thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২২ মে 24, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১৪ জিলকদ  1445

দেড় শ’ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ

২০১৬ মার্চ ১৬ ১৭:২৯:১৪
দেড় শ’ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ

সাইফুল ইসলাম শিল্পী, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ওয়াকফ স্টেটের দেড় শ’ বছরের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রভাবশালী একটি মহল। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নগরীর চন্দনপুরা আব্দুল হামিদ সওদাগর মসজিদ পুকুরটি দেড় শ’ বছরের পুরোনো। মসজিদের মুসল্লিদের ওজু করার জন্য সে সময়ে পুকুরটি খনন করা হলেও পরবর্তীতে এলাকার মানুষের জন্য একটি সম্পদে পরিণত হয়।

একসময় সুপেয় পানির জন্য পুকুরটি এলাকাবাসী ব্যবহার করত। ওয়াসার পানি আসার পর থেকে পুকুরের পানি ব্যবহার কম হলেও অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ পুকুরটি এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখন পুকুরটিতে দৃষ্টি পড়েছে প্রভাবশালী একটি মহলের। পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মার্কেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ইতিমধ্যে পুকুরটি প্রায় ভরাটও করা হয়ে গেছে।

পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (মহানগর) আজিজুর রহমান মল্লিক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই জলাশয় ভরাট করে কেউ কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে। সংশোধিত আইনে জলাধার ভরাটের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ দিয়ে বলা হয়েছে, বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। তবে চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়কের সংস্কারের জন্য সিডিএ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। রাস্তার জন্য যতটুকু দরকার তারা পুকুরের ততটুকু অংশ নিয়েছে। অন্য কেউ মাটি ফেলে পুকুর দখল করতে পারবে না। যারাই এ ধরনের কাজ করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে, প্রায় দেড় শ’ বছর আগে স্থানীয় আব্দুল হামিদ সওদাগর মসজিদ ও মসজিদসংলগ্ন দশ কাঠা জমির উপর একটি পুকুর খনন করেন। পরবর্তীতে তা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে সরকার। পুকুরটি খননের পর থেকে এলাকার জনসাধারণ ওজু করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে এর ব্যবহার করে আসছিলেন।

গুল-এজার বেগম স্কুলের বিপরীতে রাস্তার পাশে অবস্থিত শানবাঁধানো ঘাট দেওয়া দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি এত দিন পথচারীসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পুকুরের একপাশে চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়ক, যেটি বাকলিয়ার ডিসি রোডের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। অন্যপাশে সারি সারি নারিকেল গাছ। নগরীতে এ ধরনের পুকুর ও তার পাড়ের সৌন্দর্য কমই চোখে পড়ে। এত দিন এ সৌন্দর্য সাধারণ মানুষের চোখে পড়লেও এখন সেই পুকুর প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।

প্রতিদিন রাতে পুকুরটিতে ট্রাকে করে বালি এসে পড়ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মসজিদের আয়তন বাড়ানোর নামে মার্কেট নির্মাণের জন্য পুকুরটি ভরাট করতে চাইছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এর আগেও কয়েকবার পুকুরটি ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর বিরোধিতায় ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অভিযানে সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, আন্দরকিল্লা থেকে চকবাজার পর্যন্ত এটিই একমাত্র পুকুর। আশপাশের এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এ পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে। এখন মসজিদ কমিটি মসজিদ বড় করার নামে পুকুরটি ভরাট করে ফেলতে চাইছে। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসা করা।

তিনি বলেন, জনৈক মজু কন্ট্রাক্টরের যোগসাজশে পুকুরটি ভরাট করে সেখানে মার্কেট করা হচ্ছে। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে সোচ্চার। পুকুরটি ভরাট থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা আশা করছি।

সূত্রমতে, ২০০৯ সাল থেকে পুকুরটিতে প্রভাবশালী মহলের কুদৃষ্টি পড়ে। সেই থেকেই নানাভাবে পুকুরটি ভরাট করতে চেষ্টা চালায় মসজিদ পরিচালনা কমিটি। পুকুর ভরাট করে সেখানে মার্কেট করার উদ্যোগও নেওয়া হয় তখনই। তবে এলাকাবাসীর বিরোধিতায় সে উদ্যোগ থেকে ফিরে আসে মোতোয়াল্লি কমিটি। কিন্তু হাল ছাড়েনি তারা।

দুই বছর আগে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ চন্দনপুরা পূর্ব গলি সড়কের উন্নয়নকাজ করে সিডিএ। সড়কের প্রস্থ বাড়ানোর লক্ষ্যে সিডিএ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে পুকুরের পাশের ১০ ফুট জায়গা ভরাট করে। এ সুযোগে মসজিদ কমিটি পুকুরটি পুরোপুরি ভরাট করে ওই স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার জন্য আবার কার্যক্রম শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, অনেক পুরোনো পুকুর এটি। পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট করবে। অথচ তারা মসজিদের আয়তন বাড়ানোর জন্য পুকুরটি ভরাট করছে বলে প্রচার করছে। এলাকাবাসী বিরোধিতা করলেও তারা কাজ অব্যাহত রেখেছে।

ইতিমধ্যে পুকুরের পুরোটাই ভরাট করা হয়ে গেছে। আবদুল হামিদ সওদাগর মসজিদ ভেঙে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। পাশাপাশি মসজিদের পুকুরটি বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা পুকুরে বালির উপর ভবন তৈরির পাইলিং কাজ চলছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক পুকুরের উপর পাইলিং কাজ করছে। মসজিদের ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলেও পুকুরে ভবন নির্মাণের কোনো অনুমতিও নেই। তা ছাড়া মসজিদ ভবন নির্মাণের অনুমতিতে সিডিএ উল্লেখ করেছে, ‘প্রস্তাবিত সাইটের পূর্ব দিকে একটি পুকুর বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত পুকুরের অংশ বাদ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে এবং বিদ্যমান পুকুরের আকৃতির কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ এ নীতিমালারও পাত্তা দিচ্ছে না মসজিদ কমিটি।

এ বিষয়ে কথা হলে আবদুল হামিদ ওয়াকফ স্টেটের মোতোয়াল্লি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না। পুকুর যেমন আছে, তেমন থাকবে। চারতলা ভবন হবে, সেজন্য পাইলিং কাজ চলছে। পাশের লোকজন ভুল বুঝে এসব কথা বলছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএসটি/এম/মার্চ ১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর