thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

তারকাদের সংসার বালির বাঁধ

২০১৪ জানুয়ারি ২৯ ১৯:৩৭:৩৫
তারকাদের সংসার বালির বাঁধ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিয়ে কারও পৌষ মাস, কারও বা সর্বনাশ-এ কথা সবারই জানা। বিয়ের আগে সব ঠিক। কিন্তু বেঠিক হয় তখনি, যখন বিয়ের পর দিন গড়াতে থাকে। আনন্দের এই বিষয়টিকে ঘিরে দুঃখের সাগরে ভাসতে কারো কারো সময়ও লাগে না। এই দুর্ঘটনা যদি তারকাদের হয়, তবে তো কথাই নেই। চারদিকে রব ওঠে, এ কী হল? কেউ বলে, ঠিক আছে। কেউ বলে, এমন কাজটি করতে পারল? এ সব কারণে তারকাদের সংসারকে বালির বাঁধ বলে আখ্যায়িত করেন কেউ কেউ।

প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে। এরপর ভাঙন। কারও অনেক বছর পর ভাঙে। কারোটা আবার বছরও গড়ায় না।

মোনালিসা-ফাইয়াজ, এজাজ মুন্না-মম, ফয়সাল-জয়া, অপি-উজ্জ্বল, অপূর্ব-প্রভা, হিল্লোল-তিন্নি, তারিন-সোহেল আরমান, বিজরী-ইমন, দেবাশীষ-তানিয়া, তাজিন-এজাজ মুন্না, মিমো-রানা, ন্যান্সি-সৌরভ, শমী-রিঙ্গো, রিয়া-ইভান, অমিতাভ রেজা-জেনি, মিঠু বিশ্বাস-মৌসুমী নাগ, আনজাম মাসুদ-রুমানা, হুমায়ুন ফরীদি-সুবর্ণা মুস্তাফা, রোকেয়া প্রাচী-আসিফ নজরুল, তারানা হালিম-আহমেদ রুবেল, আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েত, ঝুনা চৌধুরী-নাহিদ ফেরদৌস মেঘনা, সরয়ার ফারুকী-কৃষ্ণকলি, নকীব খান-সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ-রুনা, রবি চৌধুরী-ডলি সায়ন্তনী, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, আলমগীর-খোশনূর, হুমায়ুন আহমেদ-গুলতেকিন আহমেদ, আলাউদ্দিন আলী-সালমা আলী, জেমস-রথি, শাকিল খান-জনা, জহির রায়হান-সুমিতা দেবী।

বিয়ের আসল কারণটা কখনো ব্যাখ্যা করতে চান না তারকারা। প্রেম করেন লুকিয়ে আবার বিয়ে করেন কাউকে না জানিয়ে। আলাদাও থাকেন সবার অলক্ষ্যে। কিন্তু যখন এই ঢাকঢাক গুড়গুড় অবস্থা মিডিয়া জেনে যায়, তখন এই না সেই না করে এড়িয়ে যান। ওঠে গুজব। চলতে থাকে রেললাইনের মতো।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ফয়সাল ও জয়া বেশ ক’বছর একত্রে থাকলেও টেকেনি তাদের সংসার। ফয়সালের অসুস্থতা, জয়াকে উপরে উঠতে না দেওয়া, জয়ার সঙ্গে একাধিক পরিচালকের সম্পর্ক- এ সব কারণ দেখিয়ে ভেঙে যায় সংসার।

ফাইয়াজ ছাড়া আমি কিছু বুঝি না, ফাইয়াজ আমাকে ভালো বোঝে-এমন অনেক কথা বলে বিয়ে করার পর ধীরে সব ওল্ট-পাল্ট হয় মোনালিসার। ভেঙে যায় তাদের সংসারও। বিয়ের আগে কণ্ঠশিল্পী হাবিবের সঙ্গে তার প্রেমের গুজবও রটে কিছুদিন। তবে সবকিছুই থেকে যায় জনতার আড়ালে।

তাজিন আহমেদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পরিচালক এজাজ মুন্নার। কিন্তু মুন্নার খারাপ ব্যবহার, পরকীয়ার পাশাপাশি তাজিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা-সবকিছুই তাদের পরিণয়কে বিষিয়ে তোলে। ছাড়াছাড়ির পর মুন্না বিয়ে করেন লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মমকে। কিন্তু গুজব ওঠে বিয়ের দিন থেকেই মম ছিলেন অন্যমনস্ক। তিনি হয়ত চাননি বিয়েটা করতে। এরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। এই দু’জনের মধ্যেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এক সময় সুইসাইড নাটকও করেন মম। দায়ী করতে চান মুন্নাকে। তারপর মমকে দেখা যায় পরিচালক শিহাব শাহীনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে। এটাকেও গুজব বলে চালিয়ে দেন মম।

দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম এক সময় জাপান প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করেন। অন্য স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অপিকে বিয়ে করায় তিনি তার সঙ্গ ত্যাগ করেন। কিন্তু মিডিয়ার কাছে বিষয়টি আড়াল করেন। তারপর বাংলাদেশ-জার্মানি-বাংলাদেশ করতে থাকেন। এক সময় পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সখ্য গড়ে ওঠে অপির। একে অপরের প্রেমে পড়ে যান তারা। বিয়েও করেন। তারপর একদিন হুট করে ভেঙে যায় সে বাঁধন। আলাদা হয়ে যান তারা।

মিডিয়ায় পরিচিতি পাওয়ার আগে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলি ইসলামের বিয়ে হয়- এমন কথা চাউর আছে মিডিয়ার আড্ডাস্থল বলে খ্যাত শাহবাগে। পরিচিতি পেতে শুরু করলে সরয়ার কৃষ্ণকলিকে ছেড়ে দেন। এমন কথাও শোনা যায়, সরয়ারের মাদকাসক্তি এর বড় কারণ। এরপর তিনি মডেল-অভিনেত্রী তিশাকে বিয়ে করেন।

অপূর্ব-প্রভা-রাজিব ত্রয়ীর গল্প মিডিয়ার সবার জানা। তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনে এক নারী নির্মাতার হাত ছিল জানা যায়। কিন্তু এ সব গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তারা।

মিডিয়ায় সাফল্য পেতেই নাকি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজাকে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী জেনি। যার জন্য নিজের পুরনো প্রেমিককে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ কথা চাউর হয় মিডিয়ায়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের। তারপর সময় গড়াতেই তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। দু’জনের বহুগামিতা নিয়ে গুজব ওঠে। বিচ্ছেদ ঘটে শেষমেষ। এরপর জেনি একা থাকলেও অমিতাভ বিয়ে করেছেন মিম নামের এক মেয়েকে। যিনি অভিনেত্রী-মডেল মিথিলার বোন।

ভাইয়ের স্ত্রীকে মিডিয়ায় এনেছেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। মৌসুমীও সে কথা স্বীকার করতেন। স্বামী পরিচালক মিঠু বিশ্বাসের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভালো যাচ্ছিল। হুট করে মৌসুমীর প্রেমে পড়ে যান অভিনেতা শোয়েব। মৌসুমীও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ঘটনা জানাজানি যেন না হয়, তার চেষ্টা করেন অরুণা। মৌসুমীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কিছুতেই এদের দু’জনকে আলাদা করা যাচ্ছিল না। দেশে ফিরে আসেন মৌসুমী। ডিভোর্স দেন মিঠুকে। শোয়েবকে বিয়ে করেন তিনি।

দেবাশীষ-তানিয়া গল্পটির আগের ঘটনা অন্যরকম। অভিনেত্রী তানিয়া হোসেন প্রেম করতেন সাংবাদিক-নাট্যকার এমএস রানার সঙ্গে। তাদের প্রেম বেশি দিন টেকেনি। পরিচালক-উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাসের প্রেমে পড়ে যান তিনি। বিয়েও করে বসেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের সম্পর্ক গরল হতে শুরু করে। বিচ্ছেদের পথে পা বাড়ান তারা। ওদিকে তানিয়া চলে যাওয়ার পর এমএস রানা প্রেম করেন সুপার হিরোইন মিমোর সঙ্গে। হুট করে বিয়ে করে ফেলেন। বিয়ের পর মিমো ও রানার আচরণগত পার্থক্য ধরা পড়ে। অবশেষে তারাও আলাদা হয়ে যান।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তার কন্যা শীলা আহমেদের বান্ধবী অভিনেত্রী শাওনের প্রেমে পড়ে স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। এটা নিয়ে মিডিয়ায় বহু সমালোচনা হয়। মিডিয়ার সামনে আসা ছেড়ে দেন হুমায়ুন। অসম এই সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি ঘটে তার পরিবারেও। তার মেয়ে শীলা আহমেদ বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুলকে। আসিফের সঙ্গে এর আগে বিয়ে হয়েছিল অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর। কিন্তু স্বাধীনচেতা মনোভাব দু’জনকে একসঙ্গে থাকতে দেয়নি।

