thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি 25, ২৩ মাঘ ১৪৩১,  ৭ শাবান 1446

মামলা করায় হুমকি

চাচা ও ভাইয়ের হাতে রক্তাক্ত জখম আরিফ

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ ০৭:৩০:৩৭
চাচা ও ভাইয়ের হাতে রক্তাক্ত জখম আরিফ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া গ্রামে আরিফ উদ্দিন (১৫) নামে এক কিশোরের মাথা ফাটিয়ে ও হাতের রগ কেটে দিয়েছে চাচা জালাল আবেদীন ও তিন চাচাতো ভাই কামাল উদ্দিন, রেজাউল হাসান ও দেলোয়ার হোসেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় কিশোর আরিফ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায়।

ওই ঘটনায় চাচা জালাল আবেদীন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা (মামলা নং ২৫/৮১) করেছেন আহত আরিফের বড় ভাই জিয়াউর রহমান। মামলা করায় আরিফের পরিবারকে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি দিয়ে আসছে চাচা জালাল আবেদীন। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে আরিফের পরিবারের।

আরিফের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু আরিফের পরিবারই নয়; রানীদিয়া গ্রামের প্রায় সকল পরিবারই জালাল আবেদীন এবং তার তিন ছেলের হাতে জিম্মি। তাদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীরা জানান, তাদের অত্যাচারে মাথা নত করে অনেকে গ্রাম ছেড়েছেন। আবার তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হওয়া কোনো ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করলে তাকেও জালালের রোষানলে পড়তে হয়েছে।

প্রতিবেশী মাজহার মিয়া (৬০) জানান, কারো সঙ্গে পান থেকে চুন খসলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া জালাল আবেদীনের অন্যতম কাজ। শারীরিক নির্যাতনতো রয়েছে। জালালকে তার এই অপকর্মে সহায়তা করে তার বড় ছেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত অডিট কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন।

এলাকায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সরেজমিন অনুসন্ধানে গ্রামবাসীর কাছে গেলে কেউ ভয়ে জালাল আবেদীনের বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদকের কাছে মুখ খুলতে সাহস করেননি। যারা কথা বলেছেন, তারাও কেউ নাম প্রকাশ করেননি।

জালাল আবেদীন ও তার তিন সন্তানের অত্যাচারে টিকতে না পেরে বাসার মিয়া নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী গ্রাম ছেড়েছেন। এলাকার ইউপি মেম্বার রহিস উদ্দিন ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আহত আরিফের বড় ভাই জিয়াউর রহমান এবং তার প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে স্ত্রী, চার পুত্র, দুই কন্যার মাঝে ৫০ কানিরও অধিক সম্পত্তি রেখে জিয়াউর রহমানের দাদা হাজী তমিজ উদ্দিন মারা যান। বণ্টননামার মাধ্যমে তমিজ উদ্দিনের ওয়ারিশগণের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার কথা থাকলেও জালাল আবেদীন প্রায় ২০ বছর আগেই পৈত্রিক সম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশি নিজের জিম্মায় নিয়ে নেন। এ নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরই মাঝে অবিবাহিত সর্বকনিষ্ঠ ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও দুই কন্যা রেখে মারা যান জালাল আবেদীনের ছোট ভাই আউয়াল উদ্দিন। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জালাল। বড় ভাই জয়নাল আবেদীন, বোন রেহেনা বেগম ও ছোট ভাই আউয়াল উদ্দিনের কন্যাদ্বয়ের ওপর চালাতে থাকেন অন্যায়-অত্যাচার। বাধা দিতে গিয়ে কয়েক দফা মারধরের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন গর্ভধারিণী মা, যার পরিণতিতে পরবর্তী সময়ে মৃত্যু ঘটে ওই বৃদ্ধার।

দেড় বছর আগে বড় ভাই জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর ভাতিজাদের ও ছোট বোন রেহেনার পরিবারের ওপর কুদৃষ্টি পড়ে জালালের। দফায় দফায় চালাতে থাকেন অত্যাচার-নির্যাতন। কয়েক মাস আগে ছোট বোন রেহেনার দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে থাকা বাড়ির কাছে দক্ষিণ দিকের ১৯০১, ১৯০০ দাগের ৩৬ শতক ফসলি জমি জোরপূর্বক দখলের অপচেষ্টা চালান জালাল ও তার তিন ছেলে।

গেল বছর ১৩ ডিসেম্বর রেহেনা বেগম নিজের ওই জমিতে ধান রোপণ করতে গেলে বাধা দেয় জালালের ছেলেরা। জমির ধারেকাছে গেল রেহেনা বেগমকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। ১৬ ডিসেম্বর রেহেনা বেগম বড় ভাই জালালকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে গেলে পিতা-পুত্র চারজন তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় ফুফু রেহেনাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসায় ভাতিজা জিয়াউদ্দিনকেও মারধর করে তারা। আহতাবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রেহেনা বেগম বাদী হয়ে হামলাকারী জালাল আবেদীন এবং তার তিন পুত্র রেজাউল হাসান (৩০), দেলোয়ার হোসেন (২৫) ও কামাল উদ্দিনের (৩৫) বিরুদ্ধে সরাইল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

জিয়াউর রহমান জানান, ‘ওই ঘটনার সূত্র ধরে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় জালাল এবং তার ছেলেরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়ি প্রবেশ করে গালাগালি করতে থাকে। এ সময় আমার ছোট ভাই ১৫ বছর বয়সী আরিফ ঘর থেকে বের হয়ে গালাগালির কারণ জানতে চাইলে জালাল ও তার ছেলেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।’

আরিফকে হত্যার উদ্দেশে তার গলায় ছুরি চালায় তারা। গলায় হাত দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করলে আরিফের হাতের রগ ও একটি আঙ্গুল কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তার মাথায় দা ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঘরের আসবাবপত্র তছনছ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা।

আরিফকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

এ বিষয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলি আরশাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। থানার ডিউটি অফিসার আব্দুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কার পক্ষে নিউজ করতে চান?’

নিরপেক্ষ নিউজ করার কথা জানালে তিনি প্রথমেই আহত আরিফের পরিবার নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তার পরিবার নষ্ট পরিবার।’

অপরদিকে জালাল আবেদীন সম্পর্কে তিনি প্রশংসা করেন।

কোনো আসামি ধরা না পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা আদালতে হয়েছে, থানায় হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে বাদী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘মামলা থানায় হওয়ার পরও তিনি (ডিউটি অফিসার আব্দুল হক) কেন আদালতের কথা বলছেন, ব্যাপারটি বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জালাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। আর আরিফকে আমরা মেরে আহত করিনি, ডাকাতরা তাকে মেরেছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এসকে/এমএআর/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর