thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

সাঈদীর পক্ষে দু’টি অভিযোগের যুক্তি উপস্থাপন শেষ

২০১৪ জানুয়ারি ৩০ ১৯:২৬:৪৪
সাঈদীর পক্ষে দু’টি অভিযোগের যুক্তি উপস্থাপন শেষ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত আটটি অভিযোগের মধ্যে দু’টিতে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত মোট ২০টি মামলার ৬ ও ৭নং অভিযোগের ওপর যুক্তি পেশ শেষে ৮নং অভিযোগ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান। এ সময় আপিল বেঞ্চ মামলার কার্যক্রম আগামী রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।

প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপিত হয়।

৭নং অভিযোগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের ৮নং সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের একটি মামলায় সাজা হয় এবং পরে খালাস পান। সেলিম খানের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা তিনি (সাক্ষী) খালের ওপার থেকে দেখার কথা ট্রাইব্যুনালে বললেও তদন্ত কর্মকর্তাকে তা বলেননি। এ ছাড়াও তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেছেন সাঈদী সেলিম খানের বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তার জেরায় মোস্তফা এ কথা বলেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৫-১৬ বছর আগে সাঈদী নাম ধারণের কথাও মোস্তফা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেননি বলে জেরায় স্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।’

আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের ১২নং সাক্ষী একেএম আউয়াল জবানবন্দিতে বলেছেন, শুনেছি দানেশ মোল্লা সেকেন্দার শিকদারের সঙ্গে সাঈদী সাহেবও ছিলেন। জেরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, সাঈদী সাহেব থাকার কথা আপনি যে শুনেছেন তা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে বলেননি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন। অপরদিকে তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় জানিয়েছেন ‘শুনেছি সাঈদী সাহেবও ছিলেন’ এ কথা আউয়াল তার কাছে বলেননি।’

শাহজাহান বলেন, ‘৭নং অভিযোগ প্রমাণে ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের তিনজন সাক্ষীর ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু এর মধ্যে তৃতীয় সাক্ষী ৭নং অভিযোগের বিষয়ে কিছুই বলেননি। অপরদিকে আসামিপক্ষের ১৫নং সাক্ষী ৭নং অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন, ঘটনার সময় সেলিম খান ও তার বাবা নূরুল ইসলাম খান কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ৭ মে’র আগেই সেলিম খান মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। কাজেই নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়।’

আইনজীবি বলেন, ‘এ ছাড়া ৭নং অভিযোগে আগুন দেওয়া ও নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষী নির্যাতন বিষয়ে কিছু বলেননি।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সেলিম খানকে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি সেফ হাউসে এনে রাখে। ১১ ও ১২ জানুয়ারি তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আনে। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় ১২ জানুয়ারি তাকে গাড়িতে করে আজিমপুরে তার মেয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।’

দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পড়ে শোনানোর সময় আদালত জানতে চান এর ভিত্তি কী? এর জবাবে আইনজীবী শাহজাহান বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের সেফ হাউস ডায়েরিতে এ তথ্য রয়েছে।’

এরপর তিনি ৮নং অভিযোগে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। ৮নং অভিযোগ ছিল মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর সেখান থেকে ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়া। এরপর ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয় এবং নির্যাতনের পর মফিজ উদ্দিন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মোট নয়জন যথা ২,৪,৬,৭,৮,৯,১০,১১ ও ১২নং সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এসএম শাহজাহান বলেন, ‘অভিযোগে উল্লেখ আছে মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে বিকেল তিনটায়। কিন্তু ২নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন বলেছেন, তিনি দুপুর ১১-১২টার দিকে আগুন দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরেছেন। আসলে তিনি আগুন দেওয়ার সময় ঘটনাস্থল বা তার আশপাশে ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী বলেছেন ৭ মে’র অনেক আগেই রুহুল আমিন নবিন এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরপর দেশ স্বাধীনের পর ১৮ ডিসেম্বর পাড়েরহাট তিনি তাকে প্রথম দেখেন।’

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আইনজীবী বলেন, ‘রুহুল আমিন নবিন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নবম সাক্ষী তাকে আগে থেকেই চিনতেন। যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন ২৫ মার্চের পর তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষী সে দাবিই করেছেন। কাজেই রুহুল আমিন নবিন আসলে ৭ মে’র ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না।’

এরপর ৮নং অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ৪নং সাক্ষীর সাক্ষ্য বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘এ সাক্ষীর পরিচয় কী? জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন কলা চুরির মামলায় জজ কোর্টে তার সাজা হয়েছে এবং এ মামলা বর্তমানে হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া ট্রলার চুরির দু’টি মামলা বরিশাল কোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।’

এ সময় যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় রেখে মামলার কার্যক্রম ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করে আদালত।

যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান এবং আসামিপক্ষে ছিলেন গিয়াসউদ্দিন মিঠু, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসকে/সা/জানুয়ারি৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর