thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই 25, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২,  ৫ মহররম 1447

ভোগান্তির অপর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১৬:২১:৪৪
ভোগান্তির অপর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র!

মাহফুজ স্বপন, দ্য রিপোর্ট : জাতীয় পরিচয়পত্র হারানো ও সংশোধনের জন্য পরিচয়পত্র প্রকল্প অফিসে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। পরিচয়পত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন প্রকল্প অফিসে ধর্ণা দিলেও সুফল পাচ্ছে না।

যদিও ভোটারদের সহায়তার জন্য অনুসন্ধান কেন্দ্র রয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময় সেখানে কেউ থাকে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রকল্প অফিসে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি প্রকল্প অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, অফিসের সামনে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনের শেষ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা নরসিংদীর অশোক রায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করেছি। জিডি করার পর এখানে এসেছি নতুন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে। কিন্তু এখানে এসেই পড়তে হয়েছে নানা সমস্যায়। কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আইডি কার্ড হারানোর ফরম নিতে। কিন্তু তাও নিতে পারব কিনা জানি না। আবার ফরম সংগ্রহ করতে পারলেও জমা দিতে আরেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। অনেক দূর থেকে এসেছি। তাই এক দিনে সব কাজ সারতে পারলে অনেক উপকার হতো।’

পরিচয়পত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে চাঁদপুর থেকে আসা ইব্রাহীম আলী, বাগেরহাটের ছবুয়া বেগম, ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা আব্দুস সামাদ, কুমিল্লা থেকে আসা চাঁন মিয়া বলেন, সামান্য ভুল সংশোধন করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবাইকে ঢাকায় আসতে হয়। আসার পর প্রকল্প অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের আচার আচরণে আমরা অতিষ্ঠ। এ কাজের জন্য থানা থেকে জেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। প্রশাসনকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একেবারেই উদাসীন।

আয়নাল হক, রেহেনা, কাজী নুসরাত জাহান, তামিমুর রহমান সোহাগ অভিযোগ করে জানান, অনুসন্ধানে এসে কোনো তথ্যই জানতে পারছেন না। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। তবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ও অফিসের কিছু কর্মচারী তাদের নিজস্ব লোকদের ভেতরে নিয়ে কাজ করে দিচ্ছেন। লাইনে অপেক্ষমাণ মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। অভিযোগ করার জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আয়নাল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাচের ঘরে কর্তা ব্যক্তিরা বসে বাইরে কি হচ্ছে তা জানতে চান না।’

আরও অনেকে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অনেকে টাকা খরচ করে তাদের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্য কিছু দালাল সক্রিয় রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’

পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও এটি দেখার কেউ আছে বলে মনে করেন না প্রতিষ্ঠানটিরই অনেক কর্মকর্তা। তবে তারা তাদের পরিচয় প্রকাশে অপারগতার কথাও জানান।

তাদের মতে, এখানে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা অনেকেই অনভিজ্ঞ। তাদের অসদাচরণে অনেকে অসন্তুষ্ট হলেও কেউই কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠছে একটি দালাল চক্র।

জানা গেছে, প্রকল্পে কর্মরত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের অনেকে সময় বাঁচাতে পয়সা খরচ করেই কাজ সেরে নিচ্ছেন।

প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আক্তারুজ্জামান সিদ্দিকী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘লোকবলের অভাবে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এখন যে সমস্যা হচ্ছে এসব লোক নিয়োগের পর তা কিছুটা কমিয়ে আনতে পারব।’

সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী ৭/৮ মাসের মধ্যে সারাদেশে সব সার্ভার স্টেশনে এসব ডাটা ট্রান্সফার করতে পারলে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এ জন্য কিছু আইন বিধিবিধান তৈরি করতে হচ্ছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এসবি/এনআই/এইচএসএম/এএইচ/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর