thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

কৌশলী বিএনপি

২০১৪ জানুয়ারি ২২ ১৭:৪৭:৫৪
কৌশলী বিএনপি

মাহমুদুল হাসান ও কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করতে কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছে বিএনপি। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, ১৮ দলের বাইরে থাকা বিকল্প ধারা, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলকে জোটে সম্পৃক্ত করে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে দলটি।

এ ক্ষেত্রে সরকারের সংলাপের শর্ত পূরণ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শ অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীসহ হেফাজতে ইসলামভুক্ত জোটের শরিক খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে কৌশলগত কারণে দূরে রাখছে বিএনপি। বিএনপি সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতারভিত্তিতেই এমন কৌশলী ভূমিকায় নেমেছে দলটি। ১৮ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে এ সব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে বসতে জামায়াতকে ছাড়ার শর্তজুড়ে দেন। একই সঙ্গে গত ১৬ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট এক প্রস্তাবে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানায়।

বিএনপি সূত্র জানায়, সরকার সংলাপের জন্য জামায়াতকে ছাড়ার শর্ত দিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। জামায়াত ইস্যুকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় থাকায় সরকারের বাইরে থাকা দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেতে জামায়াতকে দূরে রাখার শর্ত দিয়ে আসছে অনেক দিন থেকেই।

এ অবস্থায় কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি। তারা সরকার ও বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে জামায়াত ও হেফাজতভুক্ত শরিক ইসলামী দল-খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে। বিএনপির নীতি নির্ধারণী একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে। এর অংশ হিসেবেই গত সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির গণসমাবেশে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের রাখা হয়নি।

সূত্র জানায়, ইসলামী দলগুলোকে দূরে রাখা মানে ১৮ দল থেকে বের করে দেওয়া নয়। তাদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই এ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার সকালেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের প্রভাবশালী এক সদস্যের। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন একাধিক নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি সাময়িক, কৌশলগত কারণেই ইসলামী দলগুলোকে আপাতত বিএনপি দূরে রাখছে। এতে জোটে কোনো ফাটল বা সম্পর্ক নষ্ট হবে না। এতে ভুল বোঝাবুঝিরও কিছু নেই।

জোট সূত্র জানায়, সংলাপের জন্য জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ যে খেলা খেলছে এ খেলায় বিএনপি জোট জয়ী হতে চায়। জামায়াত বা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে আলোচনারভিত্তিতে কৌশলগত দূরে রেখে সংলাপে বসতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সরকার কী করে তাই দেখবে তারা। একই সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকেও এ ব্যাপারে ম্যাসেজ দিতে চায়, বিএনপি সংলাপের মাধ্যমে সমাধান চাইলেও সরকার তা চায় না।

অন্যদিকে জোটের বাইরে থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে জোটে সম্পৃক্ত করে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চায় বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপির আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির একাংশের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ।

সরকারের সংলাপের শর্ত পূরণ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের কারণে বিএনপি কৌশল নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ১৮ দলের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসাহাক দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘এটা জানি না। এ ব্যাপারে বিএনপি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এ ব্যাপারে বিএনপিকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন।’

এ ব্যাপারে জোটের আরেক শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা বিদেশি শক্তির চাপে বিএনপি ইসলামী দলগুলোকে দূরে রাখছে বলে মনে করছি না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে জামায়াতকে না রাখার হয়ত শর্ত দিয়েছিল, এ জন্য জোটের ব্যানারে না করে বিএনপির ব্যানারে সমাবেশ করেছে।’

সংলাপের শর্ত পূরণে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গ ছাড়া সরকারের এমন শর্ত পূরণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের কারণে বিএনপি কৌশলী ভূমিকায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা জানি না। তবে বিএনপি যদি জাতীয় ও জনগণের স্বার্থে করে তা হতে পারে। কারণ আমরাও চাই দেশ শান্তিতে থাকুক, জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরে আসুক। সবাই আওয়ামী দুঃশাসন থেকে বাঁচতে চায়, এ জন্য বাকশালী আওয়ামী লীগের পতনের কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য যদি কোনো কৌশলী ভূমিকা নেয় বিএনপি তা নিতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে এতে আমার সমর্থন থাকবে।’

তবে এ ব্যাপারে জমিয়তের সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান শাহীনুর পাশা।

এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতার মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

১৮ দল থেকে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো কেন যোগ দেয়নি জানতে চাইলে জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘তারা কেন যোগ দেয়নি তা বলতে পারব না। হয়ত সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো কিছু থাকতে পারে।’

ইসলামী দলগুলোকে বাদ দিয়ে গণসমাবেশ বিএনপির কোনো কৌশল কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এটা বিএনপির সমাবেশ ছিল। জামায়াতে ইসলামী বা অন্যান্য ইসলামী দল কেন আসেনি তা জানা নেই। ১৮ দলের অন্যান্য শরিকরা তো এসেছিলেন।’

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এমইচ/এইচএসএম/আরকে/সা/জানুয়ারি ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর