ডিভোর্সে শেষ হওয়া বলিউডি প্রেম

আদিত্য রুপু, দ্য রিপোর্ট : ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা আছে ভুবনে, কখন কে ধরা পড়ে কে জানে’। কবির এই অমর বাণী সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নানা ঘটনারই অত্যুক্তি। যারা প্রেম করেছেন, যারা প্রেম করছেন অথবা যারা প্রেম করবেন তাদের সবার জন্য। এই উক্তিতে প্রেমে পড়ার ইঙ্গিত যেমন আছে, তেমনি প্রেম যে একটি ভয়াবহ মোহ তার ইঙ্গিতও রয়েছে। আর সবার মতো বলিউডি তারকরা প্রেমে পড়েছেন ঢের। ঘরও বেঁধেছেন অনেকেই। তবে নানা কারণেই সেই প্রেম এবং ঘর উজাড় হয়েছে। কারণ হিসেবে সবচেয়ে শক্তিশালী যে বিষয়টি সামনে এসেছে, সেটিও প্রেম। মানে এক প্রেমের জন্য আরেক প্রেমের বলি। প্রেম ও মোহে পড়ে এক সময়ের সোনার সংসারকে গলাটিপে হত্যা করেছেন তারা। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ আয়োজনে বলিউডের নামজাদা এমন কিছু জুটির কথা তুলে ধরা হলো।

আমির খান-রিনা দত্ত

‘ধুম’খ্যাত অভিনেতা আমির খান ও রিনা দত্ত বিয়ে করেন ১৯৮৬ সালে। প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করা এই দম্পতি দীর্ঘ ১৫ বছর সংসার শেষে আলাদা হয়ে যান। কারণ হিসেবে আলোচনায় আসে ২০০২ সালে আমিরের সঙ্গে অভিনয় করা এক সহশিল্পীর নাম। তবে ডিভোর্স পেপারে দুজনই উল্লেখ করেন মানসিক দুরত্ব তাদের আলাদা করছে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আমির ভালোবেসে বিয়ে করেন তার অভিনীত ছবির সহযোগী পরিচালক কিরণ রাওকে। বিয়ের পরও আমির তার সাবেক স্ত্রী রিনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। আমির-রিনা দম্পতির সন্তানদ্বয়ের নাম- ইরা ও জুনাইদ।

সঞ্জয় দত্ত-রিয়া পিল্লাই

রিয়া পিল্লাই ও সঞ্জয় দত্ত ভালোবেসে বিয়ে করেন ১৯৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। রিয়া সঞ্জয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে সঞ্জয় বিয়ে করেন অভিনেত্রী রিচা শর্মাকে। রিয়ার সঙ্গে সঞ্জয়ের ছাড়াছাড়ি হয় তাদের সন্তান ত্রিশলার জন্মের পর। বোম্বে বোমা হামলা মামলায় সঞ্জয় গ্রেফতার হন। তখন এবং পরবর্তীতেও রিয়া সঞ্জয়ের জীবনের নানা দুঃখ ও সংগ্রামের সময় পাশে ছিলেন। শেষরক্ষা হয়নি তাদের সম্পর্কের। কেননা, সঞ্জয়ের ক্যাসানোভা চরিত্রই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন সবাই। তবে সংবাদে প্রকাশ হয় সঞ্জয়ের ব্যস্ততা ও রিয়ার সঙ্গে টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজের সম্পর্ক। ধরে নেওয়া হয় তাদের বিচ্ছেদের কারণ এটিই।

কমল হাসান-সারিকা

ভারতের আলোচিত লিভ ইন করা জুটি কমল হাসান ও সারিকা। ১৯৮০ সালের দিকেই তারা বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তাদের সংসারে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। এদের একজন ‘রামাইয়া ভাস্তাভাইয়া’খ্যাত অভিনেত্রী শ্রুতি হাসান। অপরজন অক্ষয়া।

তখন পর্যন্ত বিয়ে করেননি তারা। অক্ষয়ার জন্মেরও অনেক পর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সারিকার সঙ্গে কমলের বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালে। কমল তখন দক্ষিণী ছবির তারকা অভিনেত্রী গৌতমীর সঙ্গে লিভ ইন করা শুরু করেন। গৌতমী কমলের স্ত্রীর মর্যাদা পেলেও লিভ ইনের প্রতিই আস্থাটা বেশি ছিল কমলের। তিনি মনে করেন, ভালোবাসার জন্য বিয়ে নামক কোনো ইনস্টিটিউশনের দরকার হয় না।

কিশোর কুমার-যোগিতা বালি

কিশোর কুমার তার তৃতীয় ভালোবাসা খুঁজে পান অভিনেত্রী যোগিতা বালির মাঝে। এর আগে তিনি সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতা ও রুপালি পর্দার রানী মধুবালা পর্ব শেষ করেন। যোগিতার সঙ্গে কিশোর কুমার বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৭৬ সালে। মাত্র দুই বছরেই সংসার ভাঙে তাদের। বলা হয়ে থাকে, যোগিতা তখন ড্যাশিং তরুণ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আর সে কারণেই ঘর ভাঙে এই জুটির। ১৯৭৯ সালে যোগিতা বিয়ে করেন তার স্বপ্নের পুরুষ মিঠুন চক্রবর্তীকে। অপরদিকে বছরখানেক পর ১৯৮০ সালে কিশোর কুমারও বিয়ে করে সংসারী হন। পাত্রী বলিউডের বাইরের বাসিন্দা লিনা চন্দাভার্কার।

অনুরাগ কশ্যপ-কালকি কোচলিন

যে কারণে এই জুটির পরিণয় ঘটেছে, সেই একই কারণে ভেঙে গেছে তাদের সংসার। ২০০৯ সালে ‘দেব ডি’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় ঘটে পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ ও অভিনেত্রী কালকি কোচলিনের। এরপর তারা বিয়ে করেন ২০১১ সালে। প্রেমে পড়া ও বিয়ে করার পেছনে কালকির যুক্তি- অনুরাগ একজন অসাধারণ পরিচালক। তবে অল্প কিছুদিন আগে ভেঙে গেল তাদের স্বপ্ন-স্বাদের সংসার। বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে কালকির বক্তব্য- অনুরাগ তাকে সময়ই দেন না, সব সময় শুধু পরিচালনা আর ছবির কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আরও শোনা যায়, অনুরাগের সঙ্গে তার ছবিতে অভিনয় করা অভিনেত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারেও আঙ্গুল তুলেছেন কালকি। তবে অনুরাগের পরিবার নিশ্চিত করেছে, অনুরাগের সঙ্গে কালকির সম্পর্ক চিরতরে ভেঙে যাওয়া নিয়ে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে আলাদা বসবাস করছেন এবং কথা বলাবলিও বন্ধ করে দিয়েছেন। কালকির সঙ্গে অনুরাগের এটা দ্বিতীয় বিয়ে।

হৃত্বিক রোশন-সুজান খান

হৃত্বিক রোশন ও সুজান খান বলিউডের আদর্শ জুটি হিসেবে এতকাল বিবেচিত ছিলেন। শুরু থেকেই তাদের চেহারায় পরিপূর্ণ ভালোবাসার ছাপ দেখে এসেছেন সবাই। ২০১৩ সালে এসে সবই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। উল্টে গেল সমস্ত হিসাব। ভালোবাসাবাসির ৫ বছর ও দাম্পত্য জীবনের ১৩ বছরের সব হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ২০০০ সালে বিয়ে করা এই জুটির বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অভিনেতা অর্জুন রামপালের নাম। রিধান ও রিহান নামে এই জুটির দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তারা মায়ের কাছেই থাকছে। হৃত্বিক-সুজান বিচ্ছেদ ২০১৩ সালে বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এই সিদ্ধান্ত সবাইকে হতবাক করে দেয়।

(দ্য রিপোর্ট/এআর/ডব্লিউএস/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)