thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউস সানি 1446

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহ্বান

পোশাকশিল্প শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১১:৩৩:৩০
পোশাকশিল্প শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের পোশাকশিল্প শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)।

এইচআরডাব্লিউ বৃহস্পতিবার এ আহ্বান জানিয়েছে।

এইচআরডাব্লিউ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের উচিত পোশাকশিল্প কারাখানা মালিক কর্তৃক ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠক শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখানো বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া। একই সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওয়ায় আনা।

নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিদেশি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের উচিত বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা।

এইচআরডাব্লিউ রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ২১টি কারখানার ৪৭ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এ সব শ্রমিকের দাবি, ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কোনো কোনো কারখানার ম্যানেজার ভয়ভীতি দেখিয়েছে ও দুর্ব্যবহার করেছে। এমনকি তাদের হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।

এইচআরডাব্লিউকে ট্রেড ইউনিয়নের কয়েকজন সংগঠক জানিয়েছেন, তাদের মারধর করা হয়েছে। অনেকে জানিয়েছেন, ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কারখানা মালিকরা অনেক সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ সব শ্রমিককে হুমকি ও তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

এইচআরডাব্লিউ জানায়, রানা প্লাজা ধসের পর গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে শ্রমিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন প্রণয়নের আগে হাতেগোনা কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিবন্ধন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে আইন প্রণয়নের পর ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা সহজ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০টিরও বেশি শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন করার আগে শতকরা ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ।

এইচআরডাব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ভবিষ্যতে রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা এড়াতে ও শ্রমিক শোষণ বন্ধে স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা উচিত। এ সব ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় কাজ করবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার অবশেষে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর নিবন্ধন দিতে শুরু করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এখন কারখানা মালিকরা যেন শ্রমিক নেতাদের ওপর নিপীড়ন না চালায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের তাদের কাজ করে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) উচিত শ্রমিক অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা এবং যে সব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের ওপর নিপীড়ন চালায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

কয়েকজন কারখানা মালিকেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডাব্লিউ। শ্রমিকরা তাদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানো ও নিপীড়নের অভিযোগ আনলেও কারখানা মালিকরা বলছেন অন্য কথা।

কারখানা মালিকদের ধারণা, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন পরিস্থিতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে না। একজন কারাখানা মালিক অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো ইউনিয়নকে পরিচালনা করার চেষ্টা করতে পারে বলে আরেক কারখানা মালিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে কিছু সুপারিশ করেছে এইচআরডাব্লিউ। এ সব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রম আইন প্রণয়ন ও আইন প্রয়োগ করা। কারখানা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা ও ইউনিয়ন গঠনের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা। ইউনিয়নবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা। শ্রমিকদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর তদন্ত করা এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।

এ ছাড়া কারখানার মালিক ও বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিও কয়েকটি সুপারিশ করেছে এইচআরডাব্লিউ।

এদিকে, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প কারখানায় শিশুদের দৈনিক ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত মানবেতর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে আইটিভির একটি তথ্যচিত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটেনভিত্তিক দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএন/এমডি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর