এখনই ভাঙছে না বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : এখনই ভাঙছে না বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি। বর্তমান কমিটি বহাল রেখে আগামী একমাসের মধ্যে নগরীর ১০০টি ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এ জন্য ২-১ দিনের মধ্যে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হবে। এই ‍বিশেষ কমিটি এ ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কাজ করবে। সবকটি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে আসতে পারে নেতৃত্বের পরিবর্তন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সোমবার রাতে মহানগরের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ সব কথা উঠে আসে।

এর আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে এ মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভা শেষ হয় রাত পৌনে ১১টায়। মতবিনিময় সভায় ১১০ জন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নেত্রী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের কমিটির অবস্থান এবং অতীত পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকায় আন্দোলন জমাতে কমিটি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে আন্দোলন যথাযথ ফলপ্রসু হয়নি।’

সালাম জানান, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন আমাদের নেত্রী। তিনি যদি মনে করেন বর্তমান কমিটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, তাহলে তিনি যাকে দায়িত্ব দেবেন তার নেতৃত্বেই আমাদের আন্দোলন চলবে। এটিকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।’

তিনি জানান, মহানগরের নতুন কমিটি না হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।

এ ছাড়া বৈঠক শেষে শাহবাগ থানা সদস্য সচিব এম এ হান্নান বলেন, নতুন কমিটি দেওয়া হবে। ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করতে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

পল্টন থানার যুগ্ম-আহ্বায়ক ফিরোজ আলম পাটোয়ারি বলেন, দুই তিন দিনের মধ্যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। যারা সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের ১০০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবে। আর এ জন্য ওই কমিটি সময় পাবে মাত্র ১ মাস।

তিনি বলেন, এ কমিটি যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আরেকটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

জানা যায়, সার্বিক বিষয়ে তদারকি করবেন খালেদা জিয়া নিজে। এ ছাড়া বিশেষ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তার কড়া নির্দেশও থাকবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর বিএনপিকে নতুনরূপে সাজাতে এ ইউনিটে সংস্কার আনছেন খালেদা জিয়া। এ জন্য মহানগরের মূল কমিটি করার আগে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সমন্বয়ে এ কমিটি করা হবে।

২০১১ সালের ১৪ মে খালেদা জিয়া সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করার কথা থাকলেও প্রায় দুই বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতে সদস্য সচিব আব্দুস সালামের নেতৃত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক এসএ খালেক, এমএ কাইয়ুম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাহাবুদ্দীন আহমেদ, আবু সাইদ খান খোকন, কাজী আবুল বাশার, নবী উল্লাহ নবী, আব্দুল আলিম নকি, মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, আবু সাইদ মন্টু, আলী আজগর মাতব্বর, মীর হোসেন মীরু, সামসুল হুদা ও ডা. নুরজাহান মাহবুব।

এ ছাড়া মহানগরের ৪৯টি থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাবেয়া আক্তার, আতিকুল্লাহ মতিন, হযরত আলী, মীর আশরাফ আজম, এ জি এম সামসুল হক, আরিফুল ইসলাম, আফাজ উদ্দীন, মনি বেগম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, গোলাম কিবরিয়া মাখন, দেলোয়ার হোসেন দিলু, অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন প্রমুখ।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে না থাকলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় উপলক্ষে মহানগরের নেতা-কর্মীরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। খালেদা জিয়া কার্যালয়ে প্রবেশের সময় প্রধান ফটকের সামনে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে আশপাশের এলাকা।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক হন তিনি। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক চৌধুরী আলম নিখোঁজ রয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এমডি/সা/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪)