thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

৮০ শতাংশ গার্মেন্টসে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৩:৩৭:৫৪
৮০ শতাংশ গার্মেন্টসে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি

৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হয়নি। এ খাতে বড় বড় কারখানাতে মজুরি কাঠামো শতভাগ বাস্তবায়ন করা হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের প্রায় ৮০ শতাংশ কারখানাতে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কারখানায় গ্রেডিং সমস্যা এবং ৩০ শতাংশে ন্যূনতম মজুরিই দেওয়া হয়নি। ফলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ ও শ্রম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনটিই জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

তবে এরই মধ্যে কীভাবে শতভাগ কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন শ্রমিক নেতারা। এ ছাড়া আগামী মার্চে একটি সম্মেলন করে যে সব কারখানায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়নি, তাদের নাম প্রকাশ করবে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার।

‘তিনি জানান, এ পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ বড় গার্মেন্টস কারখানায় ন্যূনতম মজুরি শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ২০ শতাংশ কারখানায় আগে থেকেই গ্রেডিং নির্ধারণ করা ছিল। এ ছাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় শুধুমাত্র ৭ম গ্রেড ঠিক রেখে বাকিদের ক্ষেত্রে মনগড়া গ্রেডিং নির্ধারণ করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এ সব কারখানার শ্রমিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর বাকি ৩০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় নিম্নতম মজুরি একেবারেই বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই ৩০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদেরন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১০০ টাকা।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন জানান, মধ্য বাসাবোর সাকসেস ফ্যাশনস, এলিফ্যান্ট রোডের প্যারেড ইন্টারন্যাশনাল, হাতিরপুলের টিউনিক গার্মেন্টস, আরামবাগের ইমপ্র্র্রেসিভ গার্মেন্টস, কমলাপুরের বেঙ্গল নিটেক্স লিমিটেড, পুরানা পল্টন লেনের দি-ইয়ক গার্মেন্টস লিমিটেডসহ অনেক কারখানাতেই আজ পর্যন্তন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বর মাসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য তিন হাজার টাকা বেসিক নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৩০০ টাকারন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়, যা গত ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা। এরপর প্রায় তিন মাস পার হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ঠিক কতটি কারখানায় এ কাঠামো বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বিজিএমইএর কাছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, ‘সব কারখানায়ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্ত এর সঠিক সংখ্যা কত তা আমাদের জানা নেই। আমরা সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছি। শিগগিরই এ পরিসংখ্যান জানা যাবে বলে আশা করছি।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর মাসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য তিন হাজার টাকা বেসিক নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৩০০ টাকারন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে ৭ম গ্রেডে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়। তিন হাজার টাকা মূল বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া ১২০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ২৫০, যাতায়াত ২০০ এবং খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয় ৭ম গ্রেডের একজন শ্রমিকেরন্যূনতম মজুরিতে। এ ছাড়া প্রতিবছরই ৫ শতাংশ হারে বেসিক বৃদ্ধি পাবে।

সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর, সহকারী উইনডিং মেশিন অপারেটর, সহকারী নিট মেশিন অপারেটর, সহকারী লিঙ্কিং মেশিন অপারেটর, সহকারী মেন্ডিং অপারেটর, সহকারী কাটার, সহকারী মার্কার, সহকারী ড্রইংম্যান অ্যান্ড ওম্যান, পকেট ক্রিজিং মেশিন অপারেটর, লাইন আয়রনম্যান, সহকারী ড্রাই ওয়াশিংম্যান, ওভারলক মেশিন সহকারী, বাটন মেশিন সহকারী, কাঞ্চাই মেশিন সহকারী এবং ফিনিশিং সহকারীসহ মোট ১৪টি পদের ক্ষেত্রে এই ৭ম গ্রেডের মজুরি কাঠামো কার্যকর করার কথা।

গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন পদবি, কাজের ধরন ও প্রকৃতি, চাকরিকাল, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করে ৭টি গ্রেডে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘোষিত ওই মজুরি অনুযায়ী নিম্নতম গ্রেডের (৭ম গ্রেড) বেসিক বেতন ৩০০০ টাকা আর প্রথম গ্রেডে ৮৫০০ টাকা, দ্বিতীয় গ্রেডে ৭০০০ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ৪০৭৫ টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ৩৮০০ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ৩৫৩০ টাকা ও ষষ্ঠ গ্রেডে ৩২৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সকল গ্রেডেই ৪০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, ২৫০ টাকার চিকিৎসা ভাতা, ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা এবং ৬৫০ টাকার খাদ্য ভাতা পাবেন।

এ ছাড়াও শিক্ষানবিসকালীন একজন শ্রমিকের প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে সর্বসাকুল্যে মাসিক ৪ হাজার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০০ টাকা, মূল বেতনের ৪ শতাংশ হারে ৮৮০ টাকা বাড়িভাড়া, ২৫০ টাকার চিকিৎসা ভাতা এবং ২০০ টাকা খাদ্য ভাতা।

এদিকে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিনাজুল ইসলাম রনি জানান, প্রায় ৭০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি গার্মেন্টস কারখানায়ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া কাজ না থাকার অজুহাতে ছোট ছোট প্রায় ৪০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। এ ছাড়া শেয়ার বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলে আরও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।

(দ্য রিপোর্ট/এআই/এইচএসএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর