সাইজ জিরো নয়, তবু হিরোইন!

আদিত্য রুপু, দ্য রিপোর্ট : যুগে যুগে যেমন চিকন-চাকন গড়নের নায়িকাদের আবির্ভাব ঘটেছে বলিউডে, তেমনি ছিল মেদবহুল বা ভারী শরীরের নায়িকাদের অংশগ্রহণও। তবে কাছাকছি সময়ে কারিনা কাপুর তার ‘তাশান’ ছবিতে সাইজ জিরো শরীর বানিয়ে ভক্ত-দর্শকসহ পুরো বলিউডকেই আলোচনামুখর করে তোলেন।

সে সময় কারিনার সাইজ জিরো ফিগার নিয়ে এতবেশি চর্চা হতে থাকে যে, প্রায় সব নায়িকারই তখন না খেয়ে নিজের শরীরকে আকর্ষণীয় করার ফর্মুলা রপ্ত করা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বলিউডে যখন সাইজ জিরো না হলে কাজ পাওয়াটাই মুশকিল, তখন হঠাৎ করেই ‘ডার্টি পিকচার’ এর সিল্ক চরিত্রে মেদবহুল নায়িকা বিদ্যা বালান সুপারহিট হন।

এরপর এ পথ ধরে বলিউডে রাজত্ব শুরু করেন ভারী শরীরের নায়িকারাও। প্রিয়াংকা চোপড়া, ক্যাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাডুকোনের মতো পারফেক্ট ফিগারের সঙ্গে সমানে তাল মিলিয়ে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করছেন সোনাক্ষি সিনহা, পরিনীতি চোপড়া ও হুমা কুরাইশী। দ্য রিপোর্টের পাঠকদের জন্য বলিউডের এমন পঞ্চকন্যাকে উপস্থাপন করা হলো, যারা নিজেদের শারীরিক গড়নে জিরো না হয়েও দিব্যি রাজত্ব করছেন।

বিদ্যা বালান

‘ডার্টি পিকচার’ এর আগেও বিদ্যার শারীরিক গঠন কখনই নায়িকাসুলভ ছিল না। সুন্দর মুখ আর বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়েই ‘পরিণীতা’, ‘ভুল ভুলাইয়া’, ‘ইশকিয়া’, ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’র মতো একের পর এক ছবিতে দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছেন বিদ্যা। কখনও তন্বী হওয়ার কোনো উদ্দীপনা অনুভব করেননি তিনি। বরং সিল্ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য খেয়ে খেয়ে মোটা হয়েছিলেন বিদ্যা। সে সব তথ্য ভক্তরাই ভালো জানেন। এমনকি ‘ডার্টি পিকচার’ এর সিল্ক এর হাত ধরেই বিদ্যার জীবনে এসেছে জাতীয় পুরস্কারও।

সোনাক্ষি সিনহা

অভিনয়ে আসার আগে সোনাক্ষি সিনহার ওজন ছিল ৯০ কেজি। বড়পর্দায় আসার আগে ৩০ কেজি ওজন কমান সোনাক্ষি। কিন্তু ৬০ কেজির সোনাক্ষিও নায়িকাসুলভ শরীরের ধারেকাছে আসেন না। বিদ্যার মতো বুদ্ধিদীপ্ত মুখ বা অভিনয় ক্ষমতা কোনোটাই নেই সোনাক্ষির। তবে ‘দাবাং’ এর ভদ্র ও সাধারণ পরিবারের মেয়ের চরিত্রে বেশ মানিয়ে যান তিনি। বলিউড চলচ্চিত্রে নিজের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনার অংকটা শুরু থেকেই বুঝে নিয়েছেন সোনাক্ষি। ‘রাউডি রাঠোর’, ‌‘দাবাং-টু’, ‘আর...রাজকুমার’ এর মতো ছবিতে ভক্ত-দর্শকের মনে ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পিতা শত্রুঘ্ন সিনহার আদুরে কন্যা সোনাক্ষি এখন বলিউডের ১০০ কোটির নায়িকা।

পরিণীতি চোপড়া

চাচাতো বোন প্রিয়াংকা চোপড়া পারফেক্ট শরীরের অধিকারী হলেও এখনও বাড়তি মেদ ঝরিয়ে উঠতে পারেননি পরিণীতি। ‘ইশাকজাদে’ ছবিতে চটপটে পরিণীতির মধ্যেই গ্ল্যামার আর সুন্দর অভিনয়ের আভাস পান দর্শক। তবে ‘লেডিস ভার্সেস রিকি ভেল’ ছবিতে সেই মেদ অনেকটাই ঝরিয়ে ফেলেন তিনি। তারপরও তন্বী বলা যায় না পরিণীতিকে। কিন্তু নিজের স্টাইলে এরমধ্যেই নজর কেড়েছেন। লেহেঙ্গা থেকে অফশোল্ডার, ককটেল ড্রেস থেকে জিন্স, টি-শার্ট সবকিছুতে সমান স্বাচ্ছন্দ্য পরিণীতি তৈরি করেছেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ ছবিতে দেখা মেলে তার ক্যাজুয়াল শরীরি ছন্দের। নতুন ছবি ‘হাসি তো ফাঁসি’-তে সেটা আরও জমে উঠেছে।

হুমা কুরাইশী

এইতো সেদিনের ঘটনা। খুব বেশিদিন হয়নি বলিউডে পা রেখেছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সেলিম কুরাইশীর মেয়ে হুমা কুরাইশী। ‘লাভ শাভ তে চিকেন খুরানা’, ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম থেকেই হুমা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বলিউডে তিনি দুদিনের অতিথি নন। কিউট লুকিং মুখাবয়বের মধ্যেই রয়েছে একরকমের পরিণত মনের ছাপ। পাশাপাশি তার গভীর চোখের চাহনির কাছে হার মেনেছে মেদবহুল শরীর। ‘এক থি ডায়ান’ ছবিতে আভিজাত্য, ‘দেধ ইশকিয়া’য় লাস্যময়ী ভঙ্গিমায় সমালোচকদের খুশি করেছেন হুমা। ভক্ত-দর্শক, সমালোচক ও পরিচালকদের অনেকেই মনে করেন, হুমার ভেতর লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের বিদ্যা।

সানি লিওন

ইন্দো-কানাডিয়ান এই পর্নস্টারের বলিউডে আত্মপ্রকাশটাই বিশাল ঝড় তুলেছিল। বলিউডের নামজাদা ভাট ক্যাম্পের হাত ধরে এসেছেন এই মোহময়ী সুন্দরী। ‘জিসম টু’-তে তার ভারি ও মেদবহুল পেলব শরীরের প্রতিটি ভাঁজে উত্তেজনা খুঁজেছে আগ্রহী দর্শক। অভিনয়ে কতটা মন কেড়েছেন সানি ‘জিসম টু’ সেই হিসেব না দিতে পারলেও ইউটিউব বলছে, তার আইটেম নাম্বার গেল বছরের সেরা হিট আইটেম সং। এরপর ব্যবসাসফল না হলেও ‘জ্যাকপট’ ছবির ‘কাভি জো বাদল বরসে’ গানে দর্শক সানিকে নিষ্পলক দেখেছে। সানির মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি ‘রাগিনী এমএমএস-টু’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ এই মুহূর্তে বলতে গেলে আকাশ ছুঁয়েছে। শুধু বড়পর্দায় নয়, টিভি কমার্শিয়ালেও মায়াবী মুখের নাদুসনুদুস ঢলঢলে শরীরের সানি লিওন ইন্ডিয়ান দর্শকদের পছন্দের তালিকায় বেশ উপরের দিকেই আছেন।

শুধু এরাই নন, এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে জেরিন খান ও ডেইজি শাহর নামও। কেননা, স্থূল শরীর নিয়ে এই দুজনই তাদের সৌকর্য গুণে এগিয়ে চলেছেন বলিউডে।

(দ্য রিপোর্ট/এআর/এইচএসএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)