thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল 24, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ২১ শাওয়াল 1445

‘আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন’

২০১৪ জানুয়ারি ২০ ২০:২৫:১৩
‘আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দশম জাতীয় সংসদের ৫ জানুয়ারি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় জনগণকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি সরকারের প্রতি অবিলম্বে ক্ষমতা ত্যাগ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) যদি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন তা হলে হত্যা নির্যাতন বন্ধ করেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জনগণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।’

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ৫জানুয়ারিপ্রহসনেরএকতরফানির্বাচনবর্জনকরায়দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো উপলক্ষে গণসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। সমাবেশে ১৮ দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত থাকলেও অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতাকে দেখা যায়নি।

বর্তমান সরকারকে অবৈধ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে দিয়েছে জনগণ কাদের সঙ্গে আছে। ৫ জানুয়ারি সরকার যে অবৈধ প্রহসনের নির্বাচন করেছে দেশের জনগণ তা বর্জন করেছে, প্রত্যাখ্যান করেছে। সে জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতেই আজকের এইসমাবেশ। আমি তাদেরআন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাজানাই।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আছে জনগণের সমর্থনে নয়, অস্ত্রের জোরে। বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ ও চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেখেন, কেন্দ্রে জনগণ কোথায়? এখানে কোন ভোটার নেই। কেন্দ্রে কুকুর বসে আছে। কুকুরটিরও দুঃখ হচ্ছে, আমার যদি হাত থাকতো তা হলে আমি ভোট দিতাম। তিনিবলেন, ‘এরা ভোটকেও কলঙ্কিত করেছে। এটা হলো কলঙ্কিত সরকার। অবিলম্বে কলঙ্কিত ভোট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণের ভোট ছাড়াই ১৫৩ জনকে এরা নির্বাচিত করেছে। বাকিদের ৫ ভাগেরও কম লোক ভোট দিয়েছে। এখন সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দেশময় সন্ত্রাস ও হত্যা-ভীতি চালু করেছে যৌথবাহিনী ও পুলিশকে ব্যাবহার করে। তারা বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে। অবিলম্বে এই নির্যাতন-হত্যা বন্ধ করুন। যৌথবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করুন। তা নাহলেএ সবহত্যা-নির্যাতনের জবাব দিতে হবে।

‘সরকারসবচেয়েবেশিভয়পায়দেশেরজনগণকে’ উল্লেখকরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫ বছরে এরা দেশকে লুটপাট করেছে। হলমার্ক, সোনালী ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। দেশের বাইরে পাচার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি দিয়েছিলাম। জাতীয় পতাকা হাতে ওই কর্মসূচি দেশেপ্রেমের অংশ ছিল। অথচ সরকার ভয় পেয়ে বাধা দেয়। সারাদেশ অবরুদ্ধ করে রাখে। আমাকে দুদিন আগেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়।’

‘জনগণকেকেনএতভয়’প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অনাস্থা দিয়েছে, তারা নাকি সরকার? কিসেরসরকার? দেশের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। মানুষ উন্নয়ন চায়, কাজ চায়, শান্তি চায়, তাদের সাংবিধানিক অধিকার চায়, তারা এই দুর্বল ও অবৈধ সরকার চায় না। যতই চেষ্টা ও কারসাজি করেন কোন দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দলীয় সরকার দেশের জনগণ গ্রহণ করেছিল। আমরা বলেছি, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দাবি প্রমাণ হয়েছে। কেন সংবিধান পরির্বতন করেছেন? আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান করেছেন। আবারবলছেন, সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বেন না। অনেক নড়েছেন। এক চুল নয়, বহু চুল নড়েছেন। সংবিধানকে অনেক কাটা-ছেঁড়া করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন থেকে দেশের জনগণ ও বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সরকার আমাদের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আজ পর্যন্ত একজনও হামলাকারী-দুষ্কৃতকারীকে ধরেননি। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার দায়-দায়িত্ব সরকারের।জন্যতাদেরঅবশ্যইজবাবদিতেহবে।’

তিনি বলেন, যৌথবাহিনীর নামে হামলা-নির্যাতন, হত্যা বন্ধ করেন, তা না হলে প্রতিটি হত্যার জবাব দিতে হবে। সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর নামে যে অভিযান চালানো হচ্ছে তারা আদৌ যৌথবাহিনী কিনা তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এখনও আছে? নাকি আপনারা তা বিকিয়ে দিয়েছেন? আপনাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ আছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা স্বাধীনতা হারাতে বসেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের দায়িত্ব আছে। দেশের তরুণ-যুবক-ছাত্র সমাজের প্রতি আন্দোলনে ঝাঁপিয়েপড়ারআহ্বান জানাই।’

বিদেশীরা এ নির্বাচন গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে জনগণের সরকার গঠন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদেশীরা কোন সাহয্য করবে না। তারা জনগণের গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার দেখতে চায়। এই অবৈধ সরকারকে নয়। অবিলম্বে ক্ষমতা ত্যাগ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

নির্বাচননিয়েসাবেকস্বৈরাচারএরশাদেরঅনেকনাটক দেখেছি মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৮৬ সালে আমরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্বৈরাচারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবো না। চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানের জনসভায় হাসিনা বলেছিল- ‘যারা স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। ঢাকায় ফিরে হাসিনা এরশাদের সঙ্গে তলে তলে আঁতাত করে নির্বাচনে গিয়েছিল। হাসিনা স্বঘোষিত বেঈমান। স্বঘোষিত বেঈমান কোন দিন দেশপ্রেমিক হতে পারে না। জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। দুই স্বৈরাচার এক হয়ে আজ দেশকে গিলতে বসেছে।’

‘হাসিনাবলেআমিকারওকথায়ধারধারিনা’উল্লেখকরেখালেদাজিয়াবলেন, ‘আমরা কিন্তু জনগণের কথায় ধার ধারি। আমরা এও জানি, কোথা থেকে টেলিফোন আসলে তার (শেখহাসিনা) সিদ্ধান্ত বদলেযায়,স্যালুটদিয়েবসেন।’

নির্বাচনকমিশনেরওপরদেশেরজনগণেরকোনআস্থানেইদাবিকরেতিনিবলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন নির্লজ্জ-বেহায়া ও মেরুদণ্ডহীন, সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের দিয়ে কোন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকার যা নির্দেশ দেয় এরা তাই বাস্তবায়ন করে। ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোট পড়লেও এই কমিশন তিন দিন সময় নিয়ে ভোটকে ৪০ ভাগ বলেছে।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি আইন-শৃঙ্খলার বিরূপ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। জঙ্গীবাদ নির্মূলহবে। জনগণ স্বস্তি পাবে।’

(দ্য রির্পোট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/এনআই/জানুয়ারি ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর