thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

ফিরছে পাটের সুদিন

২০১৪ জানুয়ারি ২৩ ০০:১৩:১৪
ফিরছে পাটের সুদিন

মতিনুজ্জামান মিটু, দ্য রিপোর্ট : কৃত্রিম আঁশের প্রতি মোহ কেটে যাওয়ায় বিশ্বে পাটের অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে শুরু করেছে। আমেরিকা ও ইউরোপসহ উন্নত অনেক দেশে মোটর গাড়ির কুশন ও অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশনে কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এর আলোকে ইতোমধ্যে টয়োটা, মিটসুবিসি ও জিএম মোটর্সসহ মোটর গাড়ি কোম্পানিগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা গাড়িতে পাটের আঁশ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে গাড়ি প্রতি ২০ কেজি করে পাটের আঁশ ব্যবহার করতে হবে কোম্পানিগুলোকে। তাই ইতোমধ্যেই ওই ৩টি কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বলে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) সূত্রে জানা গেছে।

সমঝোতা স্মারক কার্যকরের অব্যাহত প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে বিজিআরআই-এর পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মুজিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি হওয়ায় কৃত্রিম তন্তুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে বিশ্ব।

তিনি জানান, পাট জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে। পাট তথা প্রাকৃতিক তন্তু কীভাবে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সমৃদ্ধ করে তা ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্ব অনুধাবন করেছে।

তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টর পাট গাছ তার জীবনচক্রে ৬ দশমিক ৫ টনের অধিক ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাস থেকে শোষণ করে। একই সঙ্গে সমপরিমাণ জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয়। আর এতে বাতাস জীববৈচিত্র্য রক্ষার উপযোগী হয়ে ওঠে।’

ড. রহমান গবেষণার ফলের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, ‘দেখা গেছে পাট গাছের পাতা মাটিতে পড়ে ও পচে জৈবসারে পরিণত হয়। প্রতি হেক্টর পাট গাছের পচা পাতা ও শিকড় বছরে ৮ টন জৈবসার জোগান দেয়। একই সঙ্গে পাট তুলনামূলকভাবে লম্বা মূলের ফসল হওয়ায় মাটির গভীর থেকে খাবার সংগ্রহ করে। ফলে মাটির উপরিভাগের খাবার পরবর্তী ফসলের জন্য সংরক্ষিত থাকে।’

তিনি জানান, পাট চাষ হয়েছে এমন জমিতে পরবর্তী ফসলের জন্য রাসায়নিক সার কম ব্যবহার হতে দেখা গেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সার ব্যবহার না করেই ওই জমি থেকে কাঙ্ক্ষিত ফসলের ফলন পাওয়া গেছে। তাই এ কথা এখন জোর দিয়েই বলা যায়, পাট চাষ অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহারজনিত পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতেও অনেকখানি সক্ষম।

পাটবীজ উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্রের মাঠ সহকারী মমতাজ উদ্দিন আহমদ সেলফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, পাটের তৈরি দ্রব্য ব্যবহারের পর ফেলে দিলে তা মাটির সঙ্গে মিশে পচে জৈব পদার্থে পরিণত হয়।

বিজ্ঞানী, কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি। তাই দীর্ঘকাল ধরে উপকূলীয় এ বিশাল অঞ্চলজুড়ে বছরে মাত্র একবার রোপা আমন ধান চাষ হয়। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল রোপা আমন ধানের মৌসুম শেষ হলে বছরের বাকি সময় ওই বিশাল ভূখণ্ড অনাবাদিই পড়ে থাকে।

বিএআরসি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (বন) ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘ওই জমিতে পাট বা সমগোত্রীয় আঁশ জাতীয় ফসলের কিছু চিহ্নিত জাত আবাদ করা যাবে। এ সব জাতের পাট মাটির ৮ (মিলিমোস) মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। পাটের জীবন রহস্য (জেনেটিক্যাল কোডিং) আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাট ও আঁশ জাতীয় সমগোত্রীয় এসব ফসল উদ্ভাবন করা সম্ভব। ওই সব জাত আরও অধিক লবণাক্ততায় উৎপাদন করা যাবে।’

বিজেআরআই’র ফরিদপুর আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাহিদ আল রফিক জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে পাট চাষ করা সম্ভব হলে আর্থিক দিক দিয়ে লাভের পাশাপাশি ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যায় মানুষ, পশু ও পাখির জীবন রক্ষায় সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কেননা ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি সংঘটিত হওয়ার সময়টাই উপকূলে পাট ও সমগোত্রীয় আঁশ জাতীয় ফসল উৎপাদনের উপযুক্ত সময়।

কিছু কিছু পাট ও কেনাফ জাতের গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ জাতগুলোর লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে আবাদ করা গেলে কৃষক তথা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। একই সঙ্গে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মানুষ এবং জীব জন্তুর জীবন রক্ষায় পাট ও সমগোত্রীয় আঁশ জাতীয় ফসল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও গবেষকবৃন্দ মনে করেন।

ড. মো. মুজিবুর রহমান, ড. মো. শাহজাহান, জাহিদ আল রফিক ও মমতাজ উদ্দিন আহমদ অভিন্ন সুরে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এমন একটি সময় ছিল যখন উৎপাদন ও ব্যবসায় আর্থিক লাভসহ পাট সামাজিক মর্যাদার ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করত। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও পাটের একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল। বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক তন্তু তথা পাটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবারও পাটের সেই সুদিন ফিরে আসতে যাচ্ছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এম/এআইএম/এনডিএস/এনআই/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর