thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউস সানি 1446

পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানছে না বিজেএমসি

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলের শ্রমিকরা বিপাকে

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১০:৩৫:৪৬
খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলের শ্রমিকরা বিপাকে

খুলনা অফিস : খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি পাটকলের প্রায় ৮৯ হাজার শ্রমিকের বকেয়া অর্থ চেকের পরিবর্তে স্লিপের মাধ্যমে নগদ পরিশোধের জন্য বিজেএমসিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে এ সব পাটকলের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন।

চেকের পরিবর্তে স্লিপ কেন- সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই প্রশ্ন রাখেন খুলনার পাটকল শ্রমিক নেতা মো. হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, বিজেএমসির নির্দেশ মেনে চেকের মাধ্যমে যদি এরিয়ার অর্থগ্রহণ করা হয়, তাহলে শ্রমিকদের নিজ নামে ব্যাংকে হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খুলতে হবে। সে হিসাবে খুলনা অঞ্চলের ৭টি মিলের প্রায় ৮৯ হাজার শ্রমিকের হিসাব চালুর প্রয়োজন। কিন্তু অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যাদের পাওনা খুবই সামান্য এবং এর একটি বড় অংশই ব্যাংকে ব্যয় হবে। এছাড়া অধিকাংশ অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত শ্রমিকের পক্ষে হিসাব পরিচালনা করা বড় একটি সমস্যা। ফলে চেকের পরিবর্তে পূর্বের মতো স্লিপের মাধ্যমে নগদ অর্থের দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা।

খুলনার প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, ইতোমধ্যেই পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের বকেয়ার অর্থ চেকের পরিবর্তে স্লিপের মাধ্যমে নগদ পরিশোধের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি পাটকলের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশনের বকেয়া মজুরির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৪০০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর বরাদ্দ করা হয়। এর পরদিন ৭ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করার সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের টাকা বরাদ্দপত্রের ‘ক’ নং অনুচ্ছেদে ‘অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ’-এর জন্য শর্তারোপ করা হয়। এরপর মিল কর্তৃপক্ষ তৃতীয় কিস্তির টাকা নগদ পরিশোধ করে। সে মোতাবেক চতুর্থ কিস্তির টাকাও নগদ পরিশোধের দাবি করা হয় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই শ্রমিকদের এ অর্থ নগদ পরিশোধ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। অন্যদিকে, শ্রমিকরাও তাদের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

এ প্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি পাটকলের শ্রমিক নেতারা বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও সংশ্লিষ্ট সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানান।

ওই সভায় খুলনার প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি শাহানা শারমীন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর, ইস্টর্ন জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, স্টার জুট মিলের সভাপতি গাজী মাসুদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ, হাফিজ জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, আমিন জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, রাজশাহী জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেন, করিম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ও মো. আব্দুল সালাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, শ্রমিক নেতাদের সাথে সাক্ষাতের পর গত ২৮ জানুয়ারি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের (প্রশাসন-পাট-১ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব নীলরতন সরকার স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লেখ করা হয়- তৃতীয় কিস্তির মতো চতুর্থ কিস্তির টাকাও শ্রমিকরা দাবি করছেন। কারণ মিলের শ্রমিকরা অনেকেই অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত হওয়ায় তাদের পক্ষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা যথেষ্ট দূরূহ ও কষ্ঠসাধ্য। শ্রমিকদের মজুরি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করাও সময়সাপেক্ষ। এছাড়া ‘চেক’ শর্তের কারণে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে।

এ অবস্থায় ৬ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দপত্রের শর্তের পরিবর্তে ‘পূর্বের ন্যায় নগদ (ক্যাশ) পরিশোধ করার বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ এ আদেশটি অর্থ সচিব এবং বিজেএমসির চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মিলগুলোতে গত এক সপ্তাহেও সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি।

তীব্র ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি শাহানা শারমীন বলেন, যেখানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেখানে বিজেএমসি তা মানছে না। এটি বিস্ময়কর। এর সমাধান না হলে শ্রমিক আন্দোলন হবে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। তিনি বিজেএমসি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের লিয়াজো কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর নূরী বলেন, এ সংক্রান্ত বিজেএমসির কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা পাওয়া গেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও বিজেএমসির মাধ্যমে আসতে হবে। বিজেএমসির নির্দেশনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার তাদের নেই। ফলে শ্রমিকদের চেক গ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোর মধ্যে ক্রিসেন্টে ২৭ হাজার, প্লাটিনামে ১৪ হাজার এবং ইস্টার্ণ, স্টার, আলিম, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল মিলিয়ে গড়ে ৮ হাজার করে প্রায় ৮৯ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এটি/এমএইচও/এমডি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর