thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

প্রিয়াংকা রায়

গাধা ও গাধীর গল্প!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ ০২:০০:২৬
গাধা ও গাধীর গল্প!

এ কাহিনীটি হলো সৌরভ ও দিশার। কাহিনীর সূত্রপাত ঘটে সৌরভ ও দিশার স্কুলবেলায়। যখন তারা দুজনই ক্লাস সেভেন-এ পড়ত। তবে আলাদা স্কুল।

সৌরভ ও দিশার বাড়ি পাশাপাশি পাড়ায়। একে অপরকে চিনত পাড়ার ছেলেমেয়ে হিসেবে।

দিশা ছিল অনেক চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই দিশা অবাধে খেলাধুলা করত।

দিশার চঞ্চলতার অবসান ঘটে যখন সে শৈশবের পালা পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখে। এ সময় সে খেলাধুলা ছেড়ে শুধু পড়াশোনার দিকে মন দেয়। আর ঠিক তখনই দিশা হয়ে ওঠে পাড়ার ছেলেদের মুখে অতি পরিচিত একটি নাম।

দিশা যখন বিকেলে প্রাইভেট পড়তে বের হতো তখন দেখত একঝাঁক ছেলে তার শিক্ষকের বাড়ির একটু দূরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিত। এই একঝাঁক ছেলের মধ্যে সৌরভও থাকত। কিন্তু এ সময় দিশা সৌরভের নাম জানত না। শুধু চিনত ওর চেহারাটা।

এমনি করেই কেটে যায় সৌরভ ও দিশার কৈশোর। দুজনেই এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। এ সময় সৌরভ প্রতিদিন দিশাদের পাড়ায় না এলেও মাঝে মাঝে ওপাড়ায় থাকা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসার নামে দিশাকে একনজর দেখতে আসত। এতদিনে অবশ্য দিশা সৌরভের নাম জানতে পেরেছে। কারণ দুই পাড়ায় তারা দুজন ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় (A+) পেয়ে সাড়া ফেলে দেয়।

এরপর দিশা আর সৌরভ দুজনই পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দুর্গাপূজার মণ্ডপ ছাড়া কেউ কারো মুখ দেখতে পায় না। ইতোমধ্যে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে আবার একইভাবে ২০০৯ সালে এইচএসসিতে (A+) পেয়ে এলাকার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখে। দিশা বিশ্ববিদ্যালয় আর সৌরভ মেডিকেলে চান্স পাওয়ার যুদ্ধে নামে।

২০০৯ সালে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে দিশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও সৌরভ কোথাও চান্স পায় না। অবশ্য পরের বছর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে সৌরভ ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পায়।

মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর সে নানাভাবে দিশার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এ সময় দিশা ২য় বর্ষের ছাত্রী। সৌরভ কোনোভাবে দিশার ফোন নম্বর যোগাড় করে দিশাকে ফোন দেয়। কিন্তু ফোনে সৌরভ নিজের পরিচয় দিলেও দিশা ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না যে সে সৌরভ। এতে সৌরভ কষ্ট পায় এবং দিশার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করে না।

প্রায় ছয় মাস পর দিশা ওর ফেসবুকে সৌরভ দাস নামে একজনের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পায় এবং ওর প্রোফাইল চেক করে চিনতে পারে এ তার পাড়ার সৌরভ। সৌরভকে চিনতে পেরে ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটি এক্সসেপ্ট করে দিশা। কিন্তু দিশাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালেও সৌরভ জানত না যে এটাই সেই দিশা যাকে সে খুঁজছে। কারণ দিশার প্রোফাইলে ওর কোনো ছবি ছিল না। আরও একটি মজার কারণ ছিল! ফেসবুকে দিশার নাম ছিল প্রিয়তি রায়। যা দিশার সার্টিফিকেট নাম। সৌরভ দিশার এই নামটা জানত না। মূলত একটি ফ্রেন্ডের মিচুয়াল ফ্রেন্ড হিসেবে প্রিয়তিকে ফেসবুকে পায় সে।

এরপর সৌরভ আর প্রিয়তি ফেসবুক ফ্রেন্ড হলেও ওদের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ একদিন দুজনেই ফেসবুকে ছিল। এ সময় সৌরভ প্রিয়তিকে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চায় সে কেমন আছে। এরপর প্রিয়তির বাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের বিষয় এ সব জানতে চাইলে প্রিয়তি বুঝতে পারে যে সৌরভ ওর ডাক নামটাই শুধু জানে। প্রিয়তিই যে দিশা সৌরভ এটা জানে না।

এ বিষয়টি জানতে পেরে দিশা মনে মনে হাসে আর দুষ্টুমি করে সৌরভকে দিশার কথা জিজ্ঞেস করে। প্রিয়তি নিজেকে দিশার বান্ধবী পরিচয় দেওয়ায় প্রিয়তির প্রতি সৌরভের আগ্রহ জন্মায় এবং সে প্রিয়তির ফোন নম্বর চায়। তখন দিশার মনে পড়ে একসময় সৌরভ তাকে ফোন দিয়েছিল; কিন্তু সে তাকে অবিশ্বাস করেছিল। তাই অন্য একটি নম্বর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তিকে ফোন করে সৌরভ। ফোন করে সে দিশার বিষয়ে খোঁজখবর নেয় এবং দিশা ওকে চিনতে না পারায় দিশার প্রতি নিজের ক্ষোভের কথাটাও প্রিয়তিকে জানায়।

এতে সৌরভের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে প্রিয়তি। কিন্তু সে যে দিশা এটা গোপন রাখে। কিছুদিন মজা নেওয়া ও সৌরভকে বোকা বানানোর জন্যই এটা করে সে। এরপর প্রায় প্রতিদিনই সৌরভ প্রিয়তিকে ফোন করে। তার খোঁজ নেওয়ার উছিলায় মূলত দিশার কথাই বেশি জানতে চায়। প্রিয়তি সৌরভকে বলে যে দিশার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে তাই সে ব্যস্ত। পরীক্ষা শেষ হলে সৌরভের সঙ্গে দেখা করবে দিশা।

এতে করে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ে দিশা। দিশাই তো প্রিয়তি। আর পরীক্ষাটাও প্রিয়তিরই। তাই পরীক্ষার সময় প্রায় সকাল দুপুর রাত সবসময়ই সৌরভ ওকে ফোন করে। মূলত দিশার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটানোর জন্যই সৌরভ প্রিয়তির সঙ্গে বন্ধুত্ব চালিয়ে যায়।

ফোন করলে সৌরভ ও প্রিয়তির বেশি কথা হয় দিশাকে নিয়েই। দিশা এখন কি করছে, দিশা কেমন আছে, দিশার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে, দিশা আসলে কেমন, দিশা কী রান্না করতে পারে আরও কত কিছু। কখনও রেগে সত্য কথাটা বলে দিতে ইচ্ছে হয় দিশার।

কিন্তু পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুখ খুলে না সে। অবশেষে প্রায় এক মাস লুকোচুরি খেলার পর প্রিয়তি সৌরভকে আশ্বাস দেয় দিশা তার সঙ্গে দেখা করবে বলে জানিয়েছে। ঠিক এ মুহূর্তে সৌরভ প্রিয়তিকে বলে যে ও দিশাকে ছেলেবেলা থেকেই পছন্দ করে। আসলে দিশাকে ভালোবাসে।

এ সত্যটি প্রিয়তি আগে বুঝতে পারলেও সৌরভের মুখ থেকে শুনে খুশিতে গোটা পৃথিবী জয় করে ফেলেছে যেন!

প্রিয়তি সৌরভকে বলে, দিশা বিকেলে ওর সঙ্গে দেখা করবে এবং প্রিয়তিও দিশার সঙ্গে থাকবে। এখন সৌরভের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে দিশার উৎকণ্ঠার সীমা থাকে না। কী করে সৌরভকে ও সত্যটা বলবে?

এসব ভাবতে ভাবতেই বিকেল হয়ে আসে এবং সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে যায় দিশা (প্রিয়তি)। প্রথমে দিশাকে দেখেই সৌরভ জিজ্ঞেস করে প্রিয়তি কোথায়? এটা শুনে খুশি হয় সে। দিশা সৌরভকে জানায়, প্রিয়তি আসতে পারবে না। প্রিয়তি কেন আসতে পারবে না এ কথা জানতে চাইলে দিশা বলে-‘কে প্রিয়তি? আমারই আর এক নাম প্রিয়তি।’

দিশার উত্তরটি শুনে প্রথমে দিশার দিকে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে সৌরভ। তারপর হেসে বলে, ‘ভালোই মজা নিলা।’ তারপর দিশার উত্তরটি ছিল-‘তুমি কি ডাক্তার? তুমি একটা গাধা।’

এই ছিল দিশা ও সৌরভের কাছে আসার গল্প। দুজনেরই পড়াশোনা চলছে এবং ওদের সম্পর্কের বিষয়টি দুই পরিবারই মেনে নিয়েছে। এখনও সৌরভকে ‘গাধা’ বলে ডাকে দিশা। পাল্টা উত্তরে প্রতিবারই সৌরভ দিশাকে বলে ‘গাধী’!

লেখক : প্রদায়ক, দ্য রিপোর্ট।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ভালবাসার কথা এর সর্বশেষ খবর

ভালবাসার কথা - এর সব খবর