thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

এনামুলে বিজয় দেখা হলো না

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১২ ২২:৪২:৩৫
এনামুলে বিজয় দেখা হলো না

আরিফ সোহেল, স্পোর্টস এডিটর : কোচ জার্গেনসনের মুখে নয়. ব্যাটে কথা বলার মন্ত্রে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ জিততে জিততে হেরেছে। কথা না কৌশল নিয়ে ব্যাপক-বিপুল সমালোচনা হলেও বুধবার প্রথম টোয়েন্টি২০ ম্যাচের পর তাতে বরফ জমেছে। দুর্দান্ত নৈপুণ্যের রথে চড়ে বিজয়ের বন্দর ছুঁয়ে দেখা হয়নি। শ্রীলঙ্কার ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৬৬ রান তুলেছে; জয়-পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র ২ রান।

সারগিকা বলে কথা। যেন এখানে বাংলাদেশের সব কিছুই চাই। বিশেষ করে টেস্টে দুর্দান্ত ড্র করার পর। পয়মন্ত স্টেডিয়ামের টোয়েন্টি২০ এর অভিষেক ম্যাচটিও স্মরণীয় হয়েই থাকছে। হারের বেদনা ভুলে প্রায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন, এর চেয়ে স্বায়ু-উত্তেজক ম্যাচের আশা কেউ করেনি। বিজয় দেখতে দেখতে এনামুলেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। নাভিশ্বাসের শিখরে ওঠা ম্যাচের জয়-পরাজয়ের সমীকরণ দৃশ্যত ছিল শেষ বল পর্যন্ত। হয়ত অভিজ্ঞতার কারণেই হেরেছে বাংলাদেশ, তাও মাত্র ২ রানের ব্যবধানে।

ম্যাচের অনেক বর্ণনার সঙ্গে শেষ ওভারের গল্পটিকে একটু আলাদা করেই রাখতে হচ্ছে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৭ রান। পেরেরার প্রথম বলটি সপাটে চালিয়েছেন এনামুল। তা কানায় লেগে উইকেটের ফাঁক গলিয়ে সোজা চার রান। দ্বিতীয় বলে ২; একটু ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তৃতীয় বলে রান আউটের কব্জায় পড়ে কাটা গেছেন ফরহাদ রেজা। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। এনামুলের ব্যাট গর্জে উঠেছে, পর পর ২টি বাউন্ডারি। তাতে দিশেহারা পেরেরা। শেষ বলে ২ রান নিতে পারলেই টাই; এমন পরিস্থিতিতে শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন হাফসেঞ্চুরিয়ান এনামুল।

শেষ বলে বাউন্ডারি হলেই জয় পাবে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার অজুহাতে বেশ সময় নিয়েছিল। এটিই একটি ক্রিকেটীয় কৌশল। ব্যাটসম্যান আনামুল যখন দারুণ ছন্দে বিভোর. মেরে চলছেন বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি। তখন চতুর শ্রীলঙ্কা তার ব্যাটিংয়ের মনসংযোগ ব্যাহত করতেই ওই অপকৌশল অবলম্বন করেছে। বলা যায় সেখানে তারা সফলও। তবে শেষ বলটি যে উচ্চতায় ছিল, তাতে অনেকেই তা নো-বল হিসেবেও দেখার চেষ্টা করেছেন। যদিও আম্পায়ার বলটি ‘নো’ ডাকেননি। এনামুল আম্পায়ারের দৃষ্টিতেও বিষয়টি এনেছিলেন। কিন্তু তাতে মন গলেনি। পেরেরার করা বলটি ছিল অনেকটা ‘না ঘরকা, না ঘাটকা।’ হয়ত সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষেই গেছে বলটি, সঙ্গে মহামূল্যবান জয়ও। তাতে আরও মন খারাপ হয়েছে ক্রিকেটভক্তদের। এমন হারকে বিজয় মানলেও বাংলাদেশের জন্য বেশি কিছু হবে না।

দেখে শুনে জবাব যেভাবে দিতে হয়, তাই করেছেন তামিম শামসুরের ৫২ রানের উদ্বোধন যুগল জুটি। তবে পর পর ২ ওভারে শামসুর (২২) ও তামিমের (৩০) বিদায় একটু থামিয়ে দিয়েছে টেস্টে প্রাণিত বাংলাদেশকে। শামসুর মেন্ডিসকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর তামিম পেরেরার বলে ম্যাথুসের হাতে ধরা পড়েছেন। যেভাবে পতন-ঠিক সেভাবেই ফের জয়ের প্রেরণায় উত্থান হয়েছে সাকিব-এনামুলের। তারা ৩৯ রানের জুটি গড়ে দলকে ১০৭ রানের স্পর্শ সীমানায় নিয়ে গেছেন। সাকিব ব্যক্তিগত ২৬ রানে কুলাসেকারায় বোল্ড হওয়ার পর বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন নাসির হোসেন (১৬)। কিন্তু দ্রুতই নাসির আর অভিষিক্ত মিঠুন আলীর বিদায় বিজয়ের স্বপ্নে কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিজয় নামের এনামুল যেন দলকে শেষ বল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার পণ করেছিলেন। আউট হওয়ার আগে বীর এনামুল ৫৮ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস খেলেছেন, তাও মাত্র ৪৫ বলে।

টস জিতে বোলিং বেছে নিয়ে দারুণ শুরু করেছেন ‘ক্ষণিক অতিথি অধিনায়ক’ মাশরাফি। প্রথম ওভারেই উইকেট। সূচনা ওভারের শেষ বলে তিলকরত্নে দিলশানকে বোল্ড করেই বাংলাদেশকে স্বপ্ন-প্রত্যাশায় জাগিয়ে তুলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরে অবশ্য অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল-কৌশল পেরেরা ৫৪ রানের জুটি করে সামলে উঠেছেন পরিস্থিতি। এবার সাকিব ভেলকি। চান্দিমালকে (১৮) ফিরিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাউন্ডারি সীমানার ঠিক সামনে লাফিয়ে চান্দিমালের পুল করা শটটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন ফরহাদ রেজা। পারেননি সাঙ্গাকারাও। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাঙ্গাকারাকেও ফিরিয়েছেন সাকিব। এবার অসাধারণ ক্যাচ। সাকিব তার এই ২ উইকেটের জন্য ক্যাচারে ফরহাদ ও নাসিরকে অর্জনের অর্ধেকটা দিতে পারেন। সাকিবকে তুলে মেরেছিলেন সাঙ্গাকারা ডিপ মিডউইকেটে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা নাসির ডানদিকে অনেকটা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা লুফে নিয়েছেন। আরেকটি ক্যাচের কথাও মনে ধরেছে ক্রিকেটভক্তদের। এবারের বোলার অভিসিক্ত সানি। কৌশিক হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে রঙ মিলিয়ে দারুণ ছুটছেন। মিডঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন এনামুল। সীমানা-দড়ির কয়েক ইঞ্চি সামনে বেশ উঁচুতে লাফিয়ে তালুবন্দি করে সাগরিকায় প্রায় ২৫ হাজার দর্শককে উদ্বেলিত করেছেন। ৭ম উইকেটে থিসারার (অপরাজিত ১৯)- কুলাসেকারারই (৩১) বিপদ ডেকে এনেছেন। তারা ৪৪ রানের জুটি গড়েই লড়াইয়ে এনেছেন দলকে। বাংলাদেশের পক্ষে সানি, সাকিব ও মাশরাফি ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।

সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এটা ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক টোয়েন্টি২০ ম্যাচ। শুক্রবার একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ও শেষ টোয়েন্টি২০ ম্যাচ, যেখানে প্রেরণা হয়ে থাকছে এই ম্যাচটি।

জয়ের সমীকরণ কঠিনই ছিল বাংলাদেশের। কারণ অতীত ইতিহাস। পরে ব্যাটিং করে টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেঁধে দেওয়া ১৬৫ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। ফলে বুধবার শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলে জয়ের সঙ্গে নতুন রেকর্ডও অর্জিত হত। আরেকটি তথ্য মনে পড়ছিল, ম্যাচ না জিতলেও গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে পরে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের ১৮১ রানের ইনিংসটি। ফলে আগের ২ ম্যাচের কথা ঘুরেফিরছিল সাগরিকায়। যদিও পরিসংখ্যানের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। আগের ৩১টি টোয়েন্টি২০ ম্যাচের মধ্যে জয় মাত্র ৯টিতে। অর্থাৎ হারের পাল্লা ভারি, বাকি ২২টিতেই হার।

শ্রীলঙ্কা : ১৬৮/৭, ২০ ওভার (কৌশল ৬৪, কুলাসেকারা ৩১, থিসারা ১৯*, চান্দিমাল ১৮, সাঙ্গাকারা ১১, ম্যাথিউস ১১; সানি ২/১৭, সাকিব ২/২৭, মাশরাফি ২/৪৩)।

বাংলাদেশ : ১৬৬/৭, ২০ ওভার (এনামুল ৫৮, তামিম ৩০, সাকিব ২৬, শামসুর ২২, নাসির ১৬, ফরহাদ ৭; কুলাসেকারা ২/২৯, থিসারা ২/৪২, মেন্ডিস ১/২৯, মালিঙ্গা ১/৩৪)।

ফল : শ্রীলঙ্কা ২ রানে জয়ী।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর