thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১১ জিলকদ  1445

‘উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতা খাটানো যাবে না’

২০১৪ জানুয়ারি ২৯ ০১:৫৫:৫৪
‘উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতা খাটানো যাবে না’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিজস্ব বলয় গড়ে তোলার মানসিকতা বাদ দিতে হবে। এটা সহ্য করা হবে না। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা খাটানো যাবে না।’

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় মঙ্গলবার রাতে তিনি এ সব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য এ তথ্য জানান।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নবনির্বাচিত এমপিদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃণমূলের সিদ্ধান্তে নাক গলানো যাবে না। দল ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সিদ্ধান্তে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন করার কাজ শুরু করতে হবে। দল ও সংসদ সদস্যকে আলাদা করে দেখলে চলবে না। উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। দল ডিঙ্গিয়ে নিজস্ব বলয় ও নিজের লোকদের মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। তৃণমূল যাকে চাইবে তাকেই সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করে আনতে হবে।’

এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এমপি হয়েছেন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে, বিভক্ত করতে নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমপি হওয়ার পর খবরদারির মানসিকতা দূর করতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ নয়। দলকে সহযোগিতা করতে হবে। দল ও এমপি আলাদা করলে চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা গত নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি, আগামীর পথ চলায় তাদেরকেও সঙ্গে নিতে হবে। তাদের আলাদা করা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাও চলবে না। তারাও দলেরই অংশ।’

বৈঠকে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদেরকে দলীয় ফাণ্ডে নগদ ১০ লাখ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। চাঁদা হিসেবে এমপিদের দলীয় ফাণ্ডে ২ হাজার টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। আগে এ চাঁদার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার টাকা। সৈয়দ আশরাফের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ চাঁদা ২ হাজারে নামিয়ে আনা হয়।

দলের সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া, সংবিধান রপ্ত করা ও সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কে অবহিত হওয়ারও তাগিদ দেন সংসদ নেতা।

এ সময় তিনি এমপিদের লাইব্রেরিকেন্দ্রিক পড়াশোনা করতে বলেন।

সংসদ সদস্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া হবে। আর সম্পৃক্ত থাকলে মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে অনেক এমপি’র বিজয়ী হয়ে আসতে ঘাম ঝরে গেছে। এটা মাথায় রেখেই সবাইকে কাজ করতে হবে।’

দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন কথা বলতে চাইলে সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের মধ্যে দুর্বলতা নেই। দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি-জামায়াতের অনেক ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মাঠে ছিল। দেখা গেছে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে মাঠে ছিল আমাদের নেতাকর্মীরা।

বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) ধারা তুলে ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে সরাসরি সম্পৃক্ত (ইনভল্বমেন্ট) হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে এ বক্তব্যের জবাবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল চাঙ্গা করতে বিএনপি খোলামেলাভাবেই উপজেলা নির্বাচনে মাঠে নামবে। এটাও আমাদের ভাবতে হবে। সবক্ষেত্রে ‘ব্যাকরণ’ মানলে চলবে না।’

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংসদ ভবনের নবম তলার সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই দশম সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে শেখ হাসিনাসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে পুনরায় স্পিকার মনোনয়ন দিয়েছে। ডেপুটি স্পিকার হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হযেছে প্রবীণ এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়াকে। সংসদ উপনেতা হিসেবে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

সংসদীয় দলের বৈঠকে ড. শিরীন শারমিন ও ফজলে রাব্বীর নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। স্পিকার পদে সৈয়দ আশরাফের প্রস্তাব সমর্থন করেন আমির হোসেন আমু, ডেপুটি স্পিকারের প্রস্তাব সমর্থন করেন তোফায়েল আহমেদ। সংসদ উপনেতা হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ সাজেদা চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর তাতে সমর্থন জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৈঠক সূত্র জানায়, চট্রগ্রাম-৪ আসনে এমপি দিদারুল আলম ওই আসনের সাবেক এমপি আবুল কাসেমের সমালোচনা করে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছিল। যে কারণে দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।’

ওই সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি অনেককে মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানিয়েছি। পুরনোদের বাদ দিয়েছি বলেই নতুনদের জায়গা হয়েছে। তাই বলে তাদের সমালোচনা করতে হবে এমন না। কারণ পুরনোদের অবদান বেশি ছিল বলেই সংগঠনটি আজও শক্তিশালী।’ এ ছাড়াও মাগুড়ার এক সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর এক এপিএসের সমালোচনাও করেন বলে বৈঠক সুত্র জানায়।

বৈঠকের পর ব্রিফিংকালে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত সদস্যদের দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি অধিবেশনে কথা বলার সময় রুলস অব প্রসিডিউর মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসকে/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর