ঢাকায় শুরু হল আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

পাভেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : রাজধানী শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ সেজেছে বর্ণিল রঙে। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার পর কাউকে বলে দিতে হবে না এখানে চলছে উৎসব। নীল টি-শার্ট পড়ে ঘুরছে ক্ষুদে চলচ্চিত্র নির্মাতা, দর্শক আর সঙ্গে রয়েছে অভিভাবকেরা।

চিলড্রেনস্ ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘১০ম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব’। ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’-স্লোগান নিয়ে এ উৎসব চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে একই সঙ্গে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুরে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামেও এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে এই উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী পর্বে পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত, পায়রা ও বেলুন ওড়ানো হয়। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন উৎসব উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উৎসব উপদেষ্টা মোরশেদুল ইসলাম, চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, উৎসব পরিচালক মোহাম্মদ আবীর ফেরদৌস প্রমুখ।

ঢাকায় মূল উৎসব কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন। উদ্বোধনী দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকাল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মোট ৪টি করে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

এবারের উৎসবে সারাদেশের মোট ১১টি ভেন্যুতে ৫৪ দেশের দুই শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবের সব প্রদর্শনী অভিভাবকসহ শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত।

কর্মশালা ও সেমিনার

জাতীয় যাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এটি পরিচালনা করবেন বিলি জে.ডি. পোর্টার। ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থাকছে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক কর্মশালা। এটি পরিচালনা করবেন মেজবাহ রহমান সুমন। ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) অমিতাভ রেজার পরিচালনায় থাকছে আরও একটি কর্মশালা।

একই দিনে আবহাওয়া ও পরিবেশ পরিবর্তনের উপর অনুষ্ঠিত হবে একটি সেমিনার। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ (মেটেরিওলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তৌহিদা রশিদ। সেমিনারটির মডারেটর হিসেবে থাকবেন সৈয়দ মুনতাসির রিদওয়ান। এটি সমন্বয় করবেন সাদিয়া তাবাসসুম। ২৮ জানুয়ারি (শনিবার) ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের শিক্ষক শেখ মুখার্জির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হবে কর্মশালা।

উৎসবের আকর্ষণ

উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগ হিসেবে থাকছে বাংলাদেশি শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগ। এই বিভাগে এবার ৬০টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিল, যার মধ্যে নির্বাচিত ২১টি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই ২১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৫টি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও আর্থিক প্রণোদনা। পুরস্কারের জন্য গঠিত ৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের সবাইও শিশু-কিশোর অর্থাৎ ছোটরাই বাছাই করবে ছোটদের নির্মিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো।

প্রতিযোগিতা বিভাগে যাদের ছবি দেখানো হবে তাদের উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে উৎসবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদেরও উৎসব প্রতিনিধি হিসেবে উৎসবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভাঙবে ছবির মেলা

উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হবে ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে। সমাপনীতে সব প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নেওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।

উৎসবের সহযোগি

উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে স্যুভিনির, পোস্টার, টি-শার্ট, ব্যাগ ইত্যাদি। এই উৎসবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে, ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, জার্মান কালচার সেন্টার, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, সময় টেলভিশন। অনলাইন মার্কেটিং পার্টনার হিসেবে আছে হুতুম নামে একটি সংগঠন এবং রেডিও পার্টনার হিসেবে আছে রেডিও নেক্সট।

ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে এবং রংপুরে উৎসব আয়োজন করছে চিলড্রেনস্ ফিল্ম সোসাইটি রাজশাহী এবং চিলড্রেনস্ ফিল্ম সোসাইটি রংপুর শাখা। চট্টগ্রামে আয়োজন করছে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি।

আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে www.cfsbangladesh.org/festival2017 এই ঠিকানায়।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এফএস/জানুয়ারি ২৪, ২০১৭)