thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি 25, ২৮ পৌষ ১৪৩১,  ১১ রজব 1446

ভালোবাসায় যশোরের গ্লাডিওলাস

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৮:০৭:২৬
ভালোবাসায় যশোরের গ্লাডিওলাস

আহসান কবীর, যশোর : তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার প্রতীক ‘লাল গোলাপ’। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে) উপলক্ষে সারা দেশের তরুণ-তরুণীদের হাতে এই গোলাপ পৌঁছে দিতে সব আয়োজন শেষ করেছেন যশোরের ফুলচাষিরা। দেশময় হাতে হাতে ফেরা গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের তিন-চতুর্থাংশই আসে যশোর থেকে।

ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রধান অনুষঙ্গ ফুল। এই দুই দিবসের চাহিদা মেটাতে যশোরের চাষিরা এবার উৎপাদন করেছেন প্রায় ছয় কোটি টাকার ফুল।

প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ফুল সারা বিশ্বে ব্যাপক সমাদৃত। আমাদের দেশেও ফুলের চাহিদা ও উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ এখনও যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার চাষিরা পূরণ করেন। তাদের উৎপাদিত ফুলের চাহিদা সারা বছর কম-বেশি থাকলেও ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, পয়লা ফাল্গুন, পয়লা জানুয়ারি প্রভৃতি দিবসে অনেক বেড়ে যায়। উৎপাদিত ফুলের বড় অংশই এ সময় বিপণন হয়। চাষিদেরও তাই চেষ্টা থাকে নির্দিষ্ট দিনগুলোর আগে ফুল বাজারজাতকরণ সম্পন্ন করা।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চাহিদা অনুযায়ী ফুল সরবরাহে গত প্রায় এক মাস ধরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন গদখালীর চাষিরা। তাদের কাছে পাইকাররা আগেভাগেই জানিয়ে দেন তাদের চাহিদা।

ভালোবাসা দিবসের চাহিদা পূরণে গত দুদিন ধরে চলছে অর্ডার অনুযায়ী ফুল তোলা, প্যাকেটিং, পরিবহনসহ অন্যান্য কাজ। ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামের অভিজাত ফুলের দোকানগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেছে যশোরের ফুল। অন্যান্য স্থানেও পৌঁছে যাবে রাতের মধ্যে।

চাষিরা জানান, ভালোবাসা দিবসের মূল আকর্ষণ বিভিন্ন জাত ও রঙের গোলাপ। এর মধ্যে আবার বড় আকারের লাল গোলাপের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে নতুন আসা জারবেরার চাহিদাও বাড়ছে দ্রুত।

ভালোবাসা দিবসে এবার গদখালী এলাকা থেকে প্রায় ৫০ লাখ জারবেরা সরবরাহ করা হচ্ছে বলে চাষিরা জানান।

গদখালী ফুলচাষি সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা প্রভৃতি জাতের ফুল গদখালী-পানিসারা অঞ্চলের চাষিরা সারা বছর সরবরাহ করেন। আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন দিবসে চাষিরা বিশেষ নজর দিয়েই ফুলের চাষ এবং তা সরবরাহ করেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। এবার ১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারির চাহিদা মেটাতে এই অঞ্চল থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকার ফুল সরবরাহ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একই ধরনের প্রত্যাশার কথা জানান সাধারণ চাষিরাও।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপ-পরিচালক শেখ হেমায়েত হোসেন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ফুলের গুণগত মান ভালো। নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় এবার গোলাপের পাপড়ি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এ ছাড়া ফুলের স্নিগ্ধতাও বেড়েছে।

তিনি বলেন, এখন জারবেরার চারা দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। আর এ ফুলের বাজারজাতকরণের সময় তাতে ক্যাপ পরানো হচ্ছে। বাড়তি কিছু যত্ন নিলে একেকটি জারবেরা সপ্তাহখানেক সজীব রাখা সম্ভব।

তিনি আশা করছেন, দুই গুরুত্বপূর্ণ দিবসে এবার যশোর থেকে ছয় কোটিরও বেশি টাকার ফুল সরবরাহ হবে।

ত্রিশ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৩ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের শের আলী সরদার মাত্র ৩০ শতক জমিতে শুরু করেছিলেন ফুল চাষ। যতদূর জানা যায়, এটিই বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুল চাষের প্রথম উদ্যোগ। শের আলী সফল হওয়ায় তার দেখানো পথে ধীরে ধীরে যোগ দেন অনেকেই। বর্তমানে যশোরের পাঁচ উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে নানা ধরনের ফুল। যা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ গোটাদেশে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গদখালীতেই এ বছর এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, দেশের মোট ফুল উৎপাদনের ৭০-৭৫ ভাগই যশোরে হয়। আর তা থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার মত। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিছু ফুল বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। ফুল চাষ ও কেনা-বেচায় জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে এই এলাকার ৫০ হাজার মানুষ।

(দ্য রিপোর্ট/একে/এমএআর/সা/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর