thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

ডিএসই’র তদন্ত প্রতিবেদন

কারসাজিতে বেড়েছে মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার দর

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৯:২১:৫৫
কারসাজিতে বেড়েছে মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার দর

চার বিনিয়োগকারী এবং দুই ব্রোকারেজ হাউস মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার দর অবৈধভাবে বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

জানা গেছে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ৮৯ টাকায় অবস্থান করলেও ২৬ সেপ্টেম্বর মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার ১১১.১০ টাকায় লেনদেন হয়। এই ১৪ কার্যদিবসে শেয়ারটির দাম ২২.১০ টাকা বা প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়ে। অথচ দাম বাড়ার পেছনে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া হয়নি। এর ফলে বিষয়টিকে সন্দেহজনক মনে করে কমিশন। এ প্রেক্ষাপটে ৩ অক্টোবর মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে ডিএসইকে নির্দেশ দেয় বিএসইসি। নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৩০ অক্টোবর বিএসইসিতে প্রতিবেদন দাখিল করে ডিএসই’র তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মডার্ন ডাইংয়ের ৩ হাজার ২০০টি শেয়ার ৮৯ টাকা দরে লেনদেন হয়। আর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৩ হাজার ৩০০টি শেয়ার ১১১.১০ টাকা দরে লেনদেন হয়।

এই ১৪ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর একটানা বেড়েছে বলে ডিএসই’র তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে প্রতিদিনই আগের দিনের সর্বশেষ দামের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি দামে লেনদেন হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ওই সময়ের লেনদেন তথ্য যাচাই-বাছাই করে কারসাজির সঙ্গে চার বিনিয়োগকারী ও দুই হাউসের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে ডিএসই’র তদন্ত কমিটি।

ডিএসই’র সদস্য মোনা ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (স্টেকহোল্ডার নম্বর-১৬৪) বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ আকবর হোসেন (ক্লায়েন্ট কোড-৫০১৫৮) ১২ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ার আগের দিনের সর্বশেষ দামের তোয়াক্কা না করে কিনেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

ডিএসই’র আরেক সদস্য ইনডিকেট সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেডের (স্টেকহোল্ডার নম্বর-১৫৪) বিনিয়োগকারী মীর মুশিউজ্জামান (ক্লায়েন্ট কোড-৫২৯ ও ৯২৪) ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি বিও অ্যাকাউন্টে একই দিনে ১ হাজার করে মোট ২ হাজার শেয়ার ১২৯.৯ টাকা দরে কেনেন। ওই দিন কোম্পানির মোট ৩ হাজার ২০০টি শেয়ার লেনদেন হয়। আর তিনি একাই ৬৩ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেন। কিন্তু মুশিউজ্জামানের বিও অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্ত্বেও ইনডিকেট সিকিউরিটিজ শেয়ার কিনতে অবৈধভাবে ক্রেডিট (ক্রয় সক্ষমতা) সুবিধা দিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে মুশিউজ্জামানের অভিমত, তিনি ক্যাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। আর ১৫ সেপ্টেম্বর দিনশেষে মুশিউজ্জামানের দুই বিও হিসাবে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ টাকা ও ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টাকা লোকসান ছিল।

একই হাউসের আরেক বিনিয়োগকারী কাজী সারোয়ার আলম (ক্লায়েন্ট কোড- ৯১) ১৬ সেপ্টেম্বর ১ হাজার, ১৯ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ও ২৬ সেপ্টেম্বর মডার্ন ডাইংয়ের ৫০০টি শেয়ার কেনেন। অর্থাৎ এ তিন দিনে তিনি ২ হাজার ৫০০টি শেয়ার কেনেন। তবে ১৬ সেপ্টেম্বর দিনশেষে কাজী সারোয়ার আলমের বিও হিসাবে ৪৪ হাজার ৪৩১ টাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪১৯ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ১ লাখ ৪৬ লাখ ৪৩ টাকা লোকসান ছিল।

মুশিউজ্জামানের মত কাজী সারোয়ারের বিও অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্ত্বেও ইনডিকেট সিকিউরিটিজ শেয়ার কিনতে অবৈধভাবে ক্রেডিট সুবিধা দিয়েছে বলে ডিএসই’র তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্জিন ঋণ রুলস ১৯৯৯) এর রুলস ৩(১) ধারা ভঙ্গের শামিল।

এদিকে ডিএসই’র সদস্য শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের (স্টেকহোল্ডার নম্বর-১৭১) বিনিয়োগকারী কাজল মিয়া (ক্লায়েন্ট কোড-১৩৭০) ১৮ সেপ্টেম্বর মডার্ন ডাইংয়ের ২ হাজার শেয়ার কেনেন। বিও অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্ত্বেও হাউস কর্তৃপক্ষ তাকে অনৈতিক সুযোগ করে দেয়। দিনশেষে কাজী সারোয়ার আলমের বিও হিসাবে ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৮ টাকা লোকসান ছিল।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ডিএসই’র সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেকোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়টি ডিএসই’র নজরে আসলে তা যথাযথভাবে তদন্ত করা হয়। অনেক সময় বিএসইসি তাদের মনিটরিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ডিএসইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে থাকে। নিজ উদ্যোগে বা বিএসইসি’র নির্দেশে যে তদন্তই হোক না কেন তা বিএসইসিতে দাখিল বা অবহিত করা হয়। এক্ষেত্রে কারসাজির সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।’

এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেই যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বিএসইসি। তবে বিএসইসি যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডব্লিউএন/এনআই/সা/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর