thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

ছাত্রদলের কমিটি ভাঙার গুঞ্জন!

২০১৪ জানুয়ারি ২৪ ২০:১১:৫৬
ছাত্রদলের কমিটি ভাঙার গুঞ্জন!

আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির অন্যতম ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।

জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় বর্তমান কমিটির প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত বিএনপির হাইকমান্ড। তাই শিগগিরই ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙে আন্দোলনে ন্যূনতম অংশগ্রহণ আছে এমন নেতাদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ছাত্রদলের দ্বিতীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান কমিটি ভেঙে দেওয়ার গুঞ্জন প্রসঙ্গে দ্য রিপোর্টকে বলেন, কমিটি ভাঙার ব্যাপারে কেউ কেউ উদ্দেশ্য নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের শত শত নেতা বর্তমানে কারাগারে আটক। নেতাদের আটক রেখে কমিটি ভাঙার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।

আকরাম আরও বলেন, সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। কমিটি যদি ভাঙতেই হয়, তা হলে আবেদন থাকবে বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকে আন্দোলনে যে সব নেতা ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে মাঠে ছিলেন, তাদের মধ্য থেকেই যেন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। তা হলে ছাত্রদলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হবেন এবং নতুন উদ্যমে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।’

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বর্তমানে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে অভিযোগে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার গুজব উঠেছে সে অভিযোগ আমলে নিলে তো বিএনপিসহ দলের প্রায় সব অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তা কী সম্ভব?’

তিনি বলেন, সব দিক থেকেই আমরা অস্থির সময় পার করছি। এই পরিস্থিতির সার্বিক উত্তরণ ঘটলে শুধু ছাত্রদল নয়, সব সংগঠনের নেতৃত্বেও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ম্যাডাম শুরু করবেন বলে আমি মনে করি।

ছাত্রদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বায়েজীদ আরেফিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর কোনো নেতাই মাঠে নামেনি। আমরা কোনো নেতাকে খুঁজে পাইনি, যারা দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন। দেখাতে পারেননি কেউ তাক লাগানো পারফর্মেন্স, যা দিয়ে নেতা হতে পারেন।’

আরেফিন আরও বলেন, যেখানে মূল দল বিএনপি ও অংগ সংগঠনের বাঘা বাঘা নেতারা আন্দোলনে মাঠে নামেননি, সেখানে মাত্র এক বছরের কিছু বেশি বয়সী জুয়েল-হাবিবের নেতৃত্বে ছাত্রদলের কমিটির দোষ ধরা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক।’

তিনি বলেন, কিছু নির্দিষ্ট কারণে হয়ত কেন্দ্রীয় কমিটি নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় এখনও দিতে পারেনি। কিন্তু তৃণমূলে ছাত্রদলের আন্দোলন পুরোপুরি সফল। এ ছাড়া কমিটি ভেঙে নতুন কাউকে নেতৃত্ব দেওয়া যায়, এমন কোনো নেতাকে আমি বা আমরা খুঁজে পাই না।’

জানা গেছে, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবদলের কমিটির বয়স প্রায় চার বছরের কাছাকাছি। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। একই অবস্থা মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ অন্য সংগঠনগুলোর। বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সংগঠনগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। যা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দলীয় ফোরামে হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করেছে।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ করে ঢাকা শহরে তাদের উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। যদিও ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা ছিল সরব। এমনকি ২৯ ডিসেম্বর আলোচিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা ও কোনো দিকনির্দেশনা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। অনেক আগে মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে কয়েক মাস আগে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও বহুমুখী লবিং তদবিরে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে অনেকটা বিরক্ত হয়ে দলীয় চেয়ারপারসন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখেন।

জানা যায়, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বয়স এক বছরের কিছু বেশি। এর আগে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু-আমিরুল ইসলাম আলীমের কমিটি দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন বছর। পরবর্তী সময়ে বিগত মহাজোট সরকারের শেষ বছরে আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, ওবায়দুল হক নাসিরকে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রাজীব আহসানকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে খালেদা জিয়া পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুদল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন টিপুসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই বর্তমানে কারাগারে। এর মধ্যে জুয়েল ৩৬ মামলার আসামি। হাবিবের মামলা সংখ্যা ৩৪। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পুলিশ এখন পর্যন্ত জুয়েলকে রিমান্ডে নিয়েছে ৩১ দিন। হাবিবকে ২৯ দিন। এ ছাড়া জুয়েলের গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। কিন্তু আবেদও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন আরেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তাকে বেশ কিছুদিন পর গত ২০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির গণসমাবেশে দেখা যায়। এর আগেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গ্রেফতার হন আরেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন টিপু।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, সংগঠনের কমিটি ১০১ সদস্যের হওয়ার কথা থাকলেও সবাইকে সমন্বয় করতে গিয়ে বর্তমান কমিটির পরিধি হয়েছে ২৯১ জনের। কিন্তু শেষ সময়ে সরকারের দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার আতঙ্কে নির্দিষ্ট কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া বাকি কেউ মাঠে নামেননি।

নতুন কমিটির প্রচারণা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করা হলে অধিকাংশ নেতারই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মনিরুজ্জামান রেজিন এ বিষয়ে বলেন, সব কিছুই আমাদের চেয়ারপারসনের এখতিয়ার। কিন্তু এই কয় মাসে রাজপথের আন্দোলনে এমন কারও নাম আমার মনে পড়ছে না, যিনি পরবর্তী সময়ে নেতা হতে পারেন। হরতাল অবরোধে মাঠে না নামলেও ভালো সময়ে যে কেউ দুই-চার শ‘ নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করতে পারে।’

ছাত্রদলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ দ্য রিপোর্টকে বলেন, দেশের প্রায় জেলায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও শ্রম ছাড়া বিএনপির কোনো কর্মসূচিই সফল হয় না। এখন পর্যন্ত আন্দোলনে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বেশির ভাগ প্রাণ হারিয়েছেন এবং গ্রেফতার হয়েছেন হাজারো নেতাকর্মী।’

তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিকে তাদের দক্ষতা প্রমাণ করতে আরও সময় দেওয়া উচিত। সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধ হলে ছাত্রদল আবারও আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের প্রমাণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

উল্লেখ্য, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে গত ৬ ডিসেম্বর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১৭ নভেম্বর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবকে শান্তিনগর থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মূলত তাদের গ্রেফতারের পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দলের মধ্যে নতুন কমিটির গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এনডিএস/এইচএসএম/সা/এনআই/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর