thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ১৩ মে 24, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১,  ৫ জিলকদ  1445

এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে বিরোধের উত্তাপ জাতিসংঘে

২০১৪ জানুয়ারি ৩০ ১৩:৫৫:০৪
এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে বিরোধের উত্তাপ জাতিসংঘে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : জাপান ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক কয়েকটি ইস্যু নিয়ে বিরোধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত। এ নিয়ে জাতিসংঘে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

চীনা রাষ্ট্রদূত লিউ জিয়েই বলেন, বিতর্কিত ইয়াসুকুনি সমাধিমন্দিরে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি সফরের পর সংলাপের দরজা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ছাড়া জাতিসংঘে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি জাপানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ‘বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী’ লালন করার অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে জাপানের প্রতিনিধি বলেন, জাতিসংঘে এই ইস্যুগুলো উত্থাপনের ফলে এ সব নিয়ে যে বিরোধ রয়েছে তাতে কোনো কমতি ঘটেনি।

জাতিংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বুধবার যুদ্ধ থেকে শিক্ষাগ্রহণ বিষয়ক এক উন্মুক্ত বিতর্কে এই বাক-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

কয়েক সপ্তাহ আগে জাপানের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে দেশটির রাজধানী টোকিওতে অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ইয়াসুকুনি সমাধি মন্দির পরিদর্শনে যান। ওই সমাধি মন্দিরে ১৮৬৭-১৯৫১ সাল পর্যন্ত জাপানের সম্রাটের পক্ষে যুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকেও কবর দেয়া হয় ওই সমাধিমন্দিরে।

সমাধি মন্দিরটিতে ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩২ জন যোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়। এদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৮ জনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এক আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হন।

জাপানের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের ওই পরিদর্শন কর্মসূচির পর দেশটির প্রতিবেশী দেশগুলো ক্ষুব্ধ হয়। তারা অভিযোগ তোলে, জাপান তার অতীত ইতিহাসের ‘সাম্রাজ্যবাদী সমরবাদের’ পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করতে ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছে।

ইতোমধ্যেই কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীন ও কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের বিরোধ চলে আসছিল। তার উপর এখন ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের এই বিষয়টিও যোগ হলো।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখার সময় চীনা প্রতিনিধি মি. লিউ অভিযোগ করে বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ‘এমন লোকদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন যারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আগ্রাসনমূলক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আক্রান্ত দেশগুলোর জনগণের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল তাদের হাত।’

লিউ আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃত করার ফলে আঞ্চলিক শান্তি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং মানবজাতির শান্তিপূর্ণ অগ্রগতির জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দূত ওহ জুন বলেন, উত্তরপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ জাপান তার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ইতিহাস বিষয়ে বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী লালন করে থাকে।

অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত জাপানের উপরাষ্ট্রদূত কাজুয়োসি উমেমোতো বলেন, জাপান তার অতীত ইতিহাসের অনেক কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তরিকভাবেই দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইয়াসুকুনি সমাধি মন্দিরে শিনজো অ্যাবের পরিদর্শন একান্তই তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ। তাছাড়া এর মধ্যদিয়ে তিনি মূলত যুদ্ধবিরোধী বার্তাই দিতে চেয়েছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছে, ওয়াশিংটন চায় উত্তর কোরিয়াকে মোকাবেলায় চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ঐক্য বজায় থাকুক।

এ ছাড়া এ অঞ্চলে চীনের বেড়ে চলা প্রভাব প্রতিপত্তি এবং সমুদ্র সীমা সম্পর্কিত চীনের দাবি মোকাবেলায়ও জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার। (বিবিসি)

(দ্য রিপোর্ট/এমএটি/ এমডি/এএল/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর