thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

অসময়ে হিড়িক পড়লেও অন্তিম মুহূর্তে নেই মিউচ্যুয়াল ফান্ড

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ২২:২০:২৭
অসময়ে হিড়িক পড়লেও অন্তিম মুহূর্তে নেই মিউচ্যুয়াল ফান্ড

ভারসাম্য রক্ষায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড অপরিহার্য হলেও বিগত চার বছরে দেশের পুঁজিবাজারে উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। অসময়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্তির হিড়িক পড়লেও অন্তিম মুহূর্তে উল্টো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯-১০ সালে দেশের শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকাকালীন তুলনামূলক অধিক হারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ভয়াবহ ধসের পর বাজারের ভারসাম্য রক্ষায় সে হারে নতুন ফান্ড তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে ১৮টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৭টিই মিউচ্যুয়াল ফান্ড। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ১৩টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। অথচ এ দুই বছরে পুঁজিবাজারের মূল্যসূচক সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল। আর ওই সময় কোনো ধরনের যাচাই বাছাই না করেই মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ।

অপরদিকে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে বাজারে যখন ধস নামতে থাকে তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তালিকাভুক্তির সংখ্যাও কমতে থাকে। ক্রমাগত দর পতনের মুখে ২০১২ সালে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া ১৪টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৪টি ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আর ২০১৩ সালে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬টির মধ্যে ২টি। অথচ এ সময়ে বাজারের ভারসাম্য রক্ষায় অধিক হারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা জরুরি ছিল বলে জানান অধ্যাপক আবু আহমেদ।

মোট আকারের ৬০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এ কারণে বিশ্বের উন্নত দেশে বাজার মূলধনের ৫০ শতাংশ থাকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দখলে। আর বাংলাদেশে বাজার মূলধনের মাত্র ৩ শতাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। তাই দেশের পুঁজিবাজারে প্রায় সময়ই অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঊর্ধ্বমুখী বাজারে বাছ-বিচার না করে ফান্ড তালিকাভুক্ত করার কারণে ধসপরবর্তী বাজারে এ খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার রেশ এখনও কাটেনি। তালিকাভুক্ত ৪১টির মধ্যে ২৬টির ইউনিট এখনও ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে।

ফান্ডগুলো ওই সময় টাকা উত্তোলন করে নয় ছয় করে এখন লভ্যাংশ দিতে পারছে না বলে জানান আবু আহমেদ। যে কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদমূল্য ও বাজার দর খুবই শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা নিরাপদ এমন ভাবা ঠিক নয় বলে জানান তিনি। তবে বাজারের বর্তমান অবস্থায় শক্তিশালী মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে তিনি।

বর্তমানে ৫-৭ টাকায় লেনদেন হওয়ায় ১০ টাকা দিয়ে কেউ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী। তার মতে, এই নাজুক অবস্থার মধ্যে নতুন করে ফান্ড এলে সাবস্ক্রিপশন (প্রয়োজনীয় আবেদন না পাওয়া) পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শাকিল রিজভী জানান, বাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তবে এর অর্থ এই না যে, ফান্ডগুলো উচ্চদরে শেয়ার ক্রয় করবে। ২০০৯-১০ সালে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো উচ্চদরে শেয়ার ক্রয় করে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে জানান তিনি। যার কারণে নতুন করে কোনো ফান্ড আসছে না। এতে করে বিনিয়োগকারীরাও এ খাতের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান শাকিল রিজভী।

২০০৯-১০ সালে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অনুমোদন বেশি এবং বর্তমানে নেই কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাব দেননি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাজিদ হোসেন। তিনি বলেন, ওই সময় কেন দেওয়া হয়েছে আর এখন কেন কম সে বিষয়ে বিএসইসি ভালো বলতে পারবে।

আবেদন কম হওয়ার কারণে পূর্বের চেয়ে বর্তমানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অনুমোদন কম বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বাজারে আনার দায়িত্ব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির। তারা যদি সঠিক পন্থায় একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বাজারে আনার জন্য আবেদন করে তাহলে অবশ্যই অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন না দেওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/ডব্লিউএন/এসআই/এএল/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর