স্থায়ী ঠিকানা

[রণবীর পুরকায়স্থ। জন্ম : ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯,আসামের সাবেক কাছাড় জেলার করিমগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত লালখিরা গ্রামে। শৈশবের কিছুদিন চা বাগানে , কিছুদিন লোয়াইরপুয়া গ্রামে, তারপর শিলচর শহরে।
শিক্ষা : অভয়াচরণ ভট্টাচার্য পাঠশালা, কাছাড় হাইস্কুল, কাছাড় কলেজ থেকে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমকম। কর্মজীবন : ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক হিসেবে কলকাতা থেকে অবসর।
লেখক বর্তমানে কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। লেখালেখি : পাঁচটা গল্পগ্রন্থ, দুটো উপন্যাস।]
আমার বাবা খাস সিলেটি ।
সিলেটি তো বুঝি, বাংলাদেশের একটি জেলা সিলেট, সেই জেলার অধিবাসী হলেই সিলেটি। খাস যোগ করলে নাকি সিলেটি ভাষার অকৃত্রিম রূপের কথক বোঝায়। বাবা বুঝিয়েছে, আমি বুঝি নি। আমার জন্ম শিলচরে, মামার বাড়িতে ১৯৮৩ র দুসরা মার্চ । দুমাস বয়স হতেই চলে যাই বাবার কর্মক্ষেত্র ডিব্রুগড়ে । বাবা ব্যাঙ্কের কর্মচারী । প্রথমে ছিল ক্লার্ক, তারপর পরীক্ষা দিয়ে অফিসার । আসামের অনেক শহরে কাজ করেছে । তৈলশহর ডিগবয় দিয়ে শুরু তারপর গৌহাটি লামডিং যোরহাট শিলচর ডিব্রুগড় । আমি দুবছর ছিলাম আসামে । তার আগে ১৯৮৫ এর ১৫ অাগস্ট আসাম আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির আসাম সমঝোতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাবা । সে বছরই স্বেচ্ছা বদলি নিয়ে চলে আসে কলকাতায় ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ে । পরে, বড় হয়ে বাবাকে প্রশ্ন করায় বলে আমার জন্য নাকি কলকাতায় আসা । আমি বুঝি নি । বাবা বলে আসাম তার দ্বিতীয় স্বদেশ, অসমিয়া ভাষা বলতে পারে মাতৃভাষার মতো । রাজনৈতিক আসামে দুটি নদী উপত্যকা, ব্রহ্মপুত্র আর বরাক । বাঙালির মুখের কথায় ব্রহ্মপুত্রই আসাম নামে পরিচিত । বরাকে মূলত বাংলা ভাষীদের প্রাধান্য । চাকরিসূত্রে বাবা দুই উপত্যকাতেই বসবাস করেছে, তাই বাবার মুখের কথায় অনেক অসমিয়া শব্দ । বাবা মানে না । বলে আৎরানো মানে সরিয়ে রাখা, সিলেটিতেও আছে, অসমিয়ায় মাকে আই বলে, সিলেটের গ্রামেও বলে, বিষহরি পূজার মনসা ঠাকুরানিকেও বলে আই মনসা । বলে, সিলেট কাছাড়ের সঙ্গে কামরূপ জেলার ভৌগোলিক দূরত্ব বেশি না থাকায় অসমিয়ারাও পর্যন্ত কামরূপের ভাষাকে সিলেটিয়া বলে । এসব কথায় এখন দাঙ্গাবীজের বিতর্ক থাকে বলে প্রকাশ্যে বলে না । বাবা বলে আসামে তাকে তিন রকমের কথ্যভাষার মোকাবিলা করতে হয় । এক অসমিয়া । দুই বাংলার লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা এক জগাখিচুড়ি, যা কারো মাতৃভাষা নয় । ঢাকাই সিলেটি চাটগাইয়া নোয়াখালি ময়মনসিংহ কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারো নয় । কলকাতারও নয় । তবে কলকাতা ঢাকার প্রতাপ বেশি, সিলেটি তিন নম্বরে । আর তিনে সিলেটির খুব দুরবস্থা, রামেও মারে রাবণেও মারে । অসমিয়াদের কাছে সব কন্ডলের ঘটি হল সিলেটি, বরাকের মানুষ । স্বাধীনতার আগে যখন পুরো সিলেট আসাম রাজ্যে তখন তো বাঙালির আধিপত্য ছিল একচেটিয়া । সিলেটি প্রাধান্য ছিল আসামের রাজধানী শিলং এ, গৌহাটিতেও । আসামের সংখ্যাগুরু হওয়ার প্রবল দাবিদার সিলেটকে পরিকল্পিত চক্রান্ত করে দিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্থানের হাতে গণভোটের প্রহসনে । আর তার পরই আসামের রাজ্যপাল, সাংবিধানিক প্রধান আকবর হায়দরি বলেন, যাক বাঙালি আর ক্ষমতার ধারে কাছে রইল না । এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈও আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললেন, আসাম অসমিয়ার । ব্যথিত মহাত্মাজি একথা শুনে আক্ষেপ করে বলেন, আসাম যদি অসমিয়ার ভারত তবে কার । আমার বাবার আক্ষেপ নেই, আছে রাগ । বলে আসামে বাঙালি বিদেশি হলে অসমিয়ারা তবে কী । এরাও তো ব্রহ্মদেশ থাইদেশ থেকে এসেছে ।
আমি ওসব বুঝিনি, আসাম নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, কারণ আমি বড় হয়েছি কলকাতায় । বড় হলেও কলকাতা আমাকে খুব একটা ছুঁয়ে দেখেনি । যদিও পড়াশুনার সঙ্গে গান বাজনা নাটক সিরিয়েল করে ফেলেছি বারো ক্লাস অব্দি । বঙ্গসংস্কৃতির সংক্ষিপ্ত ঝাঁকিদর্শন । খুব ভাল নয় আবার খুব খারাপও ছিলাম না পড়াশুনায় । যেহেতু কলকাতার প্রতি তেমন টান ছিল না তাই বারো পাশ করেই বায়না ধরি ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার । আমার বয়সি সবাই যেমন করেছে । কারণও একটাই, পশ্চিমবাংলায় শিক্ষার পরিবেশ নেই । তার উপর আমি তো কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পাশআউট, ভর্তিটর্তির ব্যাপারেও একটু বৈষম্য হয় । সিবিএসসির আশি নম্বর আর কলকাতার ষাটকে এক বন্ধনীতে রেখে ভর্তি হয় ।
কলকাতার প্রতি না থাকলেও, শিলচরে আমার মামার বাড়ির প্রতি একটা টান আছে । একটা আবেগের ব্যাপার, জন্মভূমি বলে কথা । আসলে তাও নয়, আমার ছোট মামার বাড়ি বরাক উপত্যকার এক গ্রামে যেখানে আমার দাদু দিদা ছিলেন । আমার তিন মামা তিন মাসি, একজন ছাড়া সবাই থাকে শিলচরে । ছোট মামার বাড়ি গিয়ে একবার বৃষ্টির শব্দ শুনেছিলাম সারারাত জেগে । ইস পল্টুর টিনে জল তরঙ্গ বেজেই গেছে সারারাত । আমার বাবার বাড়ি ছিল বাজারিছড়া নামে এক গ্রামে । বাবা বলে ওটাও তাঁবু, পরের জমিতে শনবাঁশের বাড়ি । আমার বাবার কোন স্থায়ী আস্থানা হয় নি আসাম দেশে, নিজের কোনো বাড়ি ছিল না । বাবার জন্ম দেশভাগের দুবছর পর, বাবা কিন্তু উদ্বাস্তু নয় । যদিও বাবার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের পাড়াগাঁয়ে । গ্রামের নাম রাউলি, পরগণা ছাতক । বাবার দাদু চাকরি করতেন মেদলি চা বাগানে এখন নাম পাল্টে হয়েছে শিপানজুরি টি এস্টেট । আমার ঠাকুরদা কিছুই করতেন না, তাই কোন বাড়িঘর ছিল না । ভাড়াবাড়িতে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবন । বাবা বলে উদ্বাস্তু হলেই বা কী না হলেই বা কী, ওরা নাকি জন্ম বেদুইন । দেশের বাড়ি রাউলি এত অনুন্নত যে ওখানে বাস করা যায় না । বাবার অনেক আত্মীয় স্বাধীনতার পর থেকে বরাক উপত্যকায় এবং আসামে এসে বসবাস করেছে । শরণার্থীর সুযোগ সুবিধা জায়গাজমি পেয়েছে । বাবার বাবা ওসব কিছুই করেন নি । কেন করেন নি বলতে পারে নি বাবা, তবে আমাকে মজা করে বলেছে তার বাবা রবীন্দ্রনাথের আদর্শ বাঙালি ছিলেন । তিনি যেরকম বলেছেন হুবহু তেমন, তৈলঢালা স্নিগ্ধতনু নিদ্রারসে ভরা , মাথায় ছোট বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান ।
এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভাল ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার পর আমায় নিশি পায় । নিশির ডাকে পড়াশুনা ছেড়ে দিই । মনি হাজারিকা নামে আমার রুমমেট আসামের মেয়ে, আমাকে অসমিয়া শেখায় । আর দুই বন্ধু মিলে শহর তোলপাড় করি । এক বছর গোল্লায় যায় । পরের বছর পাশ করে ফিরে আসি কলকাতায় । এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়ে যাই । কলকাতায় মন বসে না বলে ফিরে যাই ব্যাঙ্গালোর আবার । আবার চাকরি । প্রেমটেম করি কয়েকটা, দক্ষিণ ভারতের সব ভাষাভাষী ছেলের সঙ্গে প্রেম করেছি, কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে হিসেবি থেকেছি । শেষ পর্যায়ে একটি পাঞ্জাবি ছেলে কৃপালকেই বিয়ে করব বলে ঠিক করে ফেলি । নারকেল তেঁতুল আর কারিপাতার গন্ধ থেকে তো মুক্তি । আপাতত থাক আমার প্রেম কথা ।
বাবার কথা বলতে গিয়ে এদিক ওদিক হয়ে যাচ্ছে । বাবা কেন কলকাতা চলে এল সে কথা তো শেষ করি নি । যখন শুনল ছাত্রনেতাদের সঙ্গে অ্যাকর্ড হয়েছে রাজীব গান্ধির, বাবার খুব মন খারাপ হয়ে গেল । সমঝোতার শর্তে ২৪ মার্চ ১৯৭১ এর পর যারাই আসামে এসেছে সবাই বিদেশি । এ যেন গুপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমার সকাল আর মধ্যাহ্নের সীমারেখা । যদ্যপি এই যষ্টি দণ্ড ঐ প্রস্তর খণ্ড স্পর্শ না করিবে তদ্যপি সকাল । খুব আনন্দ হয়, খুব উল্লাস আসামে । ছাত্রনেতা প্রফুল্ল মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী ভৃগু ফুকুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে আসামের রাজ্যপাট দখল করে । বাঙালিও কেন যেন খুশি হয় । প্রবাদেই আছে গালাগালি খেলে বাঙালির আনন্দের সীমা থাকে না । বাঙালি খুশি, কারণ হয়তো সে সমঝোতার শর্ত নাকচ করেছে মনে মনে । বাঙালি কিন্তু বাঙালি তাড়ানোর মিছিলে হাঁটে। স্লোগানও দেয়, খেদিব লাগিব মানে তাড়াতেই হবে । স্লোগানকে বিদ্রূপও করে । বলে, বুঝলাম তো, যাইতাম কৈ । কোথায় বিতাড়ন । বাংলাদেশ নেবে না এক পিসও, ধাক্কা দিলেও নেবে না । বুদ্ধিমান বাঙালি বলে, বাচ্চা ছেলেদের বুঝিয়েছে, ওরকম হয় নাকি । এক দেশে দুরকম নাগরিকত্ব, সব কেন্দ্রীয় ধাপ্পা । বাবা কিন্তু এত সহজে বোঝে নি ।
বাবারও এই এক দোষ আমার মতো । এককথায় অন্যকথায় চলে যায় । তাই বাবাকে আবার ফিরিয়ে এনেছি পূর্বকথায় । কেন বলল আমার জন্য ছেড়ে এল তার স্বদেশ আর দ্বিতীয় স্বদেশ । বাবা বলেছে ১৯৭১ যদি ভিত্তিবর্ষ হয় তাহলে প্রমাণ করতে পারবে না অনেকেই । গ্রামের মানুষ কিংবা ছোট ছোট শহরের মানুষ কোথায় নথিপত্র নিয়ে সচেতন । যদিও বা প্রমাণিত হয় নাগরিকত্ব তাহলে দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণির হয়ে থাকতে হবে । সন্তান সন্ততিরা সরকারি চাকরি পাবে না । ভাল পড়াশুনার সুযোগ পাবে না, একটা বৈষম্য থাকবে । আমার বাবা কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ আউড়ায় বলে তিনিই স্থায়ী ঠিকানা । তিনিই জানিয়েরছেন জাতি বৈষম্যের বিষফল কথা । বলেছেন, জাতি প্রেম নাম ধরি প্রচণ্ড অন্যায়, ধর্মেরে ভাসাতে চায় বলের বন্যায় ।
কলকাতা আসার পর বাবা শুধু ঠিকানা যোগাড় করে গেছে । প্যানকার্ড, ভোটারকার্ড, অফিসের আইডিকার্ড, রেশনকার্ড । ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়েছে কিন্তু গাড়ি নেই, এখন তো আধারকার্ডও আছে । প্যান ছাড়া সব কটাতেই ঠিকানা । আমি বাবাকে বলি তাহলে আর এত আতান্তর কেন । বাবা মেনে নেয় । বলে চাকরির প্রথম দিনের কথা । ব্যাঙ্কের ডিগবয় শাখার ম্যানেজার কাকতিবাবু বলেছিলেন, ফর্ম ফিলাপ করে দিতে । তারপর বললেন পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস । স্থায়ী ঠিকানা বলে তো কিছু নেই । বাবা তখন হতভম্ব । ভাবছে চাকরিটা গেল । নেই স্যার শুনে কাকতিবাবু বললেন দিয়ে দাও কিছু একটা । তখনই মনে পড়ে বাবার পিসির বাড়ির কথা । লক্ষীপুরে নদীর পারে দোতালা বাড়ি । প্রায়ই যেত শিলচর থেকে পিসিমার হাতের রান্না খেতে আর ভাইবোনদের সঙ্গে হুল্লোড় করতে । বাবা সাহসে ভর করে লিখে দেয় মিছে কথায় তার স্থায়ী ঠিকানা । লক্ষীপুর কাছাড় আসাম । সেই দাগটা খুব খচখচ করে বাবার । আমি বলি সে তো চুকে গেছে । ওটা মুছে গেছে । এখন তো ঠিকানা কলকাতা । মহানগরের নাগরিক ।
আমার মুখে মুছে যাওয়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলেছিল বাবা । মুছে যে যায় নি সে কথাটাই বলে । বলে সেই মিথ্যেকেই একদিন সত্য করে তুলেছিল । আমাকে অবাক করে বাবা তখন গল্পের ভেতর নিয়ে এল এক মোচড় । সে এক গল্প বটে । সঠিক কবে বাবার কাছ থেকে শুনেছি মনে নেই । একবারে বলেছে, নাকি কিস্তিতে কিস্তিতে বলেছে কে জানে । কারণ আমার কাছে গল্পটার বাস্তবতা আমার নিজের । পুরোটাই যেন আমি চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি । তাই বাবার মুখ্য বয়ানে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বলে যাব বাবার স্থায়ী ঠিকানা মুছে না যাওয়ার গল্প । মূল কথক হিসেবে আমিও মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে যাব যাতে বিষয়ান্তরে না যায় কথাবস্তু ।
বাবার এক সহকর্মী আই লোরেন্দ্র সিং । সহকর্মী শুধু নয়, সহপাঠীও, শিলচর কাছাড় কলেজে একসঙ্গে পড়েছে বি কম । ডিগবয় মিশন পাড়াতে দুইবন্ধু একসঙ্গে থেকেছে বাসা ভাড়া নিয়ে । লোরেন্দ্রকাকু লক্ষীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা । বাবা বলে লক্ষীপুর শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই মণিপুরি । লোরেন্দ্রকাকুও তাই । বাবা কাকুকে প্রায়ই বলত তার স্থায়ী ঠিকানার কথা । অফিস রেকর্ডে তার মিথ্যে তথ্যের কথা । বলে বলে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল । শেষমেশ বলল, একটা জমি কিনবে লক্ষীপুরে কমদামে, নদীর পারে হলে খুব ভাল হয় । বাবার মনে তার পিসিদের বাড়ির শৈশবস্মৃতি সৌন্দর্যে তখনও অপরূপ । বাবা বলত, বলতে বলতে হারিয়ে যেত দোতলা বাড়ির অন্দরে । কখনও বাড়ির উঠোনে কামিনী গাছের নিচে । কী আকুল করা ফুলের গন্ধ, বাবার পিসিমা বলতেন কামিনী ফুলের গাছে সাপ থাকে । গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে চলে আসে । কখনও ভরা বর্ষার দোতলা থেকে দেখতে কী বিশাল লাগত ঘোলা জলের ফোঁসফোঁসানো বরাক নদীকে । হাত বাড়ালেই যেন নদীর জলে নৌকো । একদিন রাতে মেজদা বলল, চল । বৃষ্টির রাতে হাফপ্যান্ট পরেই বেরিয়ে গেল দাদার হাত ধরে মাছ ধরতে । ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ছিল বাবা, শুধু খলুই এগিয়ে দেওয়ার কাজ করেছে মেঘেঢাকা পূর্ণিমার রাতে । মেঘ সরে গেলে, সেকি এক অপার্থিব দৃশ্য জলে । রুপোলী মাছেরা সব উঠে এসেছে নৌকো ঘিরে । ওরকম দৃশ্য আর দেখে নি বাবা । বাবার মনোবাসনা পূর্ণ করে লোরেন্দ্রকাকু একদিন বলল, পাওয়া গেছে জমি । নদীর পারে এবং শহর থেকে একটু দূরে । কাকু অর্ধেক, বাবা অর্ধেক দিয়ে কিনে নেয় খুব সস্তায় । এক হাজার করে কাঠা, এক বিঘা জমির জন্য দুই বন্ধু দেয় দশ দশ কুড়ি হাজার । দুজনেই জমি দেখে উকিল কাছারি স্ট্যাম্প পেপারে রেজিস্ট্রি করে চলে এল শুভক্ষণে । জমিটা কিনেছে তাদেরই পরিচিত এক মোগলাইর কাছ থেকে । বাবা বলেছে মণিপুরি মুসলমানকে মোগলাই বলে। হয়তো তাচ্ছিল্য করেই বলে । নুরুদ্দিনের এক পিসিমা ছাড়া আর কেউ নেই, জমিটা তার পিসির । অনেক চেষ্টা করেও একটা পিআরসি যোগাড় করতে পারেনি বলে নূর চাকরিবাকরিও পায় নি । বাবা বলে এসব চক্রান্ত, অসমিয়া ছাড়া যাতে আর কেউ চাকরি না পায় তাই শাসকপক্ষীয় চালাকি । আমি বাবাকে বলি নূরউদ্দিন তো বাঙালি নয় । তাতে কী , বাবা বলেছে, অসমিয়া ছাড়া সবাই বিদেশি আসামে । বাবাকে বলি, তো পিআরসি টা কী, কী তার ব্যবহার । খায়, না সাজিয়ে রাখে ফুলদানিতে । বাবা পিআরসি জানে । বলেছে, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, স্থায়ী ঠিকানার প্রশংসাপত্র । বাবাকে বলি, থাকলে কী হয় । বলে, না থাকলে অনেক ফ্যাঁকড়া । বাবা রেগে গিয়ে মজা করে বলে হাড়মুড়মুড়ি হয়, বাঘে ছোঁয় । বলি, কোন আইন কানুনের বালাই নেই । না, সোজা ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে দেওয়া হয় । ওটা আবার কী । আমার চমকে দেওয়া প্রশ্নে বাবা আবার রাগে । রেগে বলে মুরগির খাঁচা । নুরুদ্দিন পিসির সম্পত্তি বিক্রি করে চলে যায় মণিপুরের থউবালে ।
বাবা লক্ষীপুরের জমিটা কিনে খুব তৃপ্তিতে আছে এটা বোঝা যায় । বলে মাঝেমাঝেই চলে গেছে নদীর পারে নিজের জমিতে বেড়াতে । অন্তত যতদিন আসামে ছিল । বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে সীমানা , নামজারি করিয়েছে । বাবার পিআরসি নেই । বলেছে পিআরসি দিয়ে কী হবে, চাকরিটা তো আছে, নদীর পারের বাড়িটা আছে । আসলে আসাম অ্যাকর্ড হওয়ার আগে ভাবে নি এরকম হবে । বাবাকে বলি তাহলে আর কিনলে কেন জমি । বাবার মাথায় তখন মিথ্যে তথ্য লেখার পোকা । পরের দিকে লোরেন্দ্রকাকুও বলেছে জমিটা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য । বলেছে, নদীর পারের জমির দাম বাড়ে না, কোনও দিন নদীর গর্ভে চলে যাবে । বাবা বিক্রি করবে না, কাকুকেও বিক্রি করতে দেয় না । কাকু বাবার জমি দেখাশোনা করে । বাবাকে বাঁশ বিক্রির টাকাও দিয়েছে একবার । এখন আর দেয় না । জমিটাতো দেখাশোনা করে, এতেই খুশি বাবা । বলে বেড়াটেড়া দিতেও খরচা আছে । কাকু খুব ভাল মানুষ, আমাদের কলকাতার বাড়িতে এসেও থেকে যায় । বাবা বলে রিটায়ার করে দেশে গিয়ে বাড়ি করবে, থাকবে । আমি যে ব্যাঙ্গালোর ছেড়ে কোথাও যাব না এনিয়ে বাবার একটা মনোব্যথা আছে । এটা তো ঠিকই ভারতের বড় শহর গুলির মধ্যে ব্যাঙ্গালোরের আকর্ষণ ভিন্ন । এমন নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ভারতের কোন বড় শহরে নেই । তাইতো বলা হয় ব্যাঙ্গালোর পেনশনভোগীদের স্বর্গ, বলা হয় বাগাননগর । বাবাকে বলি অবসর গ্রহণের পর কর্ণাটকে চলে আসুক, আর একটা স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যাবে । তবে লক্ষীপুরের জমি নিয়ে বাবার আবেগ দেখে আমিও দুম করে মত বদলে ফেলি । বলি থাকব না গার্ডেনসিটিতে । আমার জন্মদেশে চলে যাব। শিলচরে থাকব, মাঝেমধ্যে যাব বাবার সঙ্গে লক্ষীপুর ।
আবার ফিরে আসি আমার প্রেমপর্বে । এতসব হেতু আমার সামনে, কোনটা রাখি কোনটা ছাড়ি । নাগরিকত্ব নিয়ে আসামের এই সমস্যা আমাকেও জর্জরিত করে ফেলেছে । এক অপমান এবং পরাজয়ের মুখোমুখি । একটা লড়াই করারও দরকার । আমি কলকাতায় থাকি বা ব্যাঙ্গালোর থাকি আমার শেকড়টা তো বরাক উপত্যকায় । আমার বাবার তাঁবুবাড়ি বাজারিছড়ায়, আমার মামার বাড়ি শিলচর এবং ভুবনগ্রামে আর লক্ষীপুরে আমার বাবার স্থায়ী ঠিকানার জমি । ভোলেভালা বাবা মানুষটার স্বদেশ নিয়ে এক আবেগের চাপ । আমি জানি অবসরের পরে কিছুদিনের জন্য হলেও বাবা ফিরে যাবে তার স্বদেশে । আমি তাই এমতাবস্থায় চাপের মুখে পড়ে যাই । মামার বাড়ির ঢেউটিনে টাপুরটুপুর বৃষ্টির ধ্বনি, শহর শিলচরের শৈশবগন্ধ , বাজারিছড়ার না দেখা শনবাঁশের বাড়িতে ঠাকুমার কোলে বসে দোল খাওয়া বাবার নাদুসনুদুস মূর্তিটাও যে ডাকে, আয় চলে আয় মেয়ে । খুব মজা হবে ভেবে আমার সর্বভারতীয় বাঁধন আলগা করি । কৃপালকেও বলে দিই টাটা । বাবাকে বলি কাছাড়ের খাস সিলেটি ছেলে চাই ।
এতে আমার কোন অভিসন্ধি নেই । আসলে কম বয়সে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ায় একটু বেশি পেকে যাই । সমলিঙ্গ থেকে বিপরীতের প্রতি আকর্ষণে একটু বেশি মাখামাখি হয় ছেলেদের সঙ্গে । অচিরেই বুঝে যাই, ইংলিশ হিন্দি কিংবা দক্ষিণি ভাষায় প্রেম করায় ভাষাপ্রেমের ব্যাপার থাকে, কিন্তু বড় কষ্ট হয় ব্যবহারে । মানিয়ে নেওয়ায় একটু চাপ হয় । মাতৃভাষায় হৃদয়াবেগ যত তাৎক্ষণিক হয়, অনুবাদের ভাষায় হয় না । ধরা যাক খাওয়া দাওয়ার কথা, সিলেটিদের খাদ্যাভ্যাস একেবারেই আলাদা, পশ্চিমবঙ্গীয়দের সঙ্গে পর্যন্ত মেলে না । আমি সিদল ভর্তা খেতে ভালবাসি, ১০০ রকম ভর্তার রেসিপি আনিয়েছি বাংলাদেশ থেকে । তবে আমার মা রেসিপি বই দেখে রাঁধে না । চালকুমড়ো পাতায় সিদলের পুর দিয়ে একরকম পাতুরি বড়া করে । জিভে জল এসে যায় । সিদল হল পুঁটি মাছের একরকম নরম শুঁটকি । মা সেদ্ধ ডিমের রসা করে আধফালি করে চালের গুঁড়ি দিয়ে ভাজে । কী যে অমৃতপদ হয় । এসব আছে আমাদের । দুপুরের পদে শাক শুক্তো থাকে । থানকুনি পাতা বাটা কিংবা হিঞ্চে বা পলতাপাতার বড়া । ইংরেজি বলা ঝকঝকে সুদর্শন ভিনদেশী পাত্ররা পারবে খেতে কিংবা বলতে, শাকের মধ্যে পুঁই আর মাছের মধ্যে রুই । রকগানের সঙ্গে আমি নাচতে পারি উদ্দাম, বল্লে বল্লেও পারি, কিন্তু মাঝেমধ্যে ধামাইল নাচতেও তো মন চায়, চায় সোহাগ চাঁদ বদনির সুরে শরীর দোলাতে । তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা বলে কেউ একজন পাশে দাঁড়াবে না শ্রাবণ বিকেলে । এসব তো খুব কম চাওয়া, স্বভূমি ছাড়া আমি পাব না কোথায়ও । আমার সন্তান হামটি ডামটি শিখুক হাট্টিমাটিম টা কেন শিখবে না । লালকলম নীলকলমের ঝুলিঝাড়া কথকতা, ঠাকুরমার পায়ের বাড়ৈএ দোলে দোলে কিচ্ছা শুনবে না সিলেটি মায়ের সন্তান ।
আমি কিন্তু দেখতে অসুন্দর নই মোটে । আমি জানি আমার রেটিং । কয়েকজনের মাঝখানে থাকলে এমনকি অনেকজনের মধ্যে থাকলেও পুরুষরা আমাকে দেখে মুগ্ধ হয় পুরুষদেখায় আর মেয়েরা দেখে হিংসেচোখে । শিলচরের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য পাত্র হিসেবে হয়তো দুর্লভ ছিল, এরচে ভাল পাব না । আই আইটির প্রাক্তন, নিজের কোম্পানি দিল্লিতে । শিলচর থাকে দিল্লি যায় । শিকড়ের টানও বলে । প্রভূত ধনসম্পত্তি । ভেবে দেখলাম হবে না । আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাঝারি মানের, মার্কশিট দেখানো যাবে না । এসব ছেলেরা ডমিনেটিংও হয় । আজ দিল্লি কাল শিলচর করছে, একদিন বলবে স্টেটসে যাবে, সেটল করবে । তাই ফাৎনা উঠিয়ে নিয়েছি ।
পাওয়া গেল সুসিতকে । অনেকটাই মনের মতো । দেখেই মনে হয় খুব কেয়ারিং । গগনচুম্বী উচ্চাশা নেই আবার যথেষ্ট অর্থবানও বটে । মাঝারি পসারের ডেন্টিস্ট । বেড়ানোর শখ আছে, ড্রাইভার থাকলেও নিজে গাড়ি চালাতে পছন্দ করে । আমি পাশে থাকলে মনটা গুনগুন করে, শিলচর ছাড়িয়ে শিলকুড়ির পথে গিয়ে সুরের বানী মুখে আনে । এই পথ যদি না ইত্যাদি । খাদ্যরুচিতেও বেজায় মিল । থাক পুনরুক্তি দোষেরই হয় । তবে ডিট্টো, সেম টু সেম । শুধু দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে একটু জ্ঞান দেওয়ার বাতিক আছে । প্রথম পরিচয়েই বলে ফোকলা দাঁতের মানুষরাই কেন দশলাখ খরচ করে মড্যুলার কিচেন সাজায় । যারাই রান্নাঘর সাজাতে পয়সা খরচ করে তাদের সবারই দাঁতে নাকি ক্যাভিটি নয় গাম সমস্যা । কী দিয়ে খাবে কিচেনের মাল । মাল শব্দটায় একটু রুচিদোষ আছে । তবু আমার শেষ স্বয়ংবর সুসিতকেই নির্বাচন করে । সুসিত বলে বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে হবে । আমি বলি না । সে বলে আচ্ছা । মহা ফ্যাসাদ । এত বাধ্য হলে কী চলে, একটু তো ঠুকঠাক করতে হবে । আমি না বলতেই আচ্ছা হয়ে গেল । আমিই কী ঘোড়ার ডিম চাকরি করতে চাই । এক কথায় বললে কী হ্যাঁ করা যায় । আমিতো আর ওর মতো আনকোরা পিস নই । আমার সঙ্গে বিচিত্র সব চার দেওয়া বড়শি থাকে, খেলিয়ে খেলিয়ে ওঠাই । আসলে সুসিত তখন যে কোন শর্তেই রাজি । এই পাত্রীকেই বিয়ে করবে । শুধু বলল এনআরসি লাগবে । আমি পিআরসি জানি এনআরসি জানি না । তাই বলে দিলাম নেই । সে বলল করতে হবে । আমি বললাম, কেন লাগবে, বিবাহসূত্রে স্থায়ী বসবাসকারি হয়ে যায় সবাই । সে বলল আসামে হয় না । আমি তো আমার পিআরসির জ্ঞান নিয়ে চালিয়ে দিয়েছি এতক্ষণ । বুঝতে পারছি এনআরসিটা জটিল । কারণ সুসিতকে এই প্রথম তার বিয়ে নিয়ে চিন্তান্বিত লাগল ।
আমি আবার বাবার শরণাপন্ন হই । বাবাও জানে না, জানলেও তার আসাম যোগসূত্র সব জানে । ক্লিক করে । আই লোরেন্দ্র সিং । এবার সংলাপের আকারে বাবা আর কাকুর ফোনবার্তা সাজিয়ে দিই । লোরেন্দ্রকাকুর সংলাপগুলি আভাসে আর যুক্তিতে পুনর্গঠন করেছি । বাবার প্রশ্নছিল এতসব কাণ্ড ঘটে গেছে বাবাকে জানায় নি কেন । কাকু বলে,
: এখন তো তুই পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক তাই দরকার নেই ।
: নেই কেন? আমি যেকোনো সময় ফিরে যেতে পারি । আমার জমি আছে । অবসরের পর বাড়ি করব, খেতখামার করব । আমার মেয়েও আসবে । পাসপোর্ট লাগবে নাকি ? আমি এদেশের নাগরিক, ভারতরাষ্ট্রের ।
: এসব চলবে নারে ভাই । আসামের নাগরিকপঞ্জি নবায়ন হচ্ছে এবার ৬৪ বছর পর । আসামে বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল ভারত সরকার আর আসাম ছাত্র ইউনিয়ন আর আসাম গণসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ।
: জানি । এনআরসি টা কী বল ?
:ন্যাশেনেল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস । ১৯৫১ র পর আর নবায়ন হয় নি । রেজিস্টারে নাম উঠলে একটা মাদুলি দেওয়া হবে, পরে থাকতে হবে আইডি কার্ড ।
: এদিকে তো হচ্চে না, ওটা কী শুধু আসামের জন্য ?
: আসাম এনআরসি । ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১ র ২৪ মার্চ মধ্যরাত্রি পর্যন্ত ।
: মাঝরাত পেরিয়ে গেলে ?
: বিদেশি । শনাক্ত করণ হয়ে গেলে বিতাড়ন। বিতাড়নের দুরকম উপায় আছে । এক, ডিপোর্টেশন , দুদেশের মধ্যে কথাবার্তা বলে । দুই, ঘাড়ধাক্কা । সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ঠেলে দেওয়া । পোশাকি নাম পুশব্যাক ।
: আচ্ছা লোরেন্দ্র তুই কে ? আমার বন্ধু, না ঐ উগ্রজাতীয়তাবাদি আসাম সরকারের দালাল । ওদের ভাষায় কথা বলছিস ?
: আমি মণিপুরি ।
: শোনরে মণিপুরি গী মচা । ১৯৫১ র নাগরিকপঞ্জি আর ১৯৭১ এক মধ্যরাত্রি দিয়ে আমার কী হবে ? তোর আমার তো নামই নেই, ভোটার হইনি তখনও । যাদের নাম আছে বেশির ভাগ তো মরেই গেছে ।
: বাবা মা ঠাকুর্দা কারো নাম তো থাকবে । ওটাই উত্তরাধিকার। লিগ্যাসি । বের করতে হবে কম্পূটার থেকে ।
: আমি কম্পূটার জানি না । গ্রামের চাষা জানে না ।
: তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিতেই ওরা আটঘাট বেঁধে নেমেছে । সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে । লিগ্যাসি ডাটার সঙ্গে একটা এগারো সংখ্যার কোড দেওয়া থাকবে ।
: বেশ ।
: এবার লিগ্যাসির সঙ্গে তোকে জুড়ে দে । প্রমাণ কর তুই প্রদোষ বিশ্বাসের ছেলে । তারজন্য তথ্য দিতে হবে । চৌদ্দটি সহায়ক নথির যে কোন একটি তো চাই ।
: যেমন ?
: জমির পাট্টা দাগ ইত্যাদি ।
: মারদিস কেল্লা । আমার আছে । তুই বের করে দিতে পারবি আমার লিগ্যাসি ডাটা ? আচ্ছারে লোরেন্দ্র আসাম সরকার তো সবতাতেই ছিল ধীরগতি, বলা হয় ল্যান্ড অফ লাহেলাহে, মানে ধীরে ধীরে । হঠাৎ এই সক্রিয়তা কেন ?
: আমি তো মণিপুরি দালাল । বলব কেন ? এই তো গতকালই আসামের এক বিধায়ক, বরাক উপত্যকার, বললেন এনআরসি অবাস্তব । এসব শুধু বাঙালিকে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা । ভাতে মারার প্রকল্প । জানে মারারও । ইতিমধ্যে লিগ্যাসি ডাটা না পেয়ে ছসাতজন চাষি পরিবার আত্মহত্যা করে ফেলেছে ।
: আর এত রেকর্ড কী আছে আসামের । ৫১ র নাগরিকপঞ্জি, ৬৬ র ভোটার লিস্ট ?
: আছে কিছু । শুধু বাঙালির নাম গুলো নষ্ট হয়ে গেছে । আছে ডি ভোটার । সন্দেহজনক, ডি মানে ডাউটফুল । সন্দেহের বসে বন্দী করে রাখা, নির্যাতন । ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পুলিশি নির্যাতন হচ্ছে । যখন যাকে পছন্দ হচ্ছে না তখন তার নামের পাশেই ডি লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে । একটাও সন্দেহজনক ভোটারকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো যায় নি । ডিটেনশন ক্যাম্প নামের খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে । হিটলারের জার্মানির ইহুদিদের মতো । ওরা নিজের মাতৃভাষা ভুলে জার্মানিতে কথা বলত, তাও কী বাঁচল ? আসামেও বাঙালিরা হয়ে গেল অসমিয়া, চর এলাকায় মানুষ অসমিয়া হয়েও বাঁচতে পারে নি । শুধু বাঙালি নয় রে, অসমিয়া ছাড়া সবাই, এই মণিপুরি দালালও লিগ্যাসি ডাটার পেছনে দৌড়চ্ছে, কিছুই পাই নি এখনও ।
আরও অনেক কথা হয় দুই বন্ধুতে মান অভিমানের । তবে একটা কথা বুঝে যাই যে, নেট ঘাঁটলে কিছু পাওয়া যাবে । এবং পাই । বাজারিছড়ায় নেই মেদলিতেও নেই, মায়ের বাড়ি ভুবনগ্রামে নেই । তাহলে অনুসন্ধানের এলাকা একটু বড় করে নিই । কাছাড় জেলার প্রদোষ বিশ্বাসের নাম । পাওয়া যায় ঠাকুর্দার নাম ঠাকুমা ও জেঠুর নাম ও বাবা নেই । এগারো সংখ্যার লিগ্যাসি ডাটা কোড লিখে রাখি ৩১০-৪০৩৮-৮৮২৮ । ১১ নং শিলচর চক্র, শিলচর টাউন ওয়ার্ড নং ৭ ইলেক্টরেল খণ্ড ৭ । বাবাকে দেখাই, বাবার কী আনন্দ । বলে, সবাই নাকি পরিচিত, শ্রদ্ধেয় জন । প্রণয় কাকুর নাম আছে, প্রণয় কুমার চন্দ, দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত, কম্যুনিস্ট ছিলেন বিসি গুপ্তর বাড়ির সবার নাম, ব্রজমোহন গুপ্ত বাবার মাস্টারমশাই , স্কুলের সবচেয়ে ভালমানুষ স্যার । অঞ্জলি সোম সমর আদিত্য বাবার মামা রাধিকা রঞ্জন দাম দিদিমা মানদা সুন্দরী দাম । চায়ের দোকান অমর ভ্রমর দুই ভাই । বাবা ফিরে যায় লুপ্ত সময়ে । দুদিন ধরে ৬৬ এর ১১ নং নির্বাচন কেন্দ্র ঘুরে বেড়ায় । বারবার দেখে পরিচিত নামগুলি । একসময় ফিরে আসে স্বসময়ের বাস্তবতায় । লোরেন্দ্র কাকুকে ডাকে । বলে,
: শুধু আসাম কেন ? নাগরিকপঞ্জি তো হবে ভারতের । রাষ্ট্রের ?
: হবে হয়তো । এটা আসাম এনআরসি । বিশেষ আইন ।
: তাহলে আর দেশ কী ? কিসের নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ ?
: অ্যাকর্ড হয়েছে বলে নবায়ন ।
: বুঝলাম । আমার তো সব আছে । সহায়ক নথিও । লক্ষীপুরের জমি আছে । ফিলাপ করে তোর কাছে পাঠিয়ে দেব । জমা করে দিস ।
: অনলাইনেও হয়ে যাবে ।
বাবা আমাকে সব তথ্য দেয় । আমি একে একে সব আপলোড করি মনের আনন্দে । এনআরসি হয়ে গেলে আর বিয়ের বাধা থাকবে না । যতদিন না এনআরসি হচ্ছে আমার আর সুসিতের বিয়ে সূক্ষ্ম সুতোয় ঝুলে থাকে । সুসিত বলেছিল এনআরসি হয়ে যাবে । কী বুঝে বলেছিল কে জানে । তার তরফ থেকে চেষ্টার ত্রুটি করেনি । শেষ পর্যন্ত হাত তুলে দেয় । বলে হবে না । রাষ্ট্রহীন মানুষকে কী করে বিয়ে করবে সে নিয়ে ফাঁফরে পড়ে । আমি কিন্তু নেট ঘেঁটে জেনেছি এরকম বিয়ে হতে পারে, ভিন রাজ্যের নাগরিকের ক্ষেত্রে সদর্থক সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার । তবে আমার ক্ষেত্রে বিষয় অন্য। ওকে আশ্বস্ত করে বলি লিগ্যাসি ডাটা পাওয়া গেছে, সহায়ক তথ্য ও আছে । সুসিত আবার খুশি হয়ে বলে এবার এলে করিমগঞ্জের খাই খাই হোটেলে পেটপুরে খাবে দুজনে ।
বাবার পাঠানো তথ্য বাতিল হয়ে যায় । ওরকম কোন দাগ পাট্টার সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় নি লক্ষীপুরে । বাবা রেগে যায়, বললেই হল নাকি । কাকে নালিশ করলে সুরাহা হবে বুঝতে না পেরে লোরেন্দ্র কাকুকেই বলে,
: এ কী করে হয় ? আমাদের জমি, দুজনে মিলে কিনলাম , বেড়া দিলাম, নামজারি হল । আমিন ডেকে জরিপ পর্যন্ত করানো হল । এখন বলছে দাগ পাট্টা নেই ।
লোরেন্দ্র কাকু চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ । তারপর বলে,
: নেইরে । নতুন জরিপ হওয়ায় দাগ পাট্টা মুছে গেছে ।
: মুছে গেলেই হল । দাগ পাট্টা মুছে যায়, শেলেটের লেখা নাকি ? তুই মেরে দিয়েছিস শালা । মণিপুরিরা সব পারে ডাকাতের জাত ।
বাবার দেওয়া সব অপবাদ কাকু মেনে নেয় । আমি তো শিশুবেলা থেকে দেখছি, কাকু বাবার সঙ্গে তঞ্চকতা করবে না । কাকুর কাছ থেকে যুক্তিসঙ্গত উত্তর না পেয়ে বাবা অসহায় হয়ে পড়ে । যা নয় তা বলে বন্ধুকে । হঠাৎ সব হারিয়ে গুম মেরে যায় বাবা । থতমত খেয়ে বসে থাকে উদাস দৃষ্টিতে । জমিটার অর্থমূল্য কিছু নয়, কিন্তু এর সঙ্গে যে আবেগ জড়িয়ে আছে কোটি টাকার । একটা গর্ব, স্থায়ী ঠিকানার মানসিক দলিল, ইচ্ছে করে ভুল তথ্য লেখার শুদ্ধি প্রমাণ । বাবার ফ্ল্যাট বাড়ি একদম পছন্দ নয়, কলকাতা শহরটাকে কোনদিন মেনে নিতে পারেনি নিজের বলে । তাই শেষ জীবনে একটা ছোট বাড়ি করবে ভেবেছিল, ইসপল্টুর চাল দেবে আর বর্ষার রাতে বৃষ্টি পতনের শব্দ শুনবে । মানুষ তো একা থাকতে পারে না, তাই মুখোমুখি বাড়িতে থাকবে ভেবেছিল দুই বন্ধু । বর্ষার টইটুম্বুর জলে নৌকো করে মাছ ধরবে । আর শীতের সময় নদীর চরে লাইশাক সিম ধনে ফুলকপি বাঁধাকপির বিচরা করবে । লোরেন্দ্র কাকুকে বলেছে বাড়ির সীমানা নিয়ে ওর সঙ্গে ঝগড়াও করবে । স্বপ্নের সঙ্গে যে বাবার হৃদয় জুড়ে ছিল তার পরিচয় আর স্থায়ী ঠিকানা । আমারও ভাবতে অবাক লাগে লোরেন্দ্রকাকু পর্যন্ত কী করে মেনে নিল দাগ পাট্টা হারিয়ে যাওয়ার গল্প । কিছু একটা তো আছে রহস্য ।
বাবাকে লুকিয়ে আমি টেলিফোন করি । কাকু আমার গলা পেয়েই ঝরঝর করে কাঁদে । বলে,
: তোর বাপটা একটা বোকা, মাথামোটা । আমাকেও তার বোকামির সামিল করে নিয়েছিল । আমাদের জমিটা বড় সুন্দর ছিল রে । দুদিকে দুটো বাঁশ ঝাড় ছিল । তোর বাবা বলত বাঁশের করুল আর চেঙ মাছের পোনা দিয়ে কড়ু হয় । আমরাও খাই, ইরম্বায় দিই । হারিয়ে গেল ।
: জমিটার কী হল কাকু ?
: সে কি আজকের কথা ? অনেক বছর আগেই বরাক নদী নিয়ে নেয় তোর বাবার পরিচয়, স্থায়ী ঠিকানা ।
: বাবাকে জানাও নি কেন ?
: তোর বাবাকে জানিস না ? কেমন আবেগপ্রবণ । তুইও থাকিস ব্যাঙ্গালোর । বুড়োবুড়ি দুজন একা একা । আমার উপর এত ভরসা করেছিল । রাখতে পারলাম না । শুনলি না আমাকে কত কথা শুনিয়ে দিল ঠগ জোচ্চার ।
: ওসব তোমাদের কথা, আমি কি জানি ।
পাগলের কথায় আমিও কান দিই না । শুধু দেখে রাখিস। কোন কাণ্ড না ঘটিয়ে দেয় ।
বাবা কাণ্ড একটা ঘটিয়েছে সত্যি । রিটায়ার করে কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে । সব টাকা পয়সা নিয়ে রওয়ানা দেয় শিলচর অভিমুখে। আবার শিলচর শহরের উপকণ্ঠে রামনগরে নদীর পারে চারকাঠা জমি কেনে । বাড়ি বানিয়ে বসবাসও শুরু করে দেয় । বাবাকে কেউ এনআরসি র কথা বললে চুপ মেরে থাকে । বাবা আমাকে বলে দেখি কে তাড়ায় তার স্বদেশ থেকে ।
সুসিতও বাবার অনুগত হয়ে আসাম এনআরসিতে নামহীন আমাকে বিয়ে করে । সুসিতের অনুরোধে অনেক নকল গাঁইগুই করে ব্যাঙ্গালোরের চাকরিও ছেড়ে দিই ।
এখানে আমার নামটা জরুরি নয় । কিন্তু আমার বাবা স্বদেশ বিশ্বাসের নামটা জরুরি । কারণ গল্পে নায়ক নাম থাকাটা দস্তুর ।
(কৃতজ্ঞতা: ঈশানের পুঞ্জমেঘ)
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এসআর/মার্চ ১১, ২০১৬)
পাঠকের মতামত:

- তিউনিসিয়ায় আটকে পড়েছেন ৩২ বাংলাদেশি
- কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি এনসিপির
- মেজর সিনহা হত্যা: ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু
- কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৩
- বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
- অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা বাতিল
- কুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টা, কথা বলছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে
- বিওয়াইডি বাংলাদেশ আয়োজন করল সিলায়ন সিক্স হস্তান্তর অনুষ্ঠান
- ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করার উদ্যোগ ওয়ালটনের
- ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী জোনের ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক এর ৪২২তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান
- ‘১২ বছরে সাগর-রুনি মামলার অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে’
- সবার জন্য উন্মুক্ত হলো রেলওয়ে হাসপাতাল
- ধোনি জানালেন, দিনে পাঁচ লিটার দুধ খাওয়ার গল্প মিথ
- ১১২ রানের লিড নিয়ে দিন পার করল বাংলাদেশ
- নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্যানসার, দ্রুত সমাধান প্রয়োজন: বিএসইসি চেয়ারম্যান
- কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলায় নিহত বেড়ে ২৬
- বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ সেনা সদস্য নেবে কাতার: প্রেস সচিব
- এলএনজি সরবরাহ চুক্তি নবায়ন করতে সম্মত কাতার
- কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগ ব্লকেড
- ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে: তারেক রহমান
- বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে: আলী রীয়াজ
- মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি
- "পরবর্তী সরকার আমাদের সংস্কার ভুলে যাবে, কল্পনাও করতে পারি না"
- ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফা বৈঠক আজ
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে যারা
- সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের
- ১০০০ কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পোশাকশিল্প মালিকদের শঙ্কা
- ওয়াকফ নিয়ে মমতার খোলা চিঠি, দুষলেন আরএসএস’কে
- সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
- বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা
- বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ নিয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা
- ভবেশের মৃত্যু: ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের
- ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি: রিজভী
- আমাদের দেশের উন্নয়নে আমরা সিদ্ধান্ত নেব: জামায়াত আমির
- সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনের ট্রাইব্যুনালে হাজিরা আজ
- কাফনের কাপড় বেঁধে কারিগরি শিক্ষার্থীদের গণমিছিল
- সঠিক সমালোচনা করুন কিন্তু গুজব ছড়াবেন না : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
- ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, এ ধরনের ফাজলামি বাদ দেন’
- পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’ : ভারত
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় বাধা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- সবজির বাজার স্থিতিশীল, আগের দামেই মাছ-মুরগি
- ‘গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না’
- ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন
- রোহিঙ্গাদের জন্য ১ কোটি ২৭ লাখ ডলার দেবে সুইডেন
- ঢাকায় এসে আমি খুশি: আমনা বালুচ
- লন্ডনে কী আলোচনা হলো, জানালেন জামায়াত আমির
- শেষ কার্যদিবসে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
- গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩৭
- এবার প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার মডেল মেঘনা আলম
- ১ মে থেকে দেশজুড়ে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা
- বিএনপি সংস্কারেরই দল, বিপক্ষের না: নজরুল ইসলাম
- বিচার বিভাগ সংস্কার শিগগিরই: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
- বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চলবে
- গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক এমপি শাহ সারোয়ার কবীর আটক
- এসকিউ ব্রোকারেজের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত কমিটি
- হ্যান্ডবল ও সাঁতারে ১৯ বছর পর কোচ নিয়োগ
- পিএসএলে উড়ছেন রিশাদ, উড়ছে লাহোরও
- দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার
- লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াত আমির
- জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ
- ট্রাম্পের এক কর্মকর্তা ঢাকায়, আরেকজন আসছেন বুধবার
- ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিয়ে বিশ্বে ষষ্ঠ দূষিত শহর ঢাকা
- ধানমন্ডিতে গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়, ভাইরাল ভিডিওর সেই যুবক আটক
- গাজায় নিহত আরও ২৩ ফিলিস্তিনি, প্রাণহানি ছাড়াল ৫১ হাজার
- বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশি জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪২১তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
- ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফিচারসমৃদ্ধ স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শন করছে ওয়ালটন
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- মার্সেল ফ্রিজ কিনে ১০ লাখ টাকা পেলেন কুষ্টিয়ার মিঠুন
- ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪২০তম পর্ষদ সভা
- বিশ্ব পানি দিবসে ওয়ালটন বাজারে আনল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়াটার পিউরিফায়ার
- পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’ : ভারত
- ১ মে থেকে দেশজুড়ে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা
- বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা
- এবার প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার মডেল মেঘনা আলম
- বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চলবে
- ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, এ ধরনের ফাজলামি বাদ দেন’
- ওয়াকফ নিয়ে মমতার খোলা চিঠি, দুষলেন আরএসএস’কে
- বিচার বিভাগ সংস্কার শিগগিরই: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় বাধা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- রোহিঙ্গাদের জন্য ১ কোটি ২৭ লাখ ডলার দেবে সুইডেন
- ঢাকায় এসে আমি খুশি: আমনা বালুচ
- আমাদের দেশের উন্নয়নে আমরা সিদ্ধান্ত নেব: জামায়াত আমির
- বিএনপি সংস্কারেরই দল, বিপক্ষের না: নজরুল ইসলাম
- সঠিক সমালোচনা করুন কিন্তু গুজব ছড়াবেন না : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
- গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩৭
- ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি: রিজভী
- সবজির বাজার স্থিতিশীল, আগের দামেই মাছ-মুরগি
- ভবেশের মৃত্যু: ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের
- ‘গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না’
- শেষ কার্যদিবসে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
- লন্ডনে কী আলোচনা হলো, জানালেন জামায়াত আমির
- ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন
- সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
- বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ নিয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা
- কাফনের কাপড় বেঁধে কারিগরি শিক্ষার্থীদের গণমিছিল
এর সর্বশেষ খবর
- এর সব খবর