ভালোবেসে তিন্নিকে বিয়ে করেছিলেন হিল্লোল। বিয়ের পর সব ঠিকঠাক চলছিল। সন্তানের মুখও দেখেছিলেন তারা। কিন্তু তিন্নির বেপরোয়া জীবন ও হিল্লোলের পরকীয়া যেন তাদের ছিটকে ফেলে দেয় বিয়ে নামক ট্রেন থেকে। হিল্লোল এরপর বিয়ে করেন অভিনেত্রী-উপস্থাপক নওশীনকে। নওশীনের এর আগেও বিয়ে হয়েছিল। তার এক সন্তানও রয়েছে। তবে হিল্লোলকে বিয়ে করার ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পরিচালক ওয়াহিদ আনামের সঙ্গে সখ্য ছিল নওশীনের। শোনা যায়, বিয়েও নাকি করেছেন তারা। ওয়াহিদকে ঢাকায় এনে পরিচালক হওয়ার রাস্তাটাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নওশীনকে ছেড়ে লাক্স তারকা তাহসিনকে বিয়ে করেন ওয়াহিদ। তারপরেই পাশা ঘুরে যায়। হিল্লোলকে বিয়ে করে থিতু হন নওশীন। যদিও বিয়ের প্রথম একবছর মিডিয়ার সামনে হিল্লোলের প্রসঙ্গ অস্বীকার করেছেন তিনি।

এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু সবার ঘটনাই প্রায় সমান। বিয়ে করে সুখী ছিলেন না এ সব দম্পতি। তাদের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়েছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লোভ, হতাশা, অর্থ, পরকীয়া, মানসিক অশান্তি-সবকিছুই।

অভিনেত্রী আফরোজা বানু বলেন, ‘এটা কী শুধু তারকাদের ক্ষেত্রেই হয়? আমি আমার বন্ধু-বান্ধব বা আমার মেয়ের বন্ধু-বান্ধবদের দেখেছি। অনেকের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। ওরা তো মিডিয়ার না। সাধারণ মানুষ। এখন আধুনিক পৃথিবীতে সবাই স্বাধীন। আগে ছেলেরা ঘর থেকে বের হত, এখন মেয়েরাও বের হয়। আগে মেয়েরা মার খেয়ে চুপ করে থাকত। এখন থাকছে না। সবাই তো চাকচিক্যের পেছনে ছুটছে। পশ্চিমা সমাজের মত এখানেও পুঁজিবাদি চিন্তা-চেতনা প্রবেশ করেছে। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক, পারিবারিক গঠন ও সাংস্কৃতিক চেতনা।’

আইনজীবী তামিম মেহেদী বলেন, ‘মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আমাদের কাছে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদের কেস আসে। তারা কারণটা উল্লেখ করেন। বেশিরভাগ বিচ্ছেদ হয় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর কারণে। তারকাদের ব্যাপারেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কর্মী মোমেনা শাহনূর বলেন, ‘বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের নাচ-গান-আবৃত্তি-অভিনয় শেখায়। কিন্তু তারা এত বেশি স্বাধীনচেতা হয়ে যায় যে, স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা জানে না। এতই উপরে ওঠে যে নিচের দিকে তাকাতে ভুলে যায়। বাবা-মায়ের দায়িত্ব হল, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হলে তারা কীভাবে নিজের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে চলবে, সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা কী? শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কীভাবে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে-সব শিখিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি শ্বশুর-শাশুড়িকেও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আমার মতে, সংসার সুখের হলে বাকি সব ঠিক থাকবে।’

বিয়ের গল্পটা খুব মজার হলেও বিচ্ছেদের ঘটনা খুব করুণ। যত কিছু হোক না কেন, তারকারা দর্শকদের কাছে রোল মডেল। তারা যা করবে, দর্শকরাও তাই করার চেষ্টা করবে। এখন তারা যদি বিচ্ছেদের দিকেই যান, তাহলে দর্শকরাও কী তা শিখবে না? আবার এ সব ঘটনার কারণে অনেক শিক্ষিত এবং ভদ্র পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের মিডিয়ায় দিতে চান না।

(দ্য রিপোর্ট/আইএফ/এপি/সা/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর