thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

আশুগঞ্জে শিক্ষাবঞ্চিত ৮ হাজার চাতালশিশু

২০১৪ জানুয়ারি ৩০ ২০:৪৫:৫৫
আশুগঞ্জে শিক্ষাবঞ্চিত ৮ হাজার চাতালশিশু

সীমান্ত খোকন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সংসারের অভাব-অনটন, অভিভাবকদের অসচেতনতা, স্থান পরিবর্তন ও পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের প্রায় আট হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদের কেউ কেউ স্কুলে ভর্তি হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তারা ঝরে পড়ছে।

যে বয়সে তাদের হাতে বই-কলম থাকার কথা সেই বয়সেই তাদের হাতে থাকে ঝাড়ু-ঝুপি। সংসারের ঘানি টানতে তারা নেমে পড়েছে জীবন সংগ্রামে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চার শতাধিক চাতাল কলের প্রায় আট হাজার শিশু বঞ্চিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে। প্রতি বছর বাংলা বছরের শুরুতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে অনেক শ্রমিকই কর্মস্থল চাতাল পরিবর্তন করে। ফলে পরিবর্তন হয় তাদের বাসস্থানেরও।

শ্রমিকদের সিংহভাগই নিরক্ষর-অশিক্ষিত, ফলে তারা তাদের সন্তানের পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে উদাসীন। শ্রমিকরা তাদের সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে ভাবেন না। কোনও শ্রমিকের সন্তান স্কুলে ভর্তি হলেও তারা স্কুলে যায় কিনা তা তারা খোঁজও রাখেন না।

চাঁন বক্স রাইস মিলের শ্রমিক তাজ উদ্দিন জানান, খুব অভাবের মধ্যে দিন যায়। যে পরিমাণ আয় হয় তাতে পেটের ভাত জোগানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে পারি না।

একই মিলের শ্রমিক মরিয়ম আক্ষেপ করে জানান, ‘আমি গত বছর ভৈরবে থাকতে ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করছিলাম। কিন্তু চাতাল পরিবর্তন কইরা এখানে আসার পরে কাছে সরকারি স্কুল না থাহায় ভর্তি করতে পারি নাই। কেজি স্কুলে কি আর আমরা পড়াইতে পারুম। অহন সে আমার সাথে সাথে থাহে ও ছোডু বাচ্চাটারে দেহাশুনা করে।’

ফিরোজ মিয়া কলেজ মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক মো. জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার কেন্দ্রের মোট ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩০/৩৫ জনই চাতালের শিশু। ভর্তির পর কিছুদিন আসার পর অনেকেই আসে না।

তিনি আরও জানান, চাতালে কাজের চাপ থাকলে তাদের মা-বাবা স্কুলে আসতে নিষেধ করে। যে কোনো কারণেই হোক তারা শিক্ষার চেয়ে টাকাকে বেশি বড় মনে করে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কবিরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর আমরা শিশু জরিপ করে চাতালের শিশুদের ভর্তির ব্যবস্থা করি। কিন্তু তারা নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকে না। তাদের স্কুলে রাখা যায় না, ঝরে পড়ে।

তিনি আরও জানান, চাতাল পরিবর্তনের কারণে অনেক শ্রমিক ভাসমান জীবন-যাপন করে। ফলে কেউ কেউ জরিপে বাদ পড়তে পারে। যদি চাতাল ভিত্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা যায় তা হলেই হয়তো তাদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখা যাবে।

(দ্য রিপোর্ট/এসকে/এমএআর/আরকে/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর