thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

মালির রাজধানীর চিঠি লেখকদের ভ্যালেন্টাইন ব্যস্ততা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০:১২:০১
মালির রাজধানীর চিঠি লেখকদের ভ্যালেন্টাইন ব্যস্ততা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : হাজার রকম করেই বলা যায় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু এই কথাটিই একেক জনের জন্য একেকভাবে ঠিক করে দেওয়ার কাজটি করেন অ্যালাসানে মাইগা। প্রত্যেকের জন্যই সঠিক শব্দ খুঁজে দেওয়ার কঠিন কর্মটিই করেন তিনি।

আফ্রিকার দেশ মালির রাজধানী বামাকোতে এই কাজ করেই রুটিরুজি রোজগার করেন মাইগা।

শহরের প্রধান ডাকঘরটি হল লা গ্রান্ড। আর এই ডাকঘরের বাইরেই বেঞ্চে বসে পত্রলেখার কাজ করেন অন্তত দশ জন লেখিয়ে। অ্যালাসানে মাইগা তাদের মধ্যেই একজন।

প্রায় সত্তর শতাংশ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর দেশটিতে অক্ষরজীবীরা মূলত আবেদনপত্র আর চিঠি লেখার কাজ করেন। কিন্তু মাইগা আর তার সহকর্মীরা এ সপ্তাহে ব্যস্ত ছিলেন ভিন্ন রকম এক যোগাযোগ সৃষ্টিতে। ভ্যালেন্টাইনস ডে তাদের কাজে বিশেষ উদ্দীপনা নিয়ে আসে বলেই জানান মাইগা।

বামাকো যথেষ্ট বড় একটি শহর। আর শহরটিতে প্রণয়ীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র সকাল পর্যন্ত অক্ষরজীবীদের প্রচণ্ড ব্যস্ততা তারই প্রমাণ।

ভ্যালেন্টাইনস ডে’র সপ্তাহজুড়ে পত্র লেখিয়েরা এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের পোস্ট অফিসের সিঁড়িতে বসে ঘুমাতে দেখা যায়।

অগণিত পার্সেলের গায়ে ঠিকানা লিখে যায় তারা। কার্ডের ভেতরেও লিখে দেয় ভালোবাসার বার্তা। ফরাসি ভাষায় ‘মো আমো’ ‘জ তেইমে’ আরও অনেক শব্দে বর্ণিল প্রকাশ ঘটে ভালোবাসার। বাংলা ভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ও আমার প্রেম’, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।

শুধু ক্ষুদে বার্তাই নয়, মাইগাকে ভালোবাসা প্রকাশের সর্বোচ্চ শিল্পটি তৈরির জন্যও বের করতে হয় সময়। ভাবছেন, সেটা আবার কি? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে শৈল্পিক উপায় কবিতাও লিখে দেন মাইগা। আর এর জন্য মজুরি দিতে হয় প্রায় হাজার দুয়েক মালিয়ান ফ্রাঙ্ক। যা সাধারণ একটি চিঠি লেখার মজুরির থেকে প্রায় চার গুণ। বছরের এ সময় ফুলের দামের মতই বাড়ে শব্দের দাম।

প্রতিটি প্রেমের চিঠিই হয় আলাদা। প্রত্যেকের ভালোবাসার প্রকৃতি আর মাত্রার ওপর খেয়াল রেখেই মাইগা প্রণয়লিপিগুলো রচনা করেন। প্রত্যেক খরিদ্দারের ভালোবাসার গল্প শুনে তার আবেগ বোঝার চেষ্টা করেন মাইগা। প্রণয়ী কী তার প্রেমপত্রের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চান, নাকি কেবল মুগ্ধই করতে চান ভালোবাসার মানুষটিকে। চিঠিতে কী গভীর অনুশোচনা থাকবে নাকি থাকবে যুক্তিতর্ক। প্রতিটি গল্পের মতই প্রতিটি ভিন্ন প্রেমপত্র লিখে দেন মাইগা।

মাইগার জন্য সম্ভবত সব থেকে কঠিন কাজ হল মক্কেলের মনস্তত্ত্ব বুঝে ওঠা। মক্কেল বুদ্ধিমান, নাকি সাহিত্যপ্রেমী, নাকি স্পষ্টভাষী? বেপরোয়া নাকি রোমান্টিক? এই বিষয়গুলো বুঝে নিয়েই মাইগাকে লিখতে হয় প্রেমপত্র। মাঝে মাঝে নারীরাও ভালোবাসার পত্র লেখাতে আসেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মাইগা স্বীকার করেন, পোস্ট অফিসের বাইরে বসে এই লেখার কাজ অনেকের জন্যই কেবল জীবিকা। কিন্তু ১৫ বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে দিতে দিতে মাইগা এই কাজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন। মানুষের উপকার করে যাওয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে জানান পত্র লেখিয়ে মাইগা। সূত্র : বিবিসি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজে/জেএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

লাইফস্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফস্টাইল - এর সব খবর