thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

নিজ হাতে পরিবারকে কবর দিয়েছি

সাহারায় বেঁচে যাওয়া সাফিয়ার গল্প

২০১৩ নভেম্বর ০২ ২১:২১:০৮
সাহারায় বেঁচে যাওয়া সাফিয়ার গল্প

দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : সাফিয়া। নাইজারের ১৪ বছরের এই কিশোরী মৃত্যুকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে। নাইজার থেকে আলজেরিয়ায় যাওয়ার পথে সাহারা মরুভূমি থেকে যে ২০ জন জীবিত ফিরে এসেছে সাফিয়া তাদেরই একজন। গত কয়েকদিনে তিনি যেমন ক্ষুধা-তৃষ্ণার সাথে লড়েছেন। নিজ হাতে কবর দিয়েছেন তারই পরিবারের সদস্যদের। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে একমাত্র তিনিই সেই মৃত্যুপুরী থেকে জীবিত ফিরে এসেছেন। খবর বিবিসির।

ঘটনা শুনুন সাফিয়ার নিজের মুখেই-

আমরা শতাধিক লোক দুটি গাড়িতে করে আলজেরিয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমাদের বহনকারী গাড়ি নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটি ঠিক হতে একটা পুরো দিন লেগে যায়। এরই মধ্যে আমাদের কাছে যে পানি জমা ছিল, তা ফুরিয়ে যায়।

আমরা একটি কূপ খুঁজে পেতে সমর্থ হই; কিন্তু সেটিতে খুব অল্প পরিমাণে পানি ছিল। আমাদের মধ্যে একজন কূপে নেমে সামান্য পরিমাণ পানি তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু বাকি সবাইকে তৃষ্ণার্ত থাকতে হয়।

এরই মধ্যে কয়েকজন পানি আনতে যায়। কিন্তু একরাত এবং একদিন পার হওয়ার পরও ঐ ব্যক্তিরা আর ফিরে আসেনি।

ইতোমধ্যে আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন মারা যায়। মরুভূমিতে দ্বিতীয় দিনে পানি আর খাবার ছাড়া ১৫ জন মারা যায়। আমরা তখন মৃতদেহগুলোকে নিয়ে ট্রাকে উঠে পড়ি। এর মধ্যে ‍দ্বিতীয় ট্রাকটি কিছু পানি নিয়ে ফিরে আসে। এজন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই।

ঐ মৃতদেহগুলো নিয়েই আমরা আবার আলজেরিয়ার পথে যাত্রা শুরু করি। পথে আলজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য আমাদেরকে দেখে ফেলে। তাই আমাদের ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে। আমরা সেখানে অবৈধভাবে যাচ্ছিলাম।

একটি খাদে লুকিয়ে থাকতে আমাদের গাড়ির ড্রাইভাররা পরামর্শ দেয়। সেখানে আমরা আরও একরাত কাটিয়ে দিই। এভাবে পানি ছাড়া পর পর তিন রাত কেটে যায়।

এর মধ্যে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ক্লান্ত একজন নারী অভিযোগ করা শুরু করে। তখন একজন ড্রাইভার একটি হোসপাইপ দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে।

অনেক নারী এবং শিশু এরই মধ্যে মারা গেছে। জ্বালানি তেল রাখার একটি গ্যালনে কিছু পানি ছিল, কিন্তু ড্রাইভাররা সেই পানি তাদের জন্যই রেখে দিয়েছিলেন।

নিজ হাতে পরিবারকে কবর দিয়েছি

সেখান থেকে তারা আবার আমাদের নাইজারে ফেরত নিয়ে যাওয়া শুরু করে। আমাদের পানি আবারও শেষ হয়ে যায়। আমরা ক্ষুধা যন্ত্রণায় মৃতদেহগুলোর নিয়ে ট্রাকে বসে ছিলাম।

যখন আমরা নাইজারে পৌঁছলাম। ড্রাইভাররা তখন কবর দেওয়ার জন্য মৃতদেহগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে আনে। প্রথমে মা-দের মৃতদেহগুলো নামিয়ে আনে এবং তারপর তাদের শরীরের উপর তাদের সন্তানদের দেহগুলো রাখে।

আমরা যারা জীবিত ছিলাম তাদেরকে ড্রাইভাররা বলল, যে আমাদেরকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু যাওয়ার পথে আমাদের গাড়ির পেট্রোল শেষ হয়ে যায়। তখন তারা তেল কেনার জন্য আমাদের কাছ থেকে আরও টাকা চায়।

গাড়ির জন্য তেল কেনার কথা বলে তারা আমাদেরকে মরুভূমিতে রেখে যায়। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

আমরা কোন ধরনের খাবার ও পানি ছাড়া আরও দুই দিন মরুভূমিতে অপেক্ষা করি। যখন দেখি তারা আর ফিরে আসছে না, তখন আমরা হাঁটার সিদ্ধান্ত নিই।

আমাদের সামনে দিয়ে কিছু গাড়ি যাচ্ছিল। আমরা সেগুলো থামাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কেউ গাড়ি থামায়নি। বরং একটি গাড়ি আমাদের দলের তিনজনকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলে।

আমার মা ও ছোট বোনগুলোসহ এখন আমরা আট জন বেঁচে আছি। আমরা ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নিচে বসে পড়ি, সেখানেই আমার এক বোন মারা যায়। আমরা সেখানেই তাকে দাফন করি।

তারপর আমরা আবারও হাঁটা শুরু করি। একদিন পর আমার দ্বিতীয় বোনটিও মারা যায়। এরপর তৃতীয় দিন আমার মা-ও মারা যায়। তখন নিজেই সবাইকে দাফন করি।

উদ্ধার হলাম যেভাবে

অনেক গাড়ি আমাকে দেখেছে কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

কিছুক্ষণ পর আমি একটি গাছ খুঁজে পাই। সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে আমি গাছের ছায়ায় বসে পড়ি। আর তখনই আমি একটি গাড়ি দেখতে পাই।

তখন আমার কাপড়ের একটা অংশ খুলে সেটি জোরে জোরে শূন্যে নাড়াতে থাকি। গাড়িচালকটি আমার কাছে জানতে চায় যে কি হয়েছে। আমি তাকে সব ঘটনা খুলে বলি। তারা আমাকে কিছুটা দুধ, পানি এবং পিঠা খেতে দেয়।

আমি কিছুটা খাই। কিন্তু আমার খেতে সমস্যা হচ্ছিল। তখন তারা আমাকে চা তৈরি করে দেয়।

তখন আমরা আরলিট (নাইজারের উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় শহর)-এর দিকে রওনা দেই। যেখানেই আমি আমার দাদার সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়।

পরিবারের সবাইকে হারিয়ে এখন আমি একা। আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। এখন মা-ও মারা গেছে। আমার কোনো বোন বা ভাই নেই।

এখন আমি আমার আন্টির সঙ্গে বসবাস করছি। আমি শুনেছি, শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে আমি ও একটি ছোট মেয়ে এবং ১৮ জন বেঁচে ফিরতে পেরেছে।

(দিরিপোর্ট২৪/আদসি/এমডি/এইচএসএম/নভেম্বর ০২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর