thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

পাল আমলের রাজধানী আবিষ্কার

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৮:৩৩:৩৬
পাল আমলের রাজধানী আবিষ্কার

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : দশম শতাব্দীর পাল রাজা যশোপালের রাজধানী আবিষ্কৃত হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ঢোলসমুদ্র গ্রামে রাজবাড়ি খননকালে এ রাজধানী আবিষ্কার করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

১৮ জানুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে খননকাজ করার সময় যশোপালের রাজধানীর সন্ধান পাওয়া যায়।

খননকাজের তদারকিতে দায়িত্বরত প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোছা. নাহিদ সুলতানা ও ফিল্ড অফিসার নাসিমা শাহীন জানান, খননের মাধ্যমে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের অবস্থাদৃষ্টে মোটামুটি এটিকে দশম শতাব্দীর পাল রাজা যশোপালের সমসাময়িক কোনো কীর্তি বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই সঠিক ইতিহাস উন্মোচনের জন্য এ পুরাকীর্তিটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে প্রাচীন দেয়াল, কারুকার্য খচিত ইটসহ দেখা মিলছে দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে কারুকার্য খচিত ভিম।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ঢোলসমুদ্র গ্রামে খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে যশোপাল রাজার প্রাচীন ভিটা অনুসন্ধানে অধিদফতর দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল।

সূত্র জানায়, খনন করার সময় বেরিয়ে আসছে কারুকার্য খচিত ইট ও ইটের দেয়াল। ইটের কারুকার্য এত নিখুঁতভাবে তৈরি, যা কয়েক শ’ বছরেও নষ্ট হয়নি। দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে কারুকার্য খচিত ভিম। দেয়ালে গাঁথা ইটগুলো আকারে ছোট। তবে বেশ মজবুত। এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ ও বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ। খননকাজ যতিই গভীরে যাচ্ছে ততই এ সবের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালিয়া ও চাপার ইউনিয়নের ডাকুরাইল মৌজায় পাল বংশীয় রাজা যশোপালের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থলটি ঢোলসমুদ্র গ্রামে অবস্থিত। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এ প্রত্নস্থলটি দেখতে এসে কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস ও অবকাঠামো না দেখতে পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যেত। আর এ কারণেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ঐতিহাসিক এই স্থানটি খননের উদ্যোগ নেয়।

গেল বছরের ৪ আগস্ট প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মো. আতাউর রহমান, ফিল্ড অফিসার নাসিমা শাহীনসহ একদল প্রত্নতাত্ত্বিক ও খনন দল পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সংরক্ষিত প্রত্নস্থলটি স্থানীয়দের দখলমুক্ত ও খননকাজের চেষ্টা চালান।

বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থল খননকাজের উদ্বোধনের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাল আমলের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে নানা পুরাকীর্তি বেরিয়ে এসেছে। ১২ সদস্যের একটি টিম সার্বক্ষণিক কাজের তদারকি করছেন। বর্তমানে ১৭ জন শ্রমিক ওই খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৮ দিনের খননকাজে বেশকিছু কারুকার্য খচিত ইট বের হয়ে আসছে। আবার কোথাও কোথাও ইটের তৈরি দেয়াল দেখা যাচ্ছে। খনন দলের কর্মকর্তারা বেরিয়ে আসা ইটের অবস্থান শনাক্ত করতে ইটের উপর সাদা কাগজে লিখে রাখছেন।

রাজা যশোপালের ভিটার পাশের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এটি যশোপালের বসতভিটা। তবে বর্তমানে তাদের স্মৃতিচিহ্ন বিলীন হতে বসেছিল। খননের পর ইমারতের ধ্বংসাবশেষ ও পুরনো কিছু নিদর্শনাবলী পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ঢোলসমুদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মারুফা আক্তার বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খননকাজে রাজা যশোপালের রাজধানীর ভগ্নাবশেষ ও তার ইতিহাস ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার হচ্ছে। প্রতিদিন এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা এ সব পুরাকীর্তি দেখে খুবই আনন্দিত হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, বড়ইবাড়ি প্রত্নতত্ত্ব খননকাজের উদ্বোধনের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাল আমলের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বেরিয়ে এসেছে। পাল বংশের রাজারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও এদের মন্ত্রী ও আমলাদের অনেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢোলসমুদ্র বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থলটি বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা অথবা হিন্দুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো কীর্তি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

লেখক ও গবেষক আমিনুল হক সাদী জানান, মুসলিম শাসনপূর্ব সময়ে ঢাকা ও পাশের এলাকায় পাল (৮৫৫-৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) ও সেন (৯৮৬-১২০৩ খ্রিষ্টাব্দ) বংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত ছিল। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর উত্তরে এ বংশের শেষ তিনজন রাজার রাজধানী ছিল। তালিবাবাদ পরগণার মাধবপুরে যশোপালের পাল বংশীয় রাজাদের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ এ সব এলাকায় এখনও প্রচুর পরিমাণ বিদ্যমান।

তিনি বলেন, রাজা যশোপালের পূর্বসূরি রাজা নারায়ণ পাল ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। দশম খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনা করেন। তার পরগণা তালিবাবাদ বর্তমান কালিয়াকৈর উপজেলা ও আশপাশের এলাকাজুড়ে অবস্থিত ছিল। ঢোলসমুদ্র বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থলটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খননকাজের মাধ্যমে প্রমাণিত করেছে- এটি রাজা যশোপালের রাজধানী।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এসবি/সা/ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর