thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

‘আমাদের দেশে বিশ্বমানের প্রচুর কাজ হচ্ছে’

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৮ ২১:৩১:৪২
‘আমাদের দেশে বিশ্বমানের প্রচুর কাজ হচ্ছে’

আদিত্য রুপু, দ্য রিপোর্ট : সেজুল হোসেন মূলত কবি হলেও এরই মধ্যে গীতিকার হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি লিখছেন টিভি নাটক। বর্তমানে তিনি ‘স্বপ্নসিঁড়ি অডিও ভিজুয়াল’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও একটি অনলাইন বিনোদন পোর্টালের প্রধান সম্পাদক। আসছে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে সেজুলের কথা ও আয়োজনে অ্যালবাম ‘ইস্কাটনের চিঠি’। দ্য রিপোর্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন গান নিয়ে তার ভাবনার কথা।

দ্য রিপোর্ট : আপনার লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?

সেজুল হোসেন : আমার লেখালেখির শুরুটা চিঠি দিয়ে। আমার বড় বোনকে দেখতাম পাশের গ্রামে তার বান্ধবীকে মনের মাধুরী মিশিয়ে চিঠি লিখছেন। সেই চিঠি ও চিঠির উত্তর লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। একটা সময় নিজেও লিখেছি। তবে বেশিরভাগ চিঠি লিখতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-প্রবাসী বাবা ও চাচাকে। সেই সব চিঠিতে পারিবারিক অনটনের গল্প থাকত। বৈশাখে পাওয়া ধানের হিসাব থাকত। গ্রামের চলমান সমস্যা থাকত। মিথ্যে মামলায় থানা পুলিশ দ্বারা হয়রানির ভয় থাকত। মূলত লেখালেখি ব্যাপারটা সে সময় থেকেই। আমার প্রথম প্রকাশিত গান ‘দিন কাটে না’। সুমন কল্যাণের সংগীতে গানটি গেয়েছিলেন শাহিন। ‘গানচিল’ থেকে প্রকাশিত অ্যালবামের নামটি ছিল ‘ধূসর বিকেল’।

দ্য রিপোর্ট : গান লেখার ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা কিংবা কাকে নিজের আদর্শ মনে করেন ?

সেজুল হোসেন : অনুপ্রেরণার কথা বললে প্রকৃতির কথা বলতে হয়। কারণ আমার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী সুরমা আর অভাব অনটনে পিষ্ট মানুষের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কোনো ব্যক্তি বিশেষের অনুপ্রেরণা মনে পড়ে না। যদিও এখন কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা যুক্ত হয়েছে। আর আমার আদর্শের কেউ নেই। তবে গানের ভেতর দিয়ে কবির সুমনের বক্তব্যের ভঙ্গিকে পছন্দ করি।

দ্য রিপোর্ট : কবিতা লেখা, নাটকে অভিনয় সম্পর্কে বলুন...

সেজুল হোসেন : আমি তো কবিতা লিখি না। মাঝে মাঝে যখন বেদনাবোধ উসকে ওঠে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মাঝখানে পড়ে থেতলে যাই, তখন কবিতাই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়। মূলত ব্যক্তিগত আয়ুসীমাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যেই লেখা। লেখায় আমি আমার আয়ুটাকেই লিপিবদ্ধ করি। আর অভিনয়টা হুট করেই। পরিচালক আশুতোষ সুজন ফোন করে একদিন শাহবাগ যেতে বললেন। গিয়ে শুনি আমাকে কবি চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। অভিনয় মানে আলাদা করে কিছু না। আমরা আড্ডায় যা করি যেভাবে কথা বলি সেগুলোই করতে হবে, তাই করলাম। এই ধারাবাহিক নাটকটির নাম ‘জিরো পয়েন্ট’।

দ্য রিপোর্ট : বাংলাদেশের গান কতটুকু বিশ্বমানের হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন ?

সেজুল হোসেন : আমাদের দেশে ভালো এবং বিশ্বমানের প্রচুর কাজ হচ্ছে। তবে এই কাজগুলোর প্রমোশন কম। শ্রোতাদের কাছেও পৌঁছায় না। আজেবাজে কাজগুলোই বেশি প্রচার পাচ্ছে। মানুষ এসব শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

দ্য রিপোর্ট : আপনার লেখা গানের সংখ্যা কত?

সেজুল হোসেন : প্রকাশিত গানের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। গান লিখছি। লিখব আরও। যদিও গানকে কখনই আমি উঁচু মাপের শিল্প হিসেবে দেখি না। শব্দ গুনে গুনে লিখতে হয়। অন্ত্যমিল দিতে হয়। নানারকম বাধ্যবাধকতা আছে। তবে গান ভালো হলে প্রতিক্রিয়াটা দ্রুত পাওয়া যায়। সেটা ভালো লাগে। মানুষকে ভাবনার দোলায় দোলাতে দোলাতে বিনোদিত করতেই গান লিখি। লিখব হয়ত।

দ্য রিপোর্ট : ‘স্বপ্নসিঁড়ি’র ১০০ গানের প্রকল্পের কি খবর?

সেজুল হোসেন : আমার ১০০ গান নিয়ে ১২টি অ্যালবামের একটি প্রজেক্ট চলছে। ১০০ গান ১২টি অ্যালবামে গাইবেন ১০০জন শিল্পী। প্রথম অ্যালবাম ‘ইস্কাটনের চিঠি’ শ্রোতারা পাবেন আসছে ভালোবাসা দিবসে।

দ্য রিপোর্ট : এ পর্যন্ত কারা কারা আপনার গান গেয়েছেন কিংবা ‘ইস্কাটনের চিঠি’ অ্যালবামে কে কে গাইবেন ?

সেজুল হোসেন : এ পর্যন্ত শতাধিক শিল্পী আমার গান গেয়েছেন। তবে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মমতাজ, বাপ্পা মজুমদার, সুমন কল্যাণ, লুৎফর হাসান, রিংকু, কিশোর, পুতুল, শাহীন, ভারতীয় বাঙালি শিল্পী অপরাজিতাসহ অনেকেই।আর ভালোবাসা দিবসের অ্যালবাম ‘ইস্কাটনের চিঠি’তে গেয়েছেন সামিনা চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, পারভেজ, সুমন কল্যাণ, লুৎফর হাসান, রিংকু, কোনাল, মুহিন, লিজা, পুতুল, শিমুল খান, পাওয়ার ভয়েজ বেলী ও রেজওয়ান।

দ্য রিপোর্ট : যার কণ্ঠে নিজের লেখা গান শোনার বাসনা এমন স্বপ্নের শিল্পী আছেন কি কেউ?

সেজুল হোসেন : স্বপ্নের শিল্পী আসলে নেই। তবে আমার লেখা গান অনেকের কণ্ঠে শোনার বাসনা আছে। যেমন- জেমস, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, বারী সিদ্দিকীসহ অনেকেই আছেন সেই তালিকায়।

দ্য রিপোর্ট : একজন গীতিকারের সীমাবদ্ধতা কি? নতুন গীতিকারদের উদ্দেশে কিছু বলুন...

সেজুল হোসেন : দেশী-বিদেশী মৌলিক সাহিত্য বিশেষ করে কবিতা না পড়া, গানের দিগদর্শন না জানা এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের আঙ্গিক ও ভাষার উন্নয়ন সম্পর্কে না জানাই একজন গীতিকারের প্রধান সীমাবদ্ধতা।

নতুন গীতিকারদের উদ্দেশে এতটুকু বলব- গান লিখতে আসার আগে গান কি সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। গানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রায়োগিক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। আর বেশি বেশি রবীন্দ্রনাথ শুনুন। সবচেয়ে বেশি কবিতা পড়ুন।

দ্য রিপোর্ট : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?

সেজুল হোসেন : ‘যদি মরে যাই ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই। যে ফুলের নাই কোনো ফল। যে ফুলের গন্ধই সম্বল।’ কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে মরবার আগে জীবন ও মানুষকে একজীবনে কীভাবে দেখলাম সেটা নিয়ে একটা বই লিখে যেতে চাই। আর নিজের উপার্জনে দুই বেলা খেয়ে পরে কোনোমতে জীবনটা পার করার নিশ্চয়তা চাই। কারণ, সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা- অভাব।

(দ্য রিপোর্ট/এআর/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর