thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি 25, ২৭ পৌষ ১৪৩১,  ১১ রজব 1446

ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে যশোরের গদখালী

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ০৭:১৮:৩১
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে যশোরের গদখালী

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে : ফুলের সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালি এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। বসন্তবরণ উৎসব, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল সরবরাহের ব্যাপক তোড়জোড় চলছে ফুলের রাজধানী গদখালীতে।

প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে থেকেই চাষি, পাইকার, শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠছে জেলা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ছোট্ট বাজার গদখালী। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন ফুল সংগ্রহ করতে। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে ফুল সাজানো হচ্ছে, পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রাজধানী শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের ফুল যাচ্ছে ট্রাক-পিকআপ আর ভ্যান ভরে।

ইতোমধ্যে ফুলের বাজার ধরতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ফুলচাষিরা। ফুল উৎপাদন, চাহিদা ও দাম সবই বেশি হওয়ায় এবার ৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন গদখালির ফুলচাষি ও বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। দাম এবং বেচাকেনা দুটিই ভালো হওয়ায় তারা দারুণ খুশি। তাই এই অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।

এখন প্রতিদিনের বিকিকিনি অর্ধকোটি টাকার উপরে বলে জানান তিনি। আব্দুর রহিম জানান, সারাদেশে বসন্তবরণ উৎসব, ভ্যালেন্টাইনস ডে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের যে ফুল বেচাকেনা হয়, তার অন্তত ৭৫ শতাংশই যশোরে উৎপাদিত হয়। তবে এবারের চাহিদা অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে শহর-নগরের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের জোগান দিতে আগাম প্রস্তুতিতে হিমশিম খাচ্ছেন গদখালীর চাষিরা।

ঝিকরগাছার নন্দী ডুমুরিয়া গ্রামের ফুলচাষি গোলাম রসুল জানান, ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিউলাসের পাশাপাশি এবার ইউরোপের ‘জারবেরা’ ফুল চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাগানে আগের চেয়ে বেশি ফুল হয়েছে। ফুল বিক্রি করে ৫-৬ লাখ টাকা ঘরে আনতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘জারবেরা’ এবার স্পেশাল গিফট হিসেবে গণ্য হচ্ছে সকলের কাছে। চাহিদা বেশি থাকায় অতি মূল্যবান এই ফুলটি বিক্রি করে চাষিরা অধিক লাভবান হবেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটের অভিজাত এলাকার ফুলের দোকান ছাড়া ‘জারবেরা’ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিদেশি এই ফুলটির উৎপাদন এখনও সীমিত পরিসরে বলে জানান ফুলচাষি ফজলুর রহমান।

তিনি জানান, এখানে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিউলাস, জিপসি, ক্যালেন্ডেলা, ডালিয়া, লিলিয়াম, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে।

ঝিকরগাছার হাড়িয়া গ্রামের ফুলচাষি শাহাজাহান আলী বলেন, গত তিন দিনে ২ লাখ টাকার জারবেরা, গ্লাডিউলাস ও গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন। সৈয়দপাড়ার আতিয়ার রহমান গাজী দুই দিনে প্রায় লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন।

ঝিকরগাছার কাগমারি গ্রামের ফুলচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘দিই দিনে আমি দেড় লাখ টাকার জারবেরা ফুল বিক্রি করেছি।’ পটুয়াপাড়ার সাহেব আলী রবিবার বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকার লাল গোলাপ।

গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসা পিরোজপুরের ফুল ব্যবসায়ী তওফিক এলাহী বলেন, ‘৩০ হাজার টাকার ফুল কিনতে গদখালী এসেছি। এসে দেখি ফুলের বাজার খুব চড়া।’

রবিবার গদখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জারবেরা ফুলের প্রতিটি স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়, গোলাপ ৬ থেকে ৮ টাকায়, গ্লাডিউলাস রং ভেদে ৩ থেকে ১০ টাকা, গাঁদা প্রতিহাজার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।

ঝিকরগাছার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাইদুল ইসলাম জানান, তাদের তত্ত্বাবধানে ৫০০ ফুলচাষি এ এলাকায় ফুলের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়েছে। এবারের বাজারে চাষিরা এক বিঘা জমি থেকে গড়ে ৬০-৭০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/জেএইচ/জেএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর