thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে 24, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১৩ জিলকদ  1445

লোকাল ট্রেনের প্রথম অভিযাত্রায় এগিয়ে বিএনপি

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২০ ০৬:৫৩:২১
লোকাল ট্রেনের প্রথম অভিযাত্রায় এগিয়ে বিএনপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দশম জাতীয় সংসদের ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচনী ট্রেন মিস করলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট উপজেলা নির্বাচনের লোকাল ট্রেনের প্রথম অভিযাত্রায় এগিয়ে রয়েছে।

চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মোট ৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত ৪০ প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৪ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে, ১৯ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর ১২ প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি একটি ও অন্যান্য ১০ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সব মিলিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট থেকে প্রথম ধাপে ৫২ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত ৩২ জন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৪ জন, জামায়াত সমর্থিত ২৩, জাতীয় পার্টি ৩ জন ও অন্যান্যও ১০ জন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত ৩৪ জন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৪ জন, জামায়াত সমর্থিত ১০ জন ও অন্যান্য ১০ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কয়েকটির ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি।

নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের দেড় মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। নবম সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতা বদলের জাতীয় নির্বাচনের অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচনে দলের নির্দেশেই অংশ নেয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমালোচনা আসতে থাকে বিএনপির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে মেইল ট্রেন মিস করে লোকাল ট্রেনে চড়ার সঙ্গে তুলনা করেন।

তবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা যে বিএনপির জন্য ভুল ছিল না তার প্রমাণ আসতে থাকে বুধবার রাত ৮টা থেকে। বিভিন্ন উপজেলার কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল থেকে দেখা যায়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে চলতে থাকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ফলাফলের শুরুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাশাপাশি চললেও উপজেলার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পাল্লা ভারী হতে থাকে। অন্যদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে ‘সমালোচিত’ দল জামায়াতের প্রার্থীদের বিজয়ের খবরও আসতে থাকে।

মোট ৯৭টি উপজেলার ফলাফলের মধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দুটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রেখেই বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের মারুফ বিন হাবিবকে।

নির্বাচনের সার্বিক চিত্র : বুধবার সকাল থেকেই সব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকলেও কিছু কিছু উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত ও বিভিন্ন বিদ্রোহী প্রার্থীরা জালভোট প্রদান, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে স্থানীয় বিএনপি। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মেহেরপুর সদর, বগুড়ার সোনাতলা ও বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ ৯টি উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় তারা।

নির্বাচনের ফলাফল

ঢাকা বিভাগ

ঢাকা : দোহারে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হুদা ও নবাবগঞ্জে বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

জামালপুর : সদরে বিএনপির আমজাদ হোসেন ও সরিষাবাড়ীতে বিএনপির ফরিদ-উল-কবির তালুকদার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নেত্রকোনা : কেন্দুয়ায় বিএনপির দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া ও দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের এমদাদুল হক খান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ : নিকলীতে আওয়ামী লীগের কারার সাইফুল ইসলাম, বাজিতপুরে আওয়ামী লীগের ছরওয়ার আলম, করিমগঞ্জে বিএনপির সাইফুল ইসলাম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জ : শিবালয়ে বিএনপির আলী আকবর, দৌলতপুরে বিএনপির তোজাম্মেল হক, সিঙ্গাইরে বিএনপির আবিদুর রহমান খান, সাটুরিয়ায় বিএনপির বশির উদ্দিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

গাজীপুর : কাপাসিয়ায় বিএনপির খন্দকার আজিজুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।

নরসিংদী : পলাশে আওয়ামী লীগের সৈয়দ জাবেদ হোসেন ও বেলাবোতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আহসান হাবীব বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজবাড়ী : সদরে বিএনপির এমএ খালেক, বালিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ ও পাংশায় আওয়ামী লীগের ফরিদ হাসান নির্বাচিত হয়েছেন।

গোপালগঞ্জ : কাশিয়ানীতে নির্দলীয় প্রার্থী জানে আলম ও মুকসুদপুর উপজেলায় আশরাফুল ইসলাম শিমুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মাদারীপুর : কালকিনিতে আওয়ামী লীগের তৌফিকুজ্জামান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

শরীয়তপুর : ভেদরগঞ্জে বিএনপির আনোয়ার হোসেন, জাজিরায় আওয়ামী লীগের মোবারক আলী শিকদার, ডামুড্যায় আওয়ামী লীগের আলমগীর হোসেন ও গোসাইরহাটে আওয়ামী লীগের সৈয়দ নাসির উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন।

রংপুর বিভাগ

রংপুর : জেলার তারাগঞ্জে নির্দলীয় প্রার্থী আনিসুর রহমান ও মিঠাপুকুরে জামায়াতের গোলাম রব্বানী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পঞ্চগড় : পঞ্চগড় সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের আনোয়ার সাদাত, বোদা উপজেলায় জামায়াতের শফিউল্লাহ, আটোয়ারী উপজেলায় বিএনপির আব্দুর রহমান ও দেবীগঞ্জে আওয়ামী লীগের হাসানাত জামান চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

দিনাজপুর : জেলার কাহারোলে বিএনপির মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও খানসামায় বিএনপির শহীদুজ্জামান শাহ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নীলফামারী : জেলার জলঢাকায় জামায়াতের সৈয়দ আলী, ডিমলায় আওয়ামী লীগের তবিবুল ইসলাম ও সৈয়দপুরে আওয়ামী লীগের জাওয়াদুল হক সরকার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

কুড়িগ্রাম : জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় বিএনপির নজির হোসেন, উলিপুরে বিএনপির হায়দার আলী, ভুরুঙ্গামারী আওয়ামী লীগের মো. নুরুন্নবী চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

গাইবান্ধা : সাঘাটায় জাতীয় পার্টির গোলাম শহীদ ও গোবিন্দগঞ্জে বিএনপির ফারুক কবির আহমেদ নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহী বিভাগ

রাজশাহী : মোহনপুরে বিএনপির আব্দুস সামাদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বগুড়া : দুপচাঁচিয়ায় জামায়াতের আব্দুল গনি, ধুনটে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী তৌহিদুল আলম, শেরপুরে জামায়াতের দবিবুর রহমান, নন্দীগ্রামে জামায়াতের নুরুল ইসলাম মণ্ডল, সোনাতলায় বিএনপির একেএম আহসানুল তৈয়ব ও সারিয়াকান্দিতে বিএনপির মাসুদুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নাচোলে আওয়ামী লীগের আব্দুল কাদের বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নওগাঁ : রানীনগরে বিএনপির আবু ফারুক ও মহাদেবপুরে বিএনপির আবদুস সাত্তার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নাটোর : সিংড়ায় বিএনপির আবুল কালাম আজাদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ : সদরে আওয়ামী লীগের রিয়াজউদ্দিন, রায়গঞ্জে বিএনপির আয়নুল হক, কাজিপুরে আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হক, উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মারুফ বিন হাবিব বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পাবনা : সাঁথিয়ায় জামায়াতের মোখলেসুর রহমান, সুজানগরে আওয়ামী লীগের আবুল কাশেম ও আটঘরিয়ায় জামায়াতের জহুরুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন।

খুলনা বিভাগ

খুলনা : কয়রায় জামায়াতের তমিজ উদ্দিন ও দিঘলিয়ায় আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মেহেরপুর : সদরে বিএনপির মারুফ আহমেদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

কুষ্টিয়া : সদরে বিএনপির জাকির হোসেন ও ভেড়ামাড়ায় বিএনপির তৌহিদুল ইসলাম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ঝিনাইদহ : সদরে বিএনপির আব্দুল আলীম, কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী, কোটচাঁদপুরে জামায়াতের তাজুল ইসলাম ও শৈলকূপায় আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন শিকদার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

যশোর : অভয়নগরে বিএনপির নুরুল হক মোল্লা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মাগুরা : সদরে বিএনপির নাজিমুদ্দিন আহমেদ, শ্রীপুরে বিএনপির বদরুল আলম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

নড়াইল : কালিয়ায় আওয়ামী লীগের খান শামীমুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা : আশাশুনিতে আওয়ামী লীগের এবিএম মোস্তাকিম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বরিশাল বিভাগ

বরিশাল : গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের শাহ আলম, বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের শামসুল আলম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ভোলা : লালমোহনে আওয়ামী লীগের গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সিলেট বিভাগ

সিলেট : বিশ্বনাথে বিএনপির সোহেল আহমেদ চৌধুরী, জকিগঞ্জে বিএনপির ইকবাল আহমেদ, কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের আবদুল বাছির, গোলাপগঞ্জে জামায়াতের নাজমুল ইসলাম, গোয়াইনঘাটে বিএনপির আব্দুল হাকিম ও জৈন্তাপুরে জামায়াতের জয়নাল আবেদিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

সুনামগঞ্জ : ছাতকে আওয়ামী লীগের ওলিউর রহমান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম ও দোয়ারাবাজারে আওয়ামী লীগের ইদ্রিস আলী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

হবিগঞ্জ : বাহুবলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আব্দুল হাই ও মাধবপুরে বিএনপি সমর্থিত এফ এম শাহজাহান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মৌলভীবাজার : কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের আ স ম কামরুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগ

চট্টগ্রাম : হাটহাজারীতে বিএনপির মাহবুবুল হক চৌধুরী ও মিরসরাইয়ে বিএনপির নুরুল আমিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি : সদরে ইউপিডিএফের চঞ্চুমনি চাকমা, মাটিরাঙ্গায় বিএনপির তাজুল ইসলাম, মহালছড়িতে জেএসএসের বিমল কান্তি খীসা, পানছড়িতে ইউপিডিএফের সর্বোত্তম চাকমা, রামগড়ে বিএনপির শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মানিকছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ম্র্যাগ্য মারমা নির্বাচিত হন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এসআর/আইএফ/এনডিএস/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর