশে-বিদেশে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। এরপর থেকেই নানা সংকটে পড়ে আলোচিত-সমালোচিত হয় এ সংগঠনটি।

৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে অনেক মানুষ হতাহত হয়। এ ঘটনার পর হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলা করা হয় হেফাজতের শীর্ষ অনেক নেতার নামে। এখনও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মুফতি মো. ওয়াক্কাস কারাগারে রয়েছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন অনেক নেতা।

মূলত ৫ মের পর থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা কেন্দ্রিক কিছু কর্মসূচি পালন ছাড়া সারাদেশে তাদের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতে কামরাঙ্গীরচর ও বারিধারা জামিয়া মাদানিয়া মাদরাসা কেন্দ্রিক সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ ও দোয়া মাহফিল ছাড়া আর কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারেনি তারা। গত ১৫ নভেম্বর হাঁকডাক নিয়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েও পরে কর্মসূচি স্থগিত করে হেফাজত। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্বরে আবারও মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। তবে প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় আগের দিন ২৩ ডিসেম্বর কর্মসূচি থেকে সরে আসেন নেতারা।

হেফাজতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত আগের মতো শক্ত অবস্থান নেই হেফাজতের। এ ছাড়া সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেও এগুতে পারছে না সংগঠনটি। জোর করে কর্মসূচি পালন করার মতো অবস্থাও নেই, পুলিশ সরাসরি গুলি করে।

জানা যায়, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস (ইসহাক), নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশসহ ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে হেফাজতের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে। এ সব ইসলামী দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব চলছে অনেক দিন ধরেই।

সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামকে অরাজনৈতিক ও দ্বীনি সংগঠন হিসেবে দাবি করা হলেও এর অধিকাংশ নেতাকর্মীই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। সংগঠনটিতে নিজেদের আধিপত্য বা নিজ নিজ নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করা নিয়েই দ্বন্দ্ব ও সংকট তৈরি হয়েছে।

এ অবস্থায় সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে হেফাজতে ইসলাম থেকে দূরে থাকতে বলেছে। সব মিলিয়ে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

তবে হেফাজতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব বা সংকট নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরী আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘সামনে বিশ্ব ইজতেমা। এ ছাড়া নতুন সরকার গঠিত হল। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রীয় নেতারা বসে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হেফাজত একটি দ্বীনি সংগঠন। আমাদের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক সংগঠন আছে। তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু হেফাজতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নেই।’

হেফাজত অস্তিত্ব সংকটে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশে-বিদেশে আমাদের গণভিত্তি রয়েছে। তাই কোনো ধরনের সংকট আমাদের নেই। জানুয়ারি মাস জুড়ে জেলায় জেলায় শানে রেসালাহ সম্মেলন হচ্ছে। এ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর হুজুর (আল্লামা আহমদ শফী) কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বসে পরবর্তী কর্মসূচি দেবেন।’

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা জাফরুল্লাহ হেফাজতে ইসলাম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘জেলায় জেলায় আমাদের পূর্বঘোষিত শানে রেসালাহ সম্মেলন রয়েছে। সরকার এ সম্মেলন করার অনুমতি দিচ্ছে না। জোর করে তো আর করা যায় না। করলে পুলিশ গুলি করবে, জীবন দিতে হবে। নতুন সরকার এসেছে, তাদের অবস্থা(কার্যক্রম) পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে আমরা কর্মসূচিতে যাব।’

সরকার হেফাজতের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার বাধা দিলে তাদেরই ক্ষতি। আমরা তো কোনো পলিটিক্যাল পার্টি নই। আমরা দ্বীনের কথা বলব।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে হেফাজত থেকে দূরে থাকতে বলেছে এ ব্যাপারে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের এ ব্যাপারে নাক গলানো উচিত নয়। এ ছাড়া বিএনপি তো কোনো সময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল না। আমরা অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম।’

২০১০ সালের ২০ মার্চ নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে চট্টগ্রামের হাটাহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী সংগঠনটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর