thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

মালয়েশিয়ায় অবৈধদের সঙ্গে বৈধরাও হয়রানির শিকার!

২০১৪ জানুয়ারি ২৩ ২০:৩৩:০০
মালয়েশিয়ায় অবৈধদের সঙ্গে বৈধরাও হয়রানির শিকার!

কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার। গত সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে প্রায় দুই হাজার অবৈধ শ্রমিক আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় তিনশ। অভিযানে অবৈধ শ্রমিকদের পাশাপাশি বৈধ ভিসাধারীরাও বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অবৈধ থেকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তারা তা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার।

জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি শ্রমবাজার। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশি সে দেশে বৈধভাবে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া অন্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন সে দেশে। তবে বৈধদের পাশাপাশি অবৈধভাবেও রয়েছেন বিপুল পরিমাণ বিদেশি।

এ সব অবৈধ শ্রমিক বা অভিবাসীদের বৈধতা দিতে গত বছর (২০১৩) দুই দফায় সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। প্রথম দফায় প্রায় দুই লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ভিসা বৈধ করে নেন। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর থেকে ২১ জানুয়ারি পযন্ত তিন মাসে বৈধতা নেওয়ার জন্য অভিবাসীদের সুযোগ দেয় সে দেশের সরকার। এ সুযোগ নিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধতা পায়।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রয়াত্ত বার্তা সংস্থা বারনামার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হতে বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময় শেষ হওয়ার পর গত সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ সারাদেশে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশটির অভিবাসন বিভাগ, পুলিশ ও পিপলস ভলান্টিয়ার কর্পসের (রেলা) সদস্যরা এই অভিযান চালাচ্ছে। প্রথমদিনেই দেড় হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী আটক করে তারা। এদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ২৫৫ জন। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার ৬৯৫ জন, মিয়ানমারের ১৫৭ জনসহ বাকিরা ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, চীন, নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিক। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানে প্রায় দুই হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে সে দেশের প্রশাসন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় তিনশ বলে জানা গেছে।

আটকের বিষয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদী সে দেশের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সাতদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা যার যার দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হবে।’

যাতে আর কখনো মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন এ জন্য আটক বিদেশিদের তথ্য ইতোমধ্যে বায়োমেট্রিক তথ্যভাণ্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।

মালয়েশিয়া প্রবাসী ভোলার বোরহান উদ্দিনের বাসিন্দা রকিব উদ্দিন জানান, ‘গত ২১ জানুয়ারির রাত থেকে খুব ভয়াবহ অবস্থা যাচ্ছে। শুধু অবৈধ শ্রমিকদের নয়, বৈধ শ্রমিকদেরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে নানাভাবে। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা বা কর্মক্ষেত্রে থেকে অবৈধ শ্রমকিদের সঙ্গে বৈধ শ্রমিকদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে কাগজপত্র দেখে যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দিচ্ছে।’

মালয়েশিয়ার মালাকা শহরে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরিরত রকিব প্রায় ৭ বছর ধরে প্রবাসী জীবনযাপন করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বৈধ, আমার ভিসা বৈধ, কিন্তু আমার পরিচিত অনেকেই রয়েছেন যারা অবৈধ। প্রায় প্রতিটি প্রজেক্টেই কোনো না কোনো অবৈধ শ্রমিক রয়েছেন।’

বৈধতার সুযোগ পেয়েও কেন তারা বৈধতা নিল না এমন প্রশ্নে রকিব বলেন, ‘বৈধ কাগজপত্র করতে ৬ হাজার রিঙ্গিট (বাংলাদেশি টাকায় দেড় লাখ টাকা) লাগে। এত টাকা অনেকের ক্ষেত্রেই যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই অনেকেই বৈধতা নিতে পারেননি।’

মালয়েশিয়ার মালাকা শহরে অবস্থানকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘অনেকে মালয়েশিয়ায় গিয়ে অতিরক্তি টাকার জন্য এজেন্ট ও কর্মস্থল পরিবর্তন করে। অবৈধভাবে কাগজপত্র তৈরি করে। ওই এজেন্ট বা যে কোম্পানিতে চাকরি করার কথা ছিল তারা সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ দেয়। এতে সমস্যার তৈরি হয়।’

এদিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘দুই বছর সময় হাতে পাওয়ার পরও যারা বৈধ হয়নি, তাদের জন্য সরকারই লড়বে না।’

এদের রক্ষা করলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রম বাজার হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে তার আশঙ্কা। হয়রানি ও গ্রেফতার এড়াতে সে দেশে ‘অবৈধভাবে’ অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিজ উদ্যেগে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।

জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গত এক বছরে দুই দফায় তাদের অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি অবৈধ থেকে বৈধতা নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায়ও অনেকে এ সুযোগ নিয়েছেন। যারা এ সুযোগ নেননি তাদের ফিরে আসতেই হবে। সরকার তাদের জন্য কোনো কিছু করবে না।’

কী পরিমাণ বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় আছেন জানতে চাইলে বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, ‘এ ধরনের পরিসংখ্যান জানা নেই। তবে দ্বিতীয় দফায় বৈধ হতে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এদের মধ্যে ৩৫ হাজার শ্রমিক বৈধ হওযার জন্য আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে ৪-৫ হাজার শ্রমিক বৈধতা নিয়েছে। অনেকেই আছেন যারা বাংলাদেশ থেকে ছাত্র ও ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে ওখানে অবৈধ হয়েছেন। নতুন করে আরও গ্রেফতার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম খবর তার জানা নেই।’

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেএম/সা/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর