thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

সরকারের দ্বৈত নীতি ও সিদ্ধান্তহীনতা

পাঁচ বছরে বেসরকারিকরণ মাত্র ৪টি

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ ১৩:০৯:১৮
পাঁচ বছরে বেসরকারিকরণ মাত্র ৪টি

সোহেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : সরকারের দ্বৈত নীতি ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অসহযোগিতার কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বেসরকারিকরণ কার্যক্রম। এ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে সরকার ‘বেসরকারিকরণ আইন ২০০০’ সংশোধন ও কমিশনের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়। অভিযোগ উঠেছে বেসরকারিকরণ নীতির বিপক্ষে মন্ত্রী ও আমলাদের অবস্থানের কারণে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বেসরকারিকরণ কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে মাত্র ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করেছে কমিশন। এ ছাড়া মামলার কারণে ঝুলে আছে ৭টি এবং এগুলোর বাইরে বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ২১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি-ই বন্ধ এবং ২টি চালু ও ৩টি আংশিক চালু রয়েছে।

বিগত মহাজোট সরকারের আমলের সাবেক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই বলেছিলেন, ‘আর কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হবে না।’ সম্প্রতি একই কথা বলেছেন বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের অসহযোগিতার কারণে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন।

দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অসহযোগিতায় বেসরকারিকরণ কমিশনের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো একবার বেসরকারিকরণের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান কমিশনে পাঠায়, আবার ইচ্ছা হলে ফেরত নিয়ে যায়। ফলে বেসরকারিকরণে কমিশন যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না।’

কমিশনের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বেসরকারিকরণের জন্য কমিশনে পাঠানো হয়, তখন পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হয় না কিংবা তথ্য গোপন করা হয়। ফলে সীমিত তথ্য নিয়েই কমিশনকে কাজ করতে হয় এবং এ কারণে প্রায়ই শেষ সময়ে এসে ঝামেলা বাধে। এ ছাড়া জমির পরিমাণ ও প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণ, ইজারা নবায়ন, মামলাজনিত জটিলতা, অপরিশোধিত ঋণের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক নিলাম আহ্বান ইত্যাদি কারণে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। আর বন্ধ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের মূল লক্ষ্য থাকে প্রতিষ্ঠানের জমি ও ভবন। আবার একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও কোনো আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যায়নি- এমন উদাহরণও রয়েছে।

সূত্র মতে, সর্বশেষ সিলেট টেক্সটাইল মিলস ও কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে কমিশন। গত ২৭ জানুয়ারি ছিল এ দুটোর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করা সত্ত্বেও মিল দুটি ক্রয়ে কোনো আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

সূত্র আরও জানায়, বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (শিল্প, পাট ও বস্ত্র, বাণিজ্য) শুধু বন্ধ ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোই কমিশনে পাঠিয়ে থাকে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হলেও কার্যত কোনো পরিবর্তন হয়নি।

কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৯৩ সালে বেসরকারিকরণ বোর্ড গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৭টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে করা হয়েছে ৪টি। এ চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- পার্টিকেল বোর্ড অ্যান্ড ভিনিয়ারিং প্লান্ট (চট্টগ্রাম), সালাতিন সিন্ডিকেট (মতিঝিল, ঢাকা), সাত রং টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (টঙ্গী, গাজীপুর) ও হ্যান্ডলুম সার্ভিস সেন্টার (রায়পুরা, নরসিংদী)।

অন্যদিকে রিট মামলার কারণে ঝুলে আছে ৭টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- পাবনার নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল (১২৯/২০০৯), হাফিজ টেক্সটাইল (২৮২৮/২০১০), কিশোরগঞ্জের ন্যাশনাল সুগার মিল (৩৪৬৫/২০১১), দেশবন্ধু সুগার মিল (৩৯৮৬/ ২০১১ ও ৬০০/২০১২), দোসা এক্সট্রাকশন লিমিটেড (৮৩১৩/২০১৩), লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল (৮৪১০/২০১৩) এবং সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (১৭২৩৩/২০১৩)।

এ সব মামলার বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে রিট পিটিশনগুলো শুনানির জন্য কার্য তালিকায় থাকলেও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কমিশনের আইন শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আর শেষ তিনটি রিট পিটিশন অতি সম্প্রতি দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কমিশন জানায় যে, ১৯৯৩ সালে ‘বেসরকারিকরণ বোর্ড’ গঠিত হওয়ার পর থেকে কমিশন এ পর্যন্ত ৫৯টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। এর মধ্যে ৫৭টি মামলার ক্ষেত্রে কমিশনের অনুকূলে রায় পাওয়া গেছে।

মামলার কারণে ঝুলে থাকা ৭টি ছাড়া বর্তমানে বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়াধীন যে ২১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১১টি, বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৭টি এবং পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আরকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (চট্টগ্রাম, সরকারি শেয়ার ১১.৫০%), এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (যশোর, সরকারি শেয়ার ১৩.৬৩%), ঢাকা লেদার কোম্পানি (সাভার, ঢাকা), বাংলাদেশ ক্যান কোং লিমিটেড (চট্টগ্রাম, সরকারি শেয়ার ৫১%), অ্যারোমা টি লিমিটেড (চট্টগ্রাম, সরকারি শেয়ার ৫১%), ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (নারায়ণগঞ্জ, সরকারি শেয়ার ৩০%), চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড (চট্টগ্রাম), লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স (কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি), কর্ণফুলী টিম্বার এক্সট্রাকশন ইউনিট (কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি), প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সেলস অর্গানাইজেশন (কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি), টাইগার ওয়্যার প্রোডাক্টস লিমিটেড (তেজগাঁও, ঢাকা, সরকারি শেয়ার ১৮.৯৫%), রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (ঘাগড়া, রাঙ্গামাটি), মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (মাগুরা), সিলেট টেক্সটাইল মিলস (ইসলামপুর, সিলেট), কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (কুড়িগ্রাম), ভালিকা উলেন মিলস লিমিটেড (নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম), রাজশাহী রেশম কারখানা (রাজশাহী), ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা (ঠাকুরগাঁও), মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্যবাজার (ডাবরঘাট, সুনামগঞ্জ), সার্ভিসেস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার (বাঞ্ছারামপুর, বি.বাড়িয়া), ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইউনিট (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এইচএসএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর