thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে 24, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১৩ জিলকদ  1445

জামালপুরে সীমান্তের মানুষ হাতি আতঙ্কে

২০১৪ জানুয়ারি ২৩ ০৫:২২:২৭
জামালপুরে সীমান্তের মানুষ হাতি আতঙ্কে

জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের সীমান্তঘেঁষা দুই উপজেলা বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জের হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ভারতীয় বন্যহাতির আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যহাতির দল বছরের পর বছর মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্তঘেঁষা সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, টিলাপাড়া, লাউচাপড়া, ডুমুরতলা, দিগলকোনা, হাতিবেড়কোনা, শোকনাথপাড়া, কনেকান্দি, চন্দ্রপাড়া, মাখনেচরসহ প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামে মুসলমান, গারো, হাজং, কোচ, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করছেন।

এসব গ্রামে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশাল ভূখণ্ড ও বনভূমি। তবে বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চলে রয়েছে অগণিত বন্যহাতি। হাতি দলবেঁধে সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও খাবার খেতে সহজ মনে করে। তাই সময়-অসময়ে বন্যহাতির পাল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সমভূমি, বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরতদের বাড়িঘর, ফসলাদি, জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালিয়ে ফিরে যায়।

জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাংধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডল দ্য রিপোর্টকে জানান, ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার শেষরাত পর্যন্ত সীমান্ত অতিক্রম করে বন্যহাতির একটি দল মাখনেরচর গ্রামের জনবসতির ওপর চড়াও হয়। এ সময় হাতির দল ওই গ্রামের জাহিদুল, বিল্লাল, সাইদুর, আনোয়ার হোসেন, জহুরুল ইসলাম ও শফিকুলের ১৩টি ঘর গুঁড়িয়ে দেয়। বন্যহাতির দল ওই গ্রামের বাসিন্দা নূরুজ্জামানের একটি বরই ও পামগাছের বাগানের ক্ষতিসাধন করে। হাতির হামলায় সাইদুরের বেশ কয়েকটি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি মারা যায়। এ ছাড়াও হাতি গোলার ধান খেয়ে ফেলে এবং সবজি ও গমক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

হাতির আক্রমণে বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন, বাবুল মিয়া, খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের স্টারসন, ঝুলগাঁও গ্রামের মজিবর, সিরাজ, হাতিবর গ্রামরে বৃন্দাবন দাস, মাখনেরচর গ্রামের হাসান হাবিব, বাঘারচর গ্রামের আবু তালেবসহ অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ পরিবার।

ঝুলগাঁও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান, ফিলিপ মারাকসহ অনেক গ্রামবাসী দ্য রিপোর্টকে জানান, বন্যহাতি ঢাকঢোল, ফটকা ও আগুনকে ভয় পায়। তাই তারা মশাল ও আবর্জনা জ্বালিয়ে হই-হুল্লোড় করে বাঁশ দিয়ে ফটকা বানিয়ে ও ঢাকঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গী। এর ওপর প্রায়ই বন্যহাতির আক্রমণ দিশেহারা করে দিয়েছে তাদের। হাতির আতঙ্কে অনেক জমি পতিত রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষ হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এএস/শাহ/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর