thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

জামায়াতের নতুন কৌশলের অংশ ঢিলেঢালা হরতাল!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ২১:১২:০০
জামায়াতের নতুন কৌশলের অংশ ঢিলেঢালা হরতাল!

কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : সহিংসতার পথ ছেড়ে আপাতত ঢিলেঢালাভাবেই কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত-শিবির। দেশী-বিদেশী চাপ, উপজেলা নির্বাচন এবং কোণঠাসা নেতাকর্মীদের আবারও সংঘবদ্ধ করতে আপাতত কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি।

এর অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার জামায়াতের আহ্বানে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালেও তেমন সহিংসতা দেখা যায়নি। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে হরতাল। জামায়াত ইসলামী সূত্রে এসব জানা গেছে।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে দলটি।

দলের সর্বোচ্চ নেতার মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতের এ কর্মসূচি হলেও অতীতের কর্মসূচিগুলোর মতো রাজপথে তেমন দেখা যায়নি নেতাকর্মীদের। রাজধানী ঢাকা তো বটেই জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলাগুলোতেও নেতাকর্মীরা জোরালোভাবে মাঠে নামেনি।

যেকোনো হরতাল কর্মসূচির আগের দিন বিকেল থেকেই জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের যানবাহন ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগসহ রাস্তায় সহিংসতা ছড়াতে দেখা গেছে অতীতে।

হঠাৎ জামায়াত-শিবির কেন সহিংস পথ থেকে ফিরে এলো? কেনই বা দলের সর্বোচ্চ নেতার জন্য দেওয়া হরতালে কর্মীরা মাঠে নামেনি? এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সবমহলে। তবে অনেকেই একে জামায়াতের কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

দীর্ঘদিন রাজপথে সহিংস থাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। আত্মগোপনে রয়েছে বাকিরাও। সাংগঠনিকভাবে জামায়াত-শিবির অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় কৌশল হিসেবেই কঠোর কর্মসূচি পরিহার এবং রাজপথে সহিংসতা-সংঘর্ষ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে শীর্ষ নেতারা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা যায়।

এছাড়া একের পর এক সহিংস কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির দেশ-বিদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো জামায়াতকে মধ্যমপন্থি ইসলামী দল হিসেবে জানলেও ক্রমেই তাদের ধারণায় চিড় ধরছিল। এর অংশ হিসেবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টেও জামায়াত থেকে দূরে থাকতে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

জামায়াতের একটি অংশ মনে করে সহিংস রাজনীতি করায় দলের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। একইভাবে মাঠপর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, সরকারই সুকৌশলে জামায়াতকে বারবার সহিংসতায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। উদ্দেশ্য সন্ত্রাসী দল হিসেবে জামায়াতকে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু এ ব্যাপারে সতর্কতার সাথে এগুতে চান দলটির নেতারা।

জামায়াত সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন তাদের টার্গেট নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী দিয়ে সন্তোষজনক ফলাফল ঘরে আনা। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে। যেখানে দলীয় অবস্থান ভাল সেখানেই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। কোথাও কোথাও বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে আবার কোথাও আলাদাভাবে নির্বাচন করছে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা।

সূত্র জানায়, আপাতত জামায়াত উপজেলা নির্বাচনের ফসল ঘরে তুলতে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পারতপক্ষে কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। এর মধ্যে নেতাকর্মীদের চাঙা করে দলকে সংগঠিত করাই মূল টার্গেট জামায়াতের।

এ ব্যাপারে জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ দাবি করেন, তাদের হরতাল সফল হয়েছে। দেশবাসী শান্তিপূর্ণভাবে জামায়াতের হরতাল সফল করেছে। তিনি বলেন, ‘মাওলানা নিজামীকে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হত্যা করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরকারের রক্তচক্ষু, গুলি ও গণগ্রেফতার উপেক্ষা করে সারাদেশে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।’ এজন্য তিনি দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানান।

তিনি বলেন, ‘সরকার বেছে বেছে জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। জনগণ হরতাল সফল করার মাধ্যমে সরকারের গণহত্যা ও গণনির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’ মতিউর রহমান নিজামীকে নির্দোষ দাবি করে অবিলম্বে তিনিসহ সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মকবুল আহমাদ।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর