thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি 25, ২৮ পৌষ ১৪৩১,  ১১ রজব 1446

অভয়নগরে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী ‘আন্ডারডগ’!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ ২০:২৭:৪৯
অভয়নগরে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী ‘আন্ডারডগ’!

আহসান কবীর, যশোর অফিস : ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় যশোরের একটি মাত্র উপজেলা অভয়নগরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ‘আন্ডার ডগ’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত রবিন অধিকারী ব্যাচা, বিএনপি সমর্থিত নূরুল হক মোল্যা বাঘা, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সমর্থিত বি এম মহিউল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান।

খাতা-কলমে প্রার্থী পাঁচজন হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল মান্নান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় মুখর গোটা জনপদ। প্রার্থীদের মধ্যে রবিন অধিকারী ও নূরুল হক মোল্যার প্রচারণা বেশি। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।

নওয়াপাড়া বাজার, সিঙ্গিয়া, পায়রা, চেঙ্গুটিয়া, তালতলা প্রভৃতি এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নূরুল হক মোল্যা মজবুত অবস্থানে রয়েছেন। তুলনায় অনেক পেছন থেকে শুরু করা আওয়ামী লীগ প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই মুহূর্তে বিএনপির জনসমর্থন সরকারি দল আওয়ামী লীগের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নূরুল হক মোল্যা অভয়নগরের প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান। তিনি সাবেক উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ফলে তার গণযোগাযোগ অনেক বেশি। সেই তুলনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারীর হাইট কম। তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নেই। তিনি বর্তমানে নওয়াপাড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ট্রাক ও ট্যাংকলরি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি।

দলের উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেন, নূরুল হক মোল্যার বিপক্ষে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে আরও বিবেচনার পরিচয় দেওয়ার দরকার ছিল।

গত নির্বাচনে এই উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি।

অভয়নগরে আওয়ামী লীগে একাধিক গ্রুপ বিদ্যমান। বিশেষ করে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাব এবং সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য রণজিতকুমার রায় তাদের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা ধারা সৃষ্টি করেছেন। এর বাইরেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারা-উপধারা রয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ওপরে ওপরে প্রায় সবাই দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও ভেতরে রয়েছে নানা গলদ।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্ব সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে। বিএনপিতে বিভক্তি থাকলেও তা আওয়ামী লীগের মতো এত স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ঐক্যবদ্ধ না থাকতে পারলে সামনের দিনে আরও বড় বিপদে পড়তে পারেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে প্রধান দুই প্রার্থীই তাদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা মনে করেন, যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবে। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নূরুল হক মোল্যা নিজের অবস্থা খুবই ভালো উল্লেখ করে বলেন, শুধু বিএনপি নয়, ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। ফলে জয় তার সুনিশ্চিত।

নির্বাচনী প্রস্তুতি : সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। রিটার্নিং অফিসার ও যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএনএম মঈনুল ইসলাম সোমবার বিকেলে জানান, ইতোমধ্যে অভয়নগরে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। মঙ্গলবার সেগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে ১৮টি মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। সোমবার থেকেই টিমগুলো মাঠে তৎপরতা শুরু করেছে। কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি অভয়নগরে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী বিজিবি ক্যাম্প। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

অভয়নগরে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রেশমা শারমিন বলেন, ‘আমরা সব কেন্দ্রে সমান গুরুত্ব দিচ্ছি।’

আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত অভয়নগর উপজেলায় গ্রামের সংখ্যা ১২৬। মোট ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ৭০। ভোটগ্রহণের জন্য ৬২টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/একে/এমএআর/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর