thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

শিল্প খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা

ব্যাংকে অলস ৯০ হাজার কোটি টাকা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ ১৪:০৬:২৫
ব্যাংকে অলস ৯০ হাজার কোটি টাকা

শিল্প খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের তারল্যের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ আমানতের এই অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। যার ফলশ্রুতিতে আমানতের সুদের হার কয়েক দফায় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা শিল্পখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে ব্যাংকের এই বিপুল পরিমাণ অলস টাকা শেয়ারবাজার, আবাসনখাতসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হতে পারে।

জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ১৬ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ব্যাংকগুলো মাত্র ১১ শতাংশ বিতরণে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে গত ছয় মাসে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়েছে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ। একই সময়ে অধিকাংশ ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে সুদের হার ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে শিল্প খাতে বিনিয়োগ এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৪০ শতাংশ। ট্রেড ফাইন্যান্স কমেছে ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় ২০১৩ সালে শিল্প প্রকল্পের প্রস্তাব বেশ কমেছে। ২০১২ সালে যেখানে ১ হাজার ৮৫৫টি প্রকল্প নিবন্ধিত হয়েছিল, গত বছর তা নেমে আসে ১ হাজার ৩৭৮টিতে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য দেশে শিল্প খাতে বিনিয়োগ উল্ল্যেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট রয়েছে। রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অন্যথায় ব্যাংকের এই বিপুল অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ঋণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। আমানত অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে না পারায় গড় আমানত ও ঋণের সুদের হার দুটোই কমেছে। গড় আমানত ও ঋণের সুদের হার গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

যেহেতু ব্যাংকগুলো আমানতের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে না, সেহেতু ব্যাংকগুলো সুদের হার কমিয়েছে। বর্তমানে মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যাংকের সুদের হার ১১ শতাংশ, যা গত কয়েক মাস আগেও ১৩ শতাংশ ছিল।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতসহ অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যেতে পারে। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে থাকা অর্থ একক গ্রাহকের সর্বোচ্চ ঋণসীমায় নামিয়ে আনার সময় আরও এক বছর বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে গড় বিনিয়োগ ৩ শতাংশের কম।

‘ঋণসীমা সম্বনয় করার সময় বাড়ানো এবং আমানতের সুদহার কমানোয় শেয়ারবাজার ও আবাসনসহ অনুৎপাদনশীল খাত আবারও অতিমূল্যায়িত হতে পারে’ বলে মনে করেন জনতা ব্যাংকের পরিচালক ড. আর এম দেবনাথ।

এ বিষয়ে ড. দেবনাথ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকগুলো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভূমিকা তো ছিলই। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ জমা পেড়েছে। এতে ব্যাংকের মুনাফা কমবে। আর মুনাফা বাড়াতে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকতে পারে। এ ছাড়া আমানতের বিপরীতে সুদের হার কমানোয় গ্রাহকরা শেয়ারবাজার, আবাসন খাতের দিকে ঝুঁকতে পারে।’

এদিকে অলস টাকা ছাড়াও বেশকিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে ব্যাংকিং খাত। ঋণের উচ্চ সুদ নতুন উদ্যেক্তা তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণগ্রহণে জালিয়াতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নতুন ব্যাংক এলেও চাহিদা অনুযায়ী প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়নি।

বিশিষ্ট ব্যাংকার মামুনুর রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে বিনিয়োগ কমেছে। এ কারণে ব্যাংকগুলাতে অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। আর আর্থিক কেলেঙ্কারি তো ছিলই। এতে বেকায়দায় পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। দ্রুততর সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে এই অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যেতে পারে।’

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর